কিশোর গ্যাং-বখাটের অপতৎপড়তায় বরিশাল মহানগরীর পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ বিপন্ন

Daily Inqilab বরিশাল ব্যুরো

৩০ মার্চ ২০২৪, ০১:৫১ পিএম | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪, ০২:১১ পিএম

ইনকিলাব/ বরিশাল মহানগরীর বৈধ অবৈধ সব পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ কিশোর গ্যাং ও বখাটের কারণে বিপন্ন।

বরিশাল মহানগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান সহ প্রায় সবগুলো পার্ক ইতোমধ্যে কিশোর গ্যাং ও বখাটেরদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহ অবাধ বিচরণস্থলে পরিণত হয়েছে। এমনকি রমজান মাস উপলক্ষে এসব গ্যাং-এর অনেকেই বিভিন্ন মসজিদের তারবারীর নামাজের জামাতের সময় আশেপাশে আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছে। ফলে নিকট অতীতের শ্রান্তি বিনোদনের এসব স্থানগুলোতে এখন আর নগরীর নারী-পুরুষ ও শিশুরা একটু কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা সহ বুক ভরে নিশ্বাস গ্রহণে স্বস্তি পাচ্ছেন না। আসন্ন ঈদ উল ফিতরের আগে পরের পরিস্থিতি নিয়ে নিরীহ নগরবাসীর মনে অস্বস্তিও ক্রমে বাড়ছে। আসন্ন ঈদ উল ফিতরের আগে পরে এদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড নগরবাসীর স্বস্তিকে কেড়ে নিতে পারে বলেও শঙ্কিত অনেকেই। গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের আগে পরে বিকট শব্দের পটকা ও বাজী ফাটিয়ে আনন্দ ফুর্তির নামে নগরবাসীর নিরাপত্তাও বিপন্ন করে তুলছে এসব কিশোর গ্যাং। ইতোপূর্বে ঈদের সময় এসব পটকা ও বাজির বিরুদ্ধে পুলিশই তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও গত বছর তাও ছিল খুব সীমিত। ফলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিকট শব্দের গান আর উদ্যম নৃত্য সহ পটকা ফাটানোর ফলে আনন্দের ঈদ অনেকের কাছেই আতংকে পরিণত হয়েছে। আসন্ন ঈদেও তার পুনরাবৃত্তি রোধে এখনই তৎপর হতে পুলিশের প্রতি দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, কীর্তনখোলা নদীর পড়ের মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, আমতলা মোড়ের স্বাধীনতা পার্ক নবগ্রাম রোড-চৌমুহনীতে জাতীয় মহাসড়ক দখল করে সিটি কর্পোরেশনের গড়ে তোলা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহনারা আবদুল্লাহ পার্কগুলো বখাটে ও কিশোর গ্যাং-এর বেপরোয়া কর্মকান্ডে ক্রমশ তার মূল চরিত্র হারাচ্ছে। নিরাপত্তা হীনতায় ইতোমধ্যে এসব পার্ক থেকে বেশীরভাগ নারী ও শিশুরা দুরে সরে যাচ্ছেন।
অথচ এসব কিশোর গ্যাংদের কোন রাজনৈতিক চরিত্র বা আশীর্বাদও নেই। তবে সরকারী দলের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে তাদেরকে বেশীর ভাগকেই দল-ভারী করতে দেখা গেলেও তেমন কোন আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে না। এসব গ্যাং এতটাই বেপরোয়া যে, একটি কিশোর গ্যাং নগরীর শাহানারা আবদুল্লাহ পার্ক ও সংলগ্ন লেকের পূর্ব পাড়ে পুরো দিন পেরিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বিকট শব্দে হিন্দি গান আর উদ্যম নৃত্য করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালনের নামে বেপরোয়া তাণ্ডব চালায়। কিন্তু নগরীর কেন্দ্রস্থলে একটি জাতীয় মহাসড়কের পাশে এ নোংরামি বন্ধে কোন পদক্ষেপ লক্ষণীয় ছিলনা। এখানে দৃষ্টিনন্দন লেকটির তিন পাড়ই পথ খাবারের দোকান ও বখাটেদের দখলে চলে গেলেও নগর ভবন বা সড়ক অধিদপ্তরেরও তেমন কোন পদক্ষেপ নেই। তবে গত তিনমাসে সিটি কর্পোরেশন ও বরিশাল সড়ক বিভাগের তরফ থেকে কয়েকবার মাইকিং করে অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়ার হুশিয়ারি দেয়া হলেও পরে সব চুপচাপ হয়ে গেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে এ পার্কটির পশ্চিম পাড়ের রাস্তাটিও দিনরাত কিশোর গ্যাং-এর দখলে।
কিন্তু কিশোর গ্যাং ও বখাটেদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড ক্রমে বরিশাল মহানগরীর সুস্থ সামাজিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছে। বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহ রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতবৃন্দের মাঝেও এখন পর্যন্ত তেমন কোন হেলদোল লক্ষণীয় নয় বলে অভিযোগ নগরীর বেশীরভাগ সাধারণ নিরীহ মানুষের।
নগরীর ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধু উদ্যানটির পুরো পরিবেশ এখন বিপন্ন কিশোর গ্যাং সহ বখাটেদের সরব উপস্থিতিতে। অথচ বছর কয়েক আগেও নগরবাসী ঐতিহ্যবাহী এ উদ্যানটির জন্য গর্ব অনুভব করতেন। কিছুদিন আগে কিশোর গ্যাং-এর কয়েক সদস্যের হাতে এ ময়দানেই এক ট্রাফিক সার্জেন্টের স্ত্রী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হবার পরে পুলিশ কিছুটা তৎপর হলে একজন গ্রেপ্তার হয়। পরে সবকিছু সাবেক অবস্থায়ই ফিরে গেছে।
নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ও স্বাধীনতা পার্কেরও একই অবস্থা। এরমধ্যে কীর্তনখোলা নদী তীরের মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি পুরোপুরিভাবেই কিশোর গ্যাং-এর নিয়ন্ত্রণে। এ নদী তীরেরই ত্রিশ গোডাউন এলাকার ‘শতায়ু অঙ্গন’টিরও একই হাল। কোথাই নারী ও শিশুরা নির্বিষে এখন পা ফেলতে পারছেন না বলে অভিযোগ সবার মুখে।
তবে মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীলদের মতে, ‘যেকোন বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তারা সব সময়ই সচেতন আছেন। তারপরেও যেকোন অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে পুলিশ সব সময়ই ব্যবস্থা নিচ্ছে’ বলেও দাবী দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাদের। পাশাপাশি এসব পার্কগুলোতে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা সহ সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব টুরিস্ট পুলিশের বলেও জানান হয়েছে। এসব বিষয়ে টুরিস্ট পুলিশের বরিশাল অফিসের অতিরিক্ত এস-পি’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, জনবল সংকটের মধ্যেও তারা সাধ্যমত সব পার্ক বিনোদন কেন্দ্রেগুলোর নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট রয়েছেন। 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নারাইন নৈপুণ্যে লাক্ষ্মৌর বিপক্ষে বড় জয়ে শীর্ষে কলকাতা

নারাইন নৈপুণ্যে লাক্ষ্মৌর বিপক্ষে বড় জয়ে শীর্ষে কলকাতা

লিভারপুলের বিপক্ষে হেরে অস্বস্তিতে টটেনহ্যাম

লিভারপুলের বিপক্ষে হেরে অস্বস্তিতে টটেনহ্যাম

অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি ও প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি

অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি ও প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি

ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী

ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী

লক্ষ্যটা নাগালেই রাখল বাংলাদেশ

লক্ষ্যটা নাগালেই রাখল বাংলাদেশ

ইসলামী শিক্ষা নিয়ে যে কোন দূরভিসন্ধি রুখে দিতে হবে পীর সাহেব চরমোনাই

ইসলামী শিক্ষা নিয়ে যে কোন দূরভিসন্ধি রুখে দিতে হবে পীর সাহেব চরমোনাই

জনসমর্থন না থাকায় বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকছে: কুষ্টিয়ায় হানিফ

জনসমর্থন না থাকায় বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকছে: কুষ্টিয়ায় হানিফ

উখিয়া ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা

উখিয়া ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা

ইসলামবিরোধী হিন্দুত্ববাদী কারিকুলাম প্রত্যাখ্যান করুন

ইসলামবিরোধী হিন্দুত্ববাদী কারিকুলাম প্রত্যাখ্যান করুন

শাহজালালে তিনদিন ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ

শাহজালালে তিনদিন ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ

মুস্তাফিজকে ছাড়াই চেন্নাইয়ের বড় জয়

মুস্তাফিজকে ছাড়াই চেন্নাইয়ের বড় জয়

সুদহার শিগগিরই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে: গভর্নর

সুদহার শিগগিরই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে: গভর্নর

মোদির মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণায় এবার উপজীব্য ভোট জিহাদ, তারপর কী?

মোদির মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণায় এবার উপজীব্য ভোট জিহাদ, তারপর কী?

‘বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪’ পালন করলো এনার্জিপ্যাক

‘বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪’ পালন করলো এনার্জিপ্যাক

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর শরি‘আহ্ সুপারভাইজরি কমিটির ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর শরি‘আহ্ সুপারভাইজরি কমিটির ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত

দুই দিনে সোনার দাম বাড়ল ১৭৮৫ টাকা

দুই দিনে সোনার দাম বাড়ল ১৭৮৫ টাকা

এসআই পদে বয়সসীমা ৩০ করা হোক

এসআই পদে বয়সসীমা ৩০ করা হোক

ইউরোপীয় রাজনীতিতে শরণার্থী প্রসঙ্গ

ইউরোপীয় রাজনীতিতে শরণার্থী প্রসঙ্গ

হিন্দুত্ববাদের কবলে আমাদের পাঠ্যবই

হিন্দুত্ববাদের কবলে আমাদের পাঠ্যবই

রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব কী?

রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব কী?