নদ-নদীর নাব্যতা সংকট ও লবনাক্ততার সাথে ভয়াবহ ভাঙন
০৩ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
সীমান্তের ওপারে অভিন্ন নদী সমুহের প্রবাহ নিয়ন্ত্রনে নাব্যতা সংকটে নৌ যোগাযোগে বিপর্যয়ের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টির অভাবে সাগরের জোয়ার ক্রমাগত উজানে উঠে আসায় দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েক বছর লবনাক্ততার মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। এমনকি এ অঞ্চলের ছোট বড় ১৩২টি নদ-নদীতে লবানক্ততার মাত্রা বৃদ্ধির সাথে নাব্যতা সংকটে নৌযোগাযোগ ও মৎস্য সম্পদও হুমকির মুখে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে অব্যাহত প্রবাহ নিয়ন্ত্রনে নদ-নদী সমুহে পলি জমে ধারন ক্ষমতা হ্রাসের ফলে বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢলের পানি সাগরে প্রবাহের সময় বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতাও। সুষ্ঠ প্রবাহের অভাবে ইলিশের বিচরনস্থলের পরিবর্তন ঘটছে। ইলিশ ক্রমাগত গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছে।
একাধিক নদী গবেষনা প্রতিষ্ঠানের মতে, সীমান্তের ওপাার হয়ে সারা দেশের নদ-নদী সুমহের যে পানি সাগরে পতিত হয়, তার ৭৮%-ই মেঘনা, তেতুলিয়া ও বলেশ^র সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২টি নদ-নদী বহন করে থাকে। কিন্তু প্রতি বছরই উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রন সহ যথাযথ সংরক্ষন ও উন্নয়নের অভাবে নদ-নদী সমুহ শুষ্ক মৌসুমে ক্রমগত ভড়াট হয়ে ধারন ক্ষমতা হ্রাসের ফলে বর্ষাকালে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের নদ-নদীর ভাঙন রোধে এযাবতকালে সর্বাধিক নদী শাষন রোধ প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। এযাবতকালের সর্বাধিক নদী শাষন প্রকল্প এখনো চলমান।
এমনকি শুধু দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় গত কয়েক বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশী ব্যায়ে ১৫টি নদী শাষন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। যার বেশীরভাগই বাস্তবায়নাধীন। ইতোমধ্যে কয়েকটি ভাঙন রোধ প্রকল্প শেষ হয়েছে বলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এরপরেও অতি জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকার ভাঙন রোধে এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে সমুদ্র সৈকত রক্ষায় একটি প্রকবল্প প্রস্তাবনা সাড়ে ৫শ কোটি থেকে সাড়ে ৭শ কোটি হয়ে সাড়ে ১১শ কোটি টাকায় উন্নীত হবার পরে পুনরায় সাড়ে ৭শ কোটিতে নামিয়ে আনার পরে তা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের ফাইলের জ্যামে আটকে আছে।
ড্রেজিং ও ভাঙন রোধে সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে এখনো দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের আশির্বাদ ১৩২টি নদ-নদী অনেকটাই দুঃখে পরিনত হচ্ছে। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার নৌপথের প্রায় ৫শ কিলোমিটারে নাব্যতা সংকট ভয়াবহ ঝুকি সৃষ্টি করছে। একই কারণে প্রায় ৩ লাখ টন মাছ উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল মৎস্য সম্পদের ভবিষ্যতও ঝুকির মুখে। অথচ সারা দেশের আহরিত ইলিশের প্রায় ৭০ ভাগই উৎপন্ন আহরন হয়ে থাকে দক্ষিণাঞ্চলে ।
অফরদিকে নদী ভাঙন এখনো সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের ভয়াবহ অভিশাপ হয়েই আছে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২টি নদ-নদীর ভয়াবহ ভাঙনে সকাল বেলার আমীরকে সন্ধায় ফকিরে পরিনত করলেও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে নৌ যোগাযোগও বিপর্যস্ত হচ্ছে।
এমনকি সীমান্তের ওপারে শুষ্ক মৌসুমে বিবেকহীন প্রবাহ নিয়ন্ত্রনে নদ-নদী বহুল দক্ষিণাঞ্চলেরও প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার নৌপথে নাব্যতা সংকট ক্রমগত ঝুকি বৃদ্ধি করছে। একই সাথে সাগরের লবানাক্ত পানি ১শ কিলোমিটার উজানে বরিশাল ছাড়িয়ে আরো ৫০ কিলোমিটার উত্তরে চাঁদপুরের ভাটিতে হিজলার মেঘানা পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে।
দক্ষিণাঞ্চলের নদÑনদীর ওপরই দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর সহ সারা দেশের সাথে নৌ যোগাযোগ নির্ভরশীল। এমনকি উদিয়মান পায়রা সমুদ্র বন্দরটি সম্পূর্ণভাবেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী নির্ভর। মেঘনা সহ বড় কয়েকটি নদ-নদীর নাব্যতা সংকটে পায়রা ও মোংলা বন্দর সহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে চাঁদপুর হয়ে ঢাকা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের এবং চট্টগ্রামের নৌ যোগাযোগে ঝুকি বৃদ্ধি করছে। ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার প্রসস্ত ভাটি মেঘনায়ও ডুবো চরে ফেরি সহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বিঘিœত করে। অথচ এ নৌপথটির ওপরই চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সারা দেশেরই নৌ যোগাযোগ নির্ভরশীল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্রের মতে ২০০৬ সালের জানুয়ারীতে বরিশালের কির্তনখোলা নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা ছিল ৬১০-৬৩০ পিপিএম। সেখানে ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে তা ৯১০ পিপিএম-এ পৌছে। ২০১৮ সালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ’১৯ সালে একই নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা আবার ৯শ পিপিএম-এ বৃদ্ধি পায়। ২০২০-এর জানুয়ারীতেও লবনাক্ততার মাত্রা ছিল প্রায় ৯শ পিপিএম-এর কাছে। তবে এছর এখনো লবনাক্ততার মাত্রা বিপদ সীমার নিচেই রয়েছে।
এমনকি ২০২১-এর এপ্রিলের শুরু থেকে বরিশালে কির্তনখেলায় লবনাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করে বলেও একাধীক সূত্র জানিয়েছে। উজানে প্রবাহ নিয়নস্ত্রন সহ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে ২০২১-এর শুষ্ক মৌসুমে সাগরের নোনা পানি গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীতে পৌছে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২১শ পিপিএম লবনাক্ততা সনাক্ত হয়। যা ২০১৬ সালে ছিল ১২শ পিপিএম। আমাদের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ সহ মানব দেহের জন্য সহনীয় লবনাক্ততার মাত্রা ৬শ পিপিএম।
উজানে বিবেকহীন প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনে বিগত ২০২১ ও ২০২২ সালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে নদীর দেশ দক্ষিণাঞ্চলের নদী সমুহও ক্রমাগত তার চরিত্র বদলাচ্ছে। এমনকি গতবছরও মূল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ব্যপক ঘাটতির পরে শরত পেরিয়ে হেমন্তে প্রবল বর্ষনে উঠতি আমন ও আগাম রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সাথে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারন করে। যা কৃষি ও মৎস্য সম্পদ সহ সুস্থ মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলেও দাবী পরিবেশবীদদের। ৩-৩-২০২৪.
===========================
ছবির ক্যাপশন।। ইনকিলাব/ সীমান্তের ওপারে প্রবাহ নিয়ন্ত্রন ও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে নাব্যতা সংকটের সাথে লবনাক্ততা সর্বকালের নাজুক পর্যায়ে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চীনের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ
নাহিদ ইসলাম এর সাথে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ হোসেন ও ইসমাইল হোসেন রাব্বির পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ
ট্রুডোর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব! বুধবারই পতন কানাডার সরকারের?
তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চান ড. ইউনূস
জাজিরায় মাটিচাপা অবস্থায় এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার
চট্রগ্রাম রুটে ফ্লাইট বৃদ্ধি করছে এয়ার এ্যাস্ট্রা
করোনার সময় মাদক পার্টি, নিউইয়র্ক স্বাস্থ্য-উপদেষ্টা বরখাস্ত
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ইছামতি নদী থেকে ভাসমান অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
প্রথমবার অ্যাড মানি করে গ্রাহক পাচ্ছেন ৫০ টাকা ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক
দেড় মাসেও হদিস মেলেনি আ:লীগের দাপিয়ে বেড়ানো নেতাকর্মীদের
গাজীপুরে কারখানাগুলোতে পুরোদমে চলছে উৎপাদন
‘ভারত ও চীনের মধ্যে স্যান্ডউইচ হতে চাই না’, বার্তা শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টের
বাইডেনের চরম ব্যর্থতা ইসরাইলের লেবানন আক্রমণের উৎসাহ
ফরিদপুর কুমার নদের পাড় ধ্বসে ভেঙ্গে পড়ছে বাড়ী ঘর, হুমকির মুখে বিশাল ব্রীজ
বাজারে এসেছে নতুন মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার স্পোর্ট
আইজিপি ময়নুল ইসলামের সঙ্গে ইউএনওডিসি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
আদর্শবান নেতাকে নির্বাচিত করে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে -গণসমাবেশে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম
আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে শান্ত ও হাসানের উন্নতি
স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স-গ্রামীণ ডিজিটাল হেলথকেয়ার সল্যুশন চুক্তি
ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল মারা গেছেন