টানা ছুটিতে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটসমুহে দেশি বিদেশী পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখণ্ডিত সমুদ্র সৈকত। এ সমুদ্র সৈকতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পুরো এটি ( কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত) বালুকাময়, কদাচিৎ কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক-ঝিনুকসহ নানা প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ বিপণি বিতান, অত্যাধুনিক হোটেল-মোটেল-কটেজ, নিত্য নবসাজে সজ্জিত পর্যটন স্পটসমূহে পর্যটকদের বিচরণে কক্সবাজার শহরে পর্যটন মৌসুমে প্রাণচাঞ্চল্য থাকে।
অন্যদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে বলা হয় মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এর রূপ পরিবর্তন করে। শীত-বর্ষা-বসন্ত-গ্রীষ্ম এমন কোনো ঋতু নেই যখন সমুদ্র সৈকতের চেহারা বদলায় না। প্রত্যুষে এক রকম তো মধ্যাহ্নে এর রূপ অন্য রকম। প্রতিদিন অসংখ্য দেশী-বিদেশেী পর্যটক এই সৈকতে আসেন।
শীতের শেষে বসন্তের আগমনে, বুধবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটিসহ বৃহস্পতিবার একদিন বাদে শুক্রবার শনিবার ছুটি নিয়ে অনেকক্ষেত্রে টানা ৪ দিনের টানা ছুটি উপভোগ করার জন্য বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়েছে অনেকেই। তাই ঈদের আমেজে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকের মেলা। দেশি বিদেশি পর্যটকেরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। নানা বয়সীরা পর্যটকেরা বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন। কেউ আবার টায়ার টিউবে গা ভাসানো ও নোনা জলে গোসলে নেমেছেন। প্রিয়জনেরা এসব দৃশ্য মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করছেন। অনেককেই হিমছড়ি ও দরিয়া-নগর সৈকতে প্যারাসাইলিংয়েও সমুদ্র দর্শন করতে দেখা গেছে।
শহরের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে পর্যটকেরা ইনানী, পাটোয়ার-টেক পাথুরে সৈকত ও টেকনাফের দিকে ছুটছে। এ ছাড়া সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া, মহেশখালী, রামুর বৌদ্ধ পল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পাহাড় সমুদ্র ও অরন্য ঘেরা গোয়ালিয়া, রোহিঙ্গা ক্যাম্প দর্শন, উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ইয়াহিয়া গার্ডেন, আকিজের কুমির প্রজনন কেন্দ্র পরিদর্শনসহ বিভিন্ন স্থানে নিভৃতে নিসর্গে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকের ঢল।
আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা, সরকারি বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দা সংস্থা, টুরিস্ট পুলিশ, বিচ কর্মী ও লাইফ গার্ড সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক সজাগ আছেন।
চট্টগ্রামের রাউজান থেকে সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন আরব আমিরাতের প্রবাসী জনৈক আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি কক্সবাজার। মনে করেছিলাম সৈকতে ভীড় কম হবে। কিন্তু কোথাও দম ফেলানোর ফুরসত নেই এখানে। পরিবারের সদস্যরা খুব মজা পাচ্ছে, বাচ্চারা বেশ আনন্দ করছে-এটাই প্রশান্তি। দীর্ঘ সৈকত ছাড়াও এখানকার পাহাড়, বনভুমি, সুবিশাল আকাশ, সমুদ্রের তর্জন-গর্জন দেখার মতো। তাছাড়া হিমছড়ি, ইনানী বীচ, পাটোয়ারটেক, টেকনাফের সাবরাংসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষের ঢল দেখে।আমরা আবেগে আপ্লুত'।
কক্সবাজার হোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম বলেন, 'কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। দীর্ঘ করোনা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ কাটিয়ে মানুষ বাধাহীন ঘুরে বেড়ানোর অবারিত সুযোগ হবার কারণে, এখন কক্সবাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত। প্রতিবছর শীত মৌসুমে লক্ষ লক্ষ পর্যটকের আনাগোনা থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফের সাবরাং টুরিজম জোন। সাপ্তাহিক ছুটি, শীতের ভরা মৌসুম শেষে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামছে। ইতিমধ্যে মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন টুরিজম স্পটে তিল ধারনের জায়গা নেই। হোটেল-মোটেল, কটেজ প্রায় কানায় কানায় পরিপুর্ণ। কক্সবাজারে আইন শৃংখলা অবস্থা সন্তোষজনক। কক্সবাজারকে পরিবেশ বান্ধব, পর্যটক বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে'।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন- ‘এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। কিন্তু কিছুদিন পুর্বেও করোনা ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে পর্যটকের পরিমান কম ছিল। বিশেষকরে হোটেল ব্যবসায়ীসহ পর্যটকের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো খুব কষ্টে কালাতিপাত করত। তবে, ইদানিং পর্যটন ব্যবসায় মোটামুটি সুদিন ফিরে এসেছে। এখন শীতের শেষ, পর্যটনের মৌসুমের শেষের দিকে। তাই শেষ বারের মতো পর্যটকরা পর্যটন স্পটগুলোতে ভীড় জমাচ্ছে।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটিতেই পর্যটকের চাপ একটু বেশি থাকে। এসব বিবেচনায় নিয়ে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে।’
জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, শীতের শুরুতে পর্যটকের ভীড়ে কক্সবাজার সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের ঢল লেগেই থাকে। হোটেল-মোটেলসমুহ অতিরিক্ত পর্যটকের পদভারে মুখরিত থাকে। অনেক সময় পর্যটকের হোটেল, মোটেল, বিভিন্ন কটেজে তিল ধারনের ঠাই থাকেনা। অতিরিক্ত পর্যটকের কারনে মানুষের লিভিং কস্ট বেড়ে যায়। অতিরিক্ত টাকা দেবার পরেও হোটেলে রুম পাওয়া যায়না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ সুযোগে অতিরিক্ত চার্জ করে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। পর্যটকের নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি থাকা উচিত।
হোটেলমালিকেরা বলছেন, গত সোমবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস-রিসোর্টের কোনো কক্ষ খালি নেই।
পর্যটকদের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর আছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের পুলিশ সুপার বলেন, কয়েক লাখ পর্যটকের নিরাপত্তা, সমুদ্রে নিরাপদে গোসলসহ চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে মাঠে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, ডিসেম্বরে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা শেষ হলেও মূলত নির্বাচনের আগে-পরে প্রায় একমাস মানুষ ভ্রমণে বের হতে পারেননি। যে কারণে ২১শে ফেব্রুয়ারির বন্ধে অন্যবারের চেয়ে এবার বাড়তি চাপ পড়েছে। এখানকার চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসে সোয়া লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে হোটেলে কোনো কক্ষ খালি না থাকায় আগাম বুকিং ছাড়া আসা হাজার পর্যটককে সমুদ্র সৈকতে চেয়ারে কিংবা রাস্তার ধারে বসে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে।
নাগরিক ব্যস্ত জীবনে মানুষের প্রাণ যখন ওষ্টাগত, হাজারো কাজের ভীড়ে যখন ব্যতিব্যস্ত মানুষ যখন সামনে চলার গতি পথ হারার উপক্রম হয়, খেই হারাতে বসে যখন অনাগত জীবনের গন্তব্যস্থল-ঠিক তখনই ভ্রমণ পিপাসু মানুষ জীবনের বৈচিত্র্যহীন একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে আসার অব্যক্ত আশা পোষণ করেন। চিন্তা, চেতনা, মনন ও সৃষ্টিশীলতায় প্রচন্ডভাবে ভ্রমণের তাগিদ অনুভব করেন। তখনই তারা অচেনাকে চেনা ও অজানাকে জানার অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বেরিয়ে পড়েন বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, জীবনের সম্মোহনী পাথেয় খোঁজার অজানা আহবানে । ইট পাথরের চারদেয়ালের বন্দী-শহুরে জীবনের ঘিঞ্জিঘেরা পরিবেশ থেকে ন্যূনতম অবকাশ যাপনের চেষ্টায় সচেষ্ট থাকে মানুষের মনোপ্রবৃত্তিতে। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে একটু ভিন্নতা খুঁজেন ভ্রমণ পিপাসুরা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কোটি টাকার আইসসহ রামুতে যুবক আটক
সব বিষয়ে পাস, বাস্তব প্রশিক্ষণে নম্বর না দেয়ায় ফেল ১৩ শিক্ষার্থী
হজ পালনে সউদী গেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি
২২ মে থেকে বাজারে নওগাঁর আম, সবশেষে আম্রপালি
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
৬৪ বছর বয়সে বিমান চালনার স্বপ্ন-পূরণ
টঙ্গীতে প্লাস্টিকের গোডাউনে আগুন
ইসরায়েলি অভিযান, রাফা ছেড়েছেন ৬ লাখ ফিলিস্তিনি
র্যাব-১১ হাতে ২২ বছর পর স্ত্রী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত স্বামী গ্রেপ্তার
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে আরও দেশের প্রতি আহ্বান এরদোয়ানের
বাগেরহাটে সংসদ সদস্যের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন
এই ট্রেনে চড়েই চলে যাবেন বিশ্বের একেবারে শেষ প্রান্তের… কোথায় জানেন
পশ্চিমবঙ্গের মালদহে বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু
হংকং-সিঙ্গাপুরের পর এবার নেপালে নিষিদ্ধ হলো ভারতীয় মশলা
চবি ঝর্ণা দেখতে এসে ঝরে গেল আরও একটি প্রাণ
ইউরোপের নির্বাচনে কড়া শরণার্থী নীতি কতটা প্রভাব ফেলবে?
নামাজের সময় মসজিদে ধরিয়ে দেওয়া হলো আগুন, নিহত ১১
চৌদ্দগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫
ফিলিপাইনের জাহাজের অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে চীনা কোস্টগার্ড
গাজায় জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েনের আহ্বান আরব লিগের