ঢাকা   শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩ মাঘ ১৪৩১
ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে অভিযুক্তদের দৌড় ঝাঁপ

বগুড়ার শিল্পপতি দেলওয়ারা বেগম খুনের মামলায় ১০ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন

Daily Inqilab বগুড়া থেকে বিশেষ সংবাদদাতা

০১ মার্চ ২০২৪, ০৫:২১ পিএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ০৫:২১ পিএম

বগুড়ার নারী শিল্পপতি দেলওয়ারা বেগমকে খুনের অভিযোগে অবশেষে ১০ মাস পর বুধবার কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। গত বছরের ৩ মে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় তার। মরহুমা দেলোয়ারা বেওয়া (৭০) বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার মৃত সেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। দেলওয়ারা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যুর পর কিছু আত্মীয়স্বজন ও তার মেয়ে,পাড়া প্রতিবেশীদের লাশ না দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করে।

 

আর এঘটনায় দেলওয়ারা বেগমের মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম বাদী হয়ে গত বছরের ৮ জুলাই বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০ জনের নামে মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন সস্পত্তি আত্মসাৎ করতে দেলওয়ারা বেগমকে তার এক মেয়ে নাদিরা সুলতানা তার বাসায় আটকে রাখে এ কাজে তার অপর মেয়ে ও জামাইরা সহযোগিতা করে। এই অবস্থায় সেখানে গত ৩ মে দিবাগত রাতে দেলওয়ারা বেগমকে শ্বাসরোধ অথবা বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যার পর পরদিন গোপনে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করা হয় বলে অভিযোগ তুলে মামলা করেন বড় মেয়ে আকিলা সরিফা। মামলায় দেলওয়ারা বেগমের চার মেয়ে, জামাই ও নাতিকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআই বগুড়াকে নির্দেশ দেন। কিন্তু মামলা দায়েরের পর থেকে দেলওয়ারা বেগমের জামাই ফেরদৌস আলম ফটু ও মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ওরফে ধলা মিয়াসহ অন্যান্যরা মিলে লাশ উত্তোলন ঠেকাতে আদালতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ কয়েক মাস পরে আদালত লাশ উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশে গত বুধবার (২৮ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শহরের নামাজগড় গোরস্থান থেকে লাশ মরহুমার লাশ উত্তোলন করা হয়। পরে দেলওয়ারা বেগমের লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র মতে, দেলওয়ারা বেগমের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এমন রিপোর্ট নেওয়ার জন্য চিকিৎসকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ধরনা দিচ্ছে এই মামলার যে অভিযুক্তরা। তাদের টার্গেট যে কোনো মূল্যে স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদ হাসিল করা। অভিযুক্তদের তৎপরতায় মামলার বাদি প্রশ্ন তোলেন এই বলে, যদি তারা খুনের সাথে জড়িতই না থাকে তাহলে দেলওয়ারা বেগমের স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদের জন্য কেন তদবিরে নেমেছে ? এদিকে মামলার বাদি আকিলা সরিফা সুলতানা খানম জানান, কাটনারপাড়ায় এনায়েত আলী খান লেন এলাকার ১ ও ২ নম্বর আসামীর বসতবাড়িতে গত বছরের ৩ মে বুধবার রাত আড়াইটার দিকে তাকে বাড়িতে আটকে রেখে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, আসামীগণ পরষ্পর যোগসাজসে দেলওয়ারা বেগমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে ১নং আসামী ও তার স্ত্রী ২নং আসামী পরষ্পর অন্যান্য আসামীগণের সাথে যোগসাজস করে দেলওয়ারা বেগমকে জিম্মি করে ১ ও ২ আসামির বাড়িতে আটক করে রেখেছিল।
এমতাবস্থায় আসামিগণ পরষ্পর সম্মিলিতভাবে দেলওয়ারা বেগমের নিকট হতে তার সকল জমি-জমা ও সম্পদ লিখে নিতে চাইলে তাতে অস্বীকার করেন এবং জানান যে, তার মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানমের সাথে কথা না বলে তিনি কিছুই করবেননা। এতে আসামীগণ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং ঘটনার দিন সকল আসামীগণ শ্বাসরোধ করে অথবা বিষক্রিয়া ঘটিয়ে দেলোওয়ারা বেগমকে হত্যা করেছে। এরপর আসামীরা গোপনে ও কাউকে কিছু না জানিয়ে অতি দ্রæত অর্থাৎ গত ৪ মে বাদ যোহর দেলোওয়ারা বেগমের লাশ দাফন-কাফন সম্পন্ন করে। আকিলা সরিফা সুলতানা খানম লোকমুখে জেনে সকাল ৯ টার দিকে ঘটনাস্থলে সাক্ষীগণসহ মা দেলোওয়ারা বেগমকে দেখতে গেলে, আসামিরা আকিলা সরিফা সুলতানা খানম ও সাক্ষীগণকে লাশ দেখতে দেয় না। উল্টো আকিলা সরিফা সুলতানা খানম ও সাক্ষীগণকে মৃত্যুর হুমকি প্রদর্শন করে। এতে সুষ্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, আসামীগণ দলবদ্ধভাবে দেলোওয়ারা বেগমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই তাকে হত্যা করেছে। কাউকে তার দাফন-কাফন কাজে না ডেকে অতি গোপনে তার লাশ দাফন করেছে। আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আরো বলেন, আমার মায়ের সম্পদ লুন্ঠনকারীরা খুনের অভিযোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের অপকৌশল গ্রহন করছে। আমার বিশ^াস,অপরাধীরা যতই চেষ্টা করুক,সত্যকে তারা আড়াল করতে পারবে না। আমার মায়ের খুনীদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি ফরেনসিক বিভাগে যারা তদবির করছে,তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক সত্য তথ্য বেরিয়ে আসবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকারিয়া জানান, তদন্তকালে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল মাহমুদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে ফের দাফন করা হয়। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা আদালতে দাখিল করা হবে। তখনই সবকিছু পরিষ্কার হবে।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন
ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা
নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮
পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি
আরও

আরও পড়ুন

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা

অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল

অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল

গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ

গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ

নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮

নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮

পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি

পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি

মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’

মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’

বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়

বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

সাইফ ইস্যুতে কেজরিওয়ালের বিস্ফোরক মন্তব্য, পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতার

সাইফ ইস্যুতে কেজরিওয়ালের বিস্ফোরক মন্তব্য, পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতার

ট্রাম্পের শুল্ক ছাড়াও চীনের অর্থনৈতিক সংকটে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ !

ট্রাম্পের শুল্ক ছাড়াও চীনের অর্থনৈতিক সংকটে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ !

খেজুরের রস খেতে গিয়ে গাড়িচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত

খেজুরের রস খেতে গিয়ে গাড়িচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত

দিয়ালোর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ইউনাইটেডের নাটকীয় জয়

দিয়ালোর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ইউনাইটেডের নাটকীয় জয়

আজারবাইজান-জর্জিয়া সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক

আজারবাইজান-জর্জিয়া সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক

আসাদগেটে সিএনজি-ট্রাক সংঘর্ষ, একজনের মৃত্যু

আসাদগেটে সিএনজি-ট্রাক সংঘর্ষ, একজনের মৃত্যু

মরক্কোতে নৌকা ডুবে ৪৪ পাকিস্তানির মৃত্যু

মরক্কোতে নৌকা ডুবে ৪৪ পাকিস্তানির মৃত্যু

'বন্ধী মুক্তির চুক্তি' চূড়ান্ত জানিয়েছে নেতানিয়াহুর দপ্তর

'বন্ধী মুক্তির চুক্তি' চূড়ান্ত জানিয়েছে নেতানিয়াহুর দপ্তর

সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

উ. কোরিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত ভুল : রব বাউয়ার

উ. কোরিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত ভুল : রব বাউয়ার