ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ছে, গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া

সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার

০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে ঘরে ফিরছে মানুষ। সোমবার দুপুরের পর থেকে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও নবীনগর-বাইপাইল সড়কে।
সাভার, আশুলিয়ায় বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি দেওয়ায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুন। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে বাইপাইল থেকে কালিয়াকৈর অভিমুখী সড়ক সরু হয়ে পড়ায় থেমে থেমে সেখানেও তৈরি হচ্ছে যানজট।
ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে ঢাকা জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে প্রশাসনের কর্তাদের। বিভিন্ন স্থানে ড্রোন দিয়ে যানজট পর্যবেক্ষন করতেও দেখা গেছে পুলিশকে।
সোমবার দিনভর সাভার ও আশুলিয়া এলাকার সড়ক মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে সাভারের আশুলিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আজ পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় অনেকেই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ায় যানবাহনের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কোথাও তীব্র যানজট না থাকলেও মহাসড়কে গাড়ির চাপ ছিল চোখেপড়ার মতো।
দুপুরের পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর স্ট্যান্ড, উলাইল স্ট্যান্ড, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, রেডিও কলোনি স্ট্যান্ড ও নবীনগর-বাইপাইল সড়কের বাইপাইল, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ইপিজেড, জিরানি, শ্রীপুর ও আশুলিয়া ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
ঘরমুখো যাত্রীরা জানায়, পোশাক কারখানাসহ বেসরকারি ও সরকারি অনেক অফিসের শেষ কার্য দিবস ছিল আজ। অনেক কারখানা ইতিমধ্যে ছুটি হওয়ায় ঈদযাত্রায় সড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। তবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পরিবহন নিয়ে। বাসের তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। আবার অতিরিক্ত ভাড়ার চাপ নিয়ে গন্তব্যে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
সাভার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় সেলফি পরিবহনের চালক রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আজ যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। গত কয়েক দিন যাত্রী তেমন একটা ছিল না। তবে ঈদ উপলেক্ষে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কথাও স্বীকার করেন এই চালক।
পরিবারের সাথে ঈদ উৎযাপনের জন্য ফরিদপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাভার বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন পোশাক শ্রমিক জোসনা বেগম। তিনি বলেন, আমি বাসের টিকিট কাটতে পারিনি। তাই লোকাল গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু বাস পাচ্ছি না। আবার বাস পেলেও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে সারিবদ্ধ বাসের ভিড়। এখানেও যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ ভাড়া বেশি নিচ্ছে পরিবহনগুলো।
তবে একে ট্রাভেলের সুপারভাইজার মামুনুর রশিদ দাবী করেন, তাদের টিকিট কাউন্টার থেকে যাত্রীরা টিকিট কেটে বাসে উঠেন। সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার বেশি তারা নিচ্ছেন না।
সাভারের একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরি করেন আমিনুল রহমান। তিনি বলেন, দুপুরে অফিস ছুটি হওয়ায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছি। কিন্তু দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি এখনা কোনো বাস পায়নি। পেলেও বাসে দ্বাড়ানোর মতো কোন জায়গা নেই।
এদিকে সন্ধ্যার পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়, নবীনগর-বাইপাইল ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাড়াও। অনেককে বাস না পেয়ে ট্রাকে করেও গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
উত্তরবঙ্গের জেলা গুলোতে যেতে বাইপাইল স্ট্যান্ডে ভিড় করছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে যাত্রীর তুলনায় বাস কম থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পরিবহন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বাইপাইলে অপেক্ষমান সিরাজগঞ্জের এক যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী তার ভাড়া হওয়ার কথা প্রায় ৩০০ টাকা। তবে বেশ কয়েকটি বাস যাচাই করেও এক হাজার টাকার নিচে কোনো বাস পাননি তিনি। শেষমেশ বাড়তি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে পৌছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাভার হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক বাবুল হোসেন বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে এখনো যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোথাও ধীরগতি রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়টিও তাদের নজরদারীতে রয়েছে বলে জানান তিনি।