সিসিকে ভৌতিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ : বিএনপির নিন্দা ও প্রতিবাদ
০৬ মে ২০২৪, ১১:১৪ এএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ১১:১৪ এএম
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নতুন এসেসমেন্টের উপর ভিত্তি করে নগরবাসীর উপর ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স বসিয়েছে কর্র্তপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ নগরবাসী। এদিকে স্থানীয় কোন ইস্যুতে জনস্বার্থে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। গতকাল রোববার প্রদত্ত এক নিন্দা ও প্রতিবাদ পত্রে নিত্য-পণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও চলমান অর্থনৈতিক মন্দার এই কঠিন সময়ে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করা হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানান বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
এক বিবৃতিতে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশ জাতি চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এমন সময়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অস্বাভাবিক হারে ১০০ থেকে ৬০০ ভাগ পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নগরবাসীর জন্য মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’র মতো।
তারা বলেন, যে ব্যক্তি বিগত বছরে (১বছরে) ১৫ হাজার টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়েছেন বর্তমানে তার এই ট্যাক্স ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোয়ার্টার বছরে (৪ মাসে) ২০০ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়া ব্যক্তির এই ট্যাক্স বেড়ে ১২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কোয়ার্টার বছরে (৪ মাসে) ১৫০০ টাকা দেয়া হোল্ডারকে এখন ৩০০০ হাজার টাকার ট্যাক্স ভাউচার ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনে ১০০ ভাগ থেকে শুরু করে গ্রাহক ভেদে ৬০০শত ভাগ পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অমানবিক। নগরবাসীর প্রতি জুলুম। হোল্ডিং ট্যাক্স অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানান তারা।
ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শতকরা ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার ১১ ভাগ পর্যন্ত ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশে এমন নজির আছে বলে কারো জানা নেই। কেউ কেউ বলছেন এই কর্ম করে সিসিক গ্রিনিচ বুকে নিজেদের নাম লিখাতে পারবে। ট্যাক্স বাড়ে শতকরা ৫,১০ কিংবা ৫০ ভাগ আর এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সিসিক বাড়িয়েছে শতকরা ১০ হাজার ভাগ কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে আরো বেশি।
গতকাল রবিবার (৫ মে) সিলেট সিটিকর্পোরেশন প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায় মানুষের দীর্ঘ লাইন। নতুন এসেসমেন্টে হোল্ডিং ট্যাক্সের শতকরা হার নিয়ে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনেকেই ভৌতিক এবং অমানবিক হোল্ডিং ট্যাক্সের এই কার্যক্রম বন্ধ এবং বাতিল করার দাবী জানান। প্রয়োজনে তারা মামলা এবং গণআন্দোলন করারও হুমকি দেন। ২১ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী পিন্টু চন্দ্র (৩৫) একটি সেলুনে কাজ করেন। তিনি বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন ১২০০ টাকা । নতুন এসেসমেন্টে এটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৪ হাজার টাকা অথাৎ শতকরা ৪,৫০০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। তিনি কাঁদ কাঁদ কণ্ঠে বলেন, টিনের ঘরে বসবাস করি আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ বছরে এতো টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো।
২৭ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী সংবাদকর্মী আফরোজ খানের বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স ছিলো ৩০৮৬ টাকা। নতুন এসেসমেন্টে এটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১,৫৬,৬০০টাকা । শতকরা হারে প্রায় ৫০৭৮ ভাগ। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন-এসেসমেন্টের সময় সিসিকের লোকজনের মাথা হয়তো ঠিক ছিলো না। জানিনা তারা কি খেয়ে এমন উদ্ভট কাজ করেছেন।
সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নগর-পিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে নগরবাসীর সাথে সিসিক মতবিনিময় করে শতকরা কত-ভাগ ট্যাক্স বাড়াবে তা নির্ধারণ করতে পারতো। তিনি বলেন, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি, বর্তমান হোল্ডিং ট্যাক্স এর কার্যক্রম স্থগিত করে একটি সার্বজনীন সভা করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্সের হার নির্ধারণ করা হোক।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় তাদের উপর বোঝা না চাপিয়ে নতুন ট্যাক্সদাতা তৈরি করা উচিত। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াবার আগে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস তখন এমন ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স মেনে নেয়া যায় না। এই কার্যক্রম স্থগিত করে সহনীয় হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হউক।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, নতুন এসেসমেন্টে হোল্ডিং ট্যাক্স এর যে হার বসানো হয়েছে এটা রীতিমত নগরবাসীর সাথে জুলুম। নির্বাচনের পূর্বে মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বহুবার বলেছেন, ট্যাক্স না বাড়িয়ে তিনি নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়াবেন,নগরবাসীকে গ্যাস দেবেন। ভৌতিক এই হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করারও তিনি দাবী জানান।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামানের মোবাইলে বার বার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রাত ১১.৪৫ মিনিটে পুনরায় চেষ্টা করলে তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। মানবিক মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান মহোদয় বিষয়টি দেখবেন। তিনি আরো বলেন হোল্ডিং ট্যাক্সের এই কার্যক্রমটি সাবেক মেয়র মহোদয় আরিফুল হক চৌধুরীর সময়ে নেয়া হয়েছিলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিসিকের এক ওয়ার্ড-কাউন্সিলর জানান, সিলেটকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে এবং ফুটপাত থেকে হকার সরিয়ে মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ইতোমধ্যে নগরবাসীর দৃষ্টি কেড়েছেন। তাকে বিতর্কিত করতে সিসিকে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা প্ররোচনা দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স এর এই নাটক মঞ্চস্থ করছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আরেকটি রক্তক্ষয়ী রাত দেখলো গাজাবাসী, এক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত ৯ লাখ মানুষ
জম্মু ও কাশ্মীরে পৃথক হামলায় পর্যটক দম্পতি গুলিবিদ্ধ, নিহত ১
‘জংলি’ লুকে চমকে দিয়েছেন সিয়াম
মোদির ভারতে মুসলিমরা নিজভূমে পরবাসী
আবদুল গাফফার চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
জাতীয় এসএমই পুরস্কার পেলেন ৭ উদ্যোক্তা
ফের ফারিণের সঙ্গে গান করতে চান তাহসান!
অবশেষে জানা গেল ঐশ্বরিয়ার হাত ভাঙার কারণ
যে কারণে এবারও ভোটে লড়লেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
কানের রেড কার্পেটে মুগ্ধতা ছড়ালেন কিয়ারা
চাঁদের মাটিতে ছুটবে রেলগাড়ি! রেলস্টেশন তৈরির কথা ভাবছে নাসা
সালথার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াদুদ মাতুব্বরের প্রার্থিতা বহাল
দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘুমের প্রতিযোগিতা
কী ভাবে প্রেমে বিশ্বাস রেখেছিলেন ক্যাটরিনা
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা কংগ্রেসের ভোটব্যাংক : অমিত শাহ
ইসরায়েলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও, স্লোগানে উত্তাল মার্কিন ক্যাপিটল
সউদীতে সাঁতারের পোশাকে ‘ঐতিহাসিক’ ফ্যাশন শো!
তেঁতুলিয়ায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে এবার নতুন নির্দেশনা বিআরটিএর
লাঠিসোটা হাতে সড়কে অটোরিকশাচালকরা, যান চলাচল বন্ধ