ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১১ আশ্বিন ১৪৩১
কৃষকরা দিশেহারা!

শেরপুর সীমান্ত অঞ্চলে খাদ্যের সন্ধানে হন্যে হয়ে ক্রমাগত সমতলে নেমে আসছে বন্য হাতির পাল!

Daily Inqilab ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে স্টাফ রিপোর্টার

০৭ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম

শেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে খাদ্যের সন্ধানে ক্রমাগত সমতলে নেমে আসছে বন্য হাতির পাল। শাবকসহ অর্ধশতাধিক হাতির পাল ক্ষুধার তাড়নায় দিশাহারা হয়ে হন্যে হয়ে নেমে আসছে সমতলের লোকালয়ে। কখনো পাহাড়ি টিলায় গাছের ছালবাকল খেয়ে তছনছ করছে বনবিভাগের সৃজিত বাগান। নেমে আসছে লোকালয়ে। এতে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর কৃষকরা উঠতি বোরো ফসল রক্ষায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নালিতাবাড়ী সীমান্তবর্তী গ্রামের ফসলের খেতে হাতি প্রতিরোধে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। নালিতাবাড়ী মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি জঙ্গলে হাতির পালটি খাদ্যের সন্ধানে এক টিলা থেকে অন্য টিলায় চষে বেড়াচ্ছে। ক্ষুধা নিবারণে গাছের ছালবাকল খাচ্ছে। বন বিভাগ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের বকশীগঞ্জ এবং শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে সারা বছর শতাধিক বন্য হাতি কয়েকটি পালে বিভক্ত হয়ে চলাফেরা করে। গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ে অবস্থান করছে। সারা দিন এক টিলা থেকে অন্য টিলায় খাদ্যের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে। প্রায়ই পাহাড়ি টিলা থেকে সমতলের লোকালয়েও এসেছে কয়েকবার। এতে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। হাতি প্রতিরোধে দিন-রাত পাহারা দিচ্ছেন তারা। প্রায় প্রতি রাতেই হাতির পাল পাহাড় থেকে ২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্ত সড়কে চলে আসছে। সন্ধ্যা নামার আগেই হাতির পাল বোরো খেতে নেমে আসার চেষ্টা করে। তখন অসহায় কৃষকরা হইহল্লোর করে হাতির পালকে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ৪০-৪৫টি বন্য হাতি পাল বেঁধে নাকুগাঁও এলাকায় এক টিলা থেকে অন্য টিলায় খাদ্যের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে। ক্ষুধার তাড়নায় বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের গাছের ছালবাকল তুলে খাচ্ছে। কখনোবা টিলার মাটি তুলে শুঁড় দিয়ে নিজের শরীরে ছুড়ে মারছে। সাত-আটটি হাতিশাবক ও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। হাতি দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমে গেছে। মানুষের বিচরণ দেখে একাধিকবার হাতি লোকজননের দিকে তেড়ে আসে। এ সময় লোকজন ও দৌড়ে এদিক-ওদিক ছুটে যাচ্ছে। বর্তমানে হাতির পালটি নাকুগাঁও টিলায় অবস্থান করছে। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ফসল রক্ষায় রাত-দিন পাহারা দিচ্ছেন তারা। নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে হাতি প্রতিরোধে ফসলি জমির কাছে জিআই তার ও জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। হাতির পাল প্রায়শ:ই খাদ্যের সন্ধানে পাহাড়ি টিলা থেকে সমতলে নামছে। ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফসল রক্ষায় ও হাতিকে নিরাপদ রাখতে বন বিভাগের পাশাপাশি ‘এলিফযান্ট রেসপনস টিম’ কাজ করছে। হাতির মাধ্যমে কোনো কৃষকের ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই হাতিকে বিরক্ত না করার জন্য বলা হচ্ছে। নাকুগাঁও গ্রামের কৃষকরা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পালটি দিনে দাওধারা-কাটাবাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। সন্ধ্যা নামার আগেই হাতির পাল বোরো খেতে নেমে আসার চেষ্টা করে। তখন হইহল্লা করে হাতির পালকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। নিয়মিত হাতি থাকায় পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। কৃষকরা জানান, দিনমজুরির কাজ করে তাঁরা টাকা ধারদেনা করে জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। ধানগাছও ভালো হয়েছে। কিন্তু সোমবার থেকে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল খেতের পাশে অবস্থান করছে। এতে তাঁরা ফসল নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন। নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফি-বছর বন্য হাতির পাল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসার কারণে ফসল নষ্ট- পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটছে। কৃষকদের সঙ্গে তিনিও হাতি প্রতিরোধে সেখানে অবস্থান করছেন। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মশাল জ্বালাতে কেরোসিনের ব্যবস্থা করা হলে স্থানীয় কৃষকদের হাতি তাড়াতে সুবিধা হতো।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফুলবাড়ীতে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ৪

ফুলবাড়ীতে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ৪

কৃষিকেই প্রধান অবলম্বন করতে হবে

কৃষিকেই প্রধান অবলম্বন করতে হবে

দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন ড. ইউনূস

বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন ড. ইউনূস

জবিতে ট্রেজারার পদে আলোচনায় বিবিএর তিন শিক্ষক

জবিতে ট্রেজারার পদে আলোচনায় বিবিএর তিন শিক্ষক

এভাবে চলতে দিতে পারি না আমরা : জাতিসংঘ

এভাবে চলতে দিতে পারি না আমরা : জাতিসংঘ

নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন মুফতি রুহুল আমীন উলামা পরিষদ গোপালগঞ্জ

নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন মুফতি রুহুল আমীন উলামা পরিষদ গোপালগঞ্জ

পশ্চিমা নৈতিকতার মৃত্যু ঘটেছে গাজায় : এরদোগান

পশ্চিমা নৈতিকতার মৃত্যু ঘটেছে গাজায় : এরদোগান

ঝাড়খন্ডে বিজেপি জিতলে এনআরসি

ঝাড়খন্ডে বিজেপি জিতলে এনআরসি

তথ্য সংশোধন ও সংযোজনের জন্য বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের খসড়া তালিকা প্রকাশ

তথ্য সংশোধন ও সংযোজনের জন্য বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের খসড়া তালিকা প্রকাশ

ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ কেবল যুক্তরাষ্ট্র থামাতে পারবে : লেবানন

ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ কেবল যুক্তরাষ্ট্র থামাতে পারবে : লেবানন

গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের হুঁশিয়ারি

গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের হুঁশিয়ারি

অভ্যুত্থানবিরোধীদের মৃত্যুদ- কার্যকর করছে মিয়ানমার জান্তা, উদ্বেগ

অভ্যুত্থানবিরোধীদের মৃত্যুদ- কার্যকর করছে মিয়ানমার জান্তা, উদ্বেগ

১৫তম বিসিএস ফোরামের আহবায়ক কমিটি গঠন

১৫তম বিসিএস ফোরামের আহবায়ক কমিটি গঠন

শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ভুঁইয়া পরিবারের

শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ভুঁইয়া পরিবারের

ইসলামে মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ইসলামে মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ওলিদের আল্লাহপ্রেম

ওলিদের আল্লাহপ্রেম

আসন্ন দূর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা জামায়াতের সাথে পূজা কমিটির মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

আসন্ন দূর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা জামায়াতের সাথে পূজা কমিটির মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

বিদ্রোহী সীমালংঘনকারীদের জন্য কেউ কাঁদে না

বিদ্রোহী সীমালংঘনকারীদের জন্য কেউ কাঁদে না

প্রশ্ন: চিরদিন কাহারও কি সমান যায়?

প্রশ্ন: চিরদিন কাহারও কি সমান যায়?