কৃষকরা দিশেহারা!

শেরপুর সীমান্ত অঞ্চলে খাদ্যের সন্ধানে হন্যে হয়ে ক্রমাগত সমতলে নেমে আসছে বন্য হাতির পাল!

Daily Inqilab ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে স্টাফ রিপোর্টার

০৭ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম

শেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে খাদ্যের সন্ধানে ক্রমাগত সমতলে নেমে আসছে বন্য হাতির পাল। শাবকসহ অর্ধশতাধিক হাতির পাল ক্ষুধার তাড়নায় দিশাহারা হয়ে হন্যে হয়ে নেমে আসছে সমতলের লোকালয়ে। কখনো পাহাড়ি টিলায় গাছের ছালবাকল খেয়ে তছনছ করছে বনবিভাগের সৃজিত বাগান। নেমে আসছে লোকালয়ে। এতে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর কৃষকরা উঠতি বোরো ফসল রক্ষায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নালিতাবাড়ী সীমান্তবর্তী গ্রামের ফসলের খেতে হাতি প্রতিরোধে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। নালিতাবাড়ী মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি জঙ্গলে হাতির পালটি খাদ্যের সন্ধানে এক টিলা থেকে অন্য টিলায় চষে বেড়াচ্ছে। ক্ষুধা নিবারণে গাছের ছালবাকল খাচ্ছে। বন বিভাগ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের বকশীগঞ্জ এবং শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে সারা বছর শতাধিক বন্য হাতি কয়েকটি পালে বিভক্ত হয়ে চলাফেরা করে। গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ে অবস্থান করছে। সারা দিন এক টিলা থেকে অন্য টিলায় খাদ্যের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে। প্রায়ই পাহাড়ি টিলা থেকে সমতলের লোকালয়েও এসেছে কয়েকবার। এতে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। হাতি প্রতিরোধে দিন-রাত পাহারা দিচ্ছেন তারা। প্রায় প্রতি রাতেই হাতির পাল পাহাড় থেকে ২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্ত সড়কে চলে আসছে। সন্ধ্যা নামার আগেই হাতির পাল বোরো খেতে নেমে আসার চেষ্টা করে। তখন অসহায় কৃষকরা হইহল্লোর করে হাতির পালকে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ৪০-৪৫টি বন্য হাতি পাল বেঁধে নাকুগাঁও এলাকায় এক টিলা থেকে অন্য টিলায় খাদ্যের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে। ক্ষুধার তাড়নায় বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের গাছের ছালবাকল তুলে খাচ্ছে। কখনোবা টিলার মাটি তুলে শুঁড় দিয়ে নিজের শরীরে ছুড়ে মারছে। সাত-আটটি হাতিশাবক ও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। হাতি দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমে গেছে। মানুষের বিচরণ দেখে একাধিকবার হাতি লোকজননের দিকে তেড়ে আসে। এ সময় লোকজন ও দৌড়ে এদিক-ওদিক ছুটে যাচ্ছে। বর্তমানে হাতির পালটি নাকুগাঁও টিলায় অবস্থান করছে। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ফসল রক্ষায় রাত-দিন পাহারা দিচ্ছেন তারা। নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে হাতি প্রতিরোধে ফসলি জমির কাছে জিআই তার ও জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। হাতির পাল প্রায়শ:ই খাদ্যের সন্ধানে পাহাড়ি টিলা থেকে সমতলে নামছে। ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফসল রক্ষায় ও হাতিকে নিরাপদ রাখতে বন বিভাগের পাশাপাশি ‘এলিফযান্ট রেসপনস টিম’ কাজ করছে। হাতির মাধ্যমে কোনো কৃষকের ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই হাতিকে বিরক্ত না করার জন্য বলা হচ্ছে। নাকুগাঁও গ্রামের কৃষকরা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পালটি দিনে দাওধারা-কাটাবাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। সন্ধ্যা নামার আগেই হাতির পাল বোরো খেতে নেমে আসার চেষ্টা করে। তখন হইহল্লা করে হাতির পালকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। নিয়মিত হাতি থাকায় পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। কৃষকরা জানান, দিনমজুরির কাজ করে তাঁরা টাকা ধারদেনা করে জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। ধানগাছও ভালো হয়েছে। কিন্তু সোমবার থেকে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল খেতের পাশে অবস্থান করছে। এতে তাঁরা ফসল নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন। নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফি-বছর বন্য হাতির পাল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসার কারণে ফসল নষ্ট- পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটছে। কৃষকদের সঙ্গে তিনিও হাতি প্রতিরোধে সেখানে অবস্থান করছেন। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মশাল জ্বালাতে কেরোসিনের ব্যবস্থা করা হলে স্থানীয় কৃষকদের হাতি তাড়াতে সুবিধা হতো।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
আরও

আরও পড়ুন

খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট

খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে