নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক, ক্ষোভ
০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৪০ এএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৪০ এএম
নতুন কারিকুলামে গত বুধবার ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে প্রথম পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল। কেমন হবে প্রশ্নপত্র। কীভাবে উত্তর দিতে হবে।
উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নতুনত্বের উচ্ছ্বাসও ছিল। এত দিন স্কুলশিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে মুখস্থ পড়ার ভিত্তিতে। কোনো কাগজ নিয়ে পরীক্ষার হলে বসা যেত না।
কিন্তু এই পরীক্ষায় তার বই নিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে পেরেছে। তবে চার শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মঙ্গলবার রাতেই ফাঁস হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। পরীক্ষার্থীরা পড়া ফেলে নেমে পড়ে প্রশ্নের খোঁজে। পরীক্ষা শেষে সেই গুঞ্জন সত্যি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু মিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন।
অভিভাবকরা বলছেন, ‘নতুন কারিকুলামের প্রথম পরীক্ষা। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে, যেভাবে পরীক্ষা হয়েছে, এতে সন্তানরা নতুন কিছু শেখার বদলে নকল করা শিখবে। পরীক্ষার আগের দিন রাতেই ফেসবুকে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী সেই প্রশ্ন পড়েই পরীক্ষা দিয়েছে। সন্তানরা পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আমাদের নানা প্রশ্ন করেছে।’
পূর্বের পরীক্ষাপদ্ধতি বাদ সহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনে গত শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশে নতুন যে কারিকুলাম চালু হয়েছে তা নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক চলে আসছে। গেল বুধবার নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর এনিয়ে ক্ষোভ জানাতে থাকেন অভিভাবকরা।
এদিকে শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, নতুন এ পদ্ধতি বোঝার জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার তা সঠিকভাবে দেয়া হয়নি। এর ফলে পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই আছে অন্ধকারের মধ্যে।
অন্যদিকে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে আপত্তি তোলেন অভিভাবকরা।
গত বছর প্রাথমিকভাবে প্রথম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। চলতি বছর থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন পদ্ধতি।
অভিভাবকরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর স্কুল থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলে গুগল ও ইউটিউব দেখে সেগুলো লিখে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানেরা।
নতুন শিক্ষাক্রমের যেসব বিষয় নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মূল্যায়ন পদ্ধতি।
বিশ্বের বেশ কিছু দেশের আদলে সাজানো হয়েছে নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে। এতে পাঠ্যবই, পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন।
এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক শিখনকালীন মূল্যায়ন। অর্থাৎ সারা বছর শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে আগের মতো পরীক্ষা হচ্ছে না।
নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেয়া হয়। পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়।
নতুন শিক্ষাক্রমে নিয়ে অভিভাবকদের একটি অংশ মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন শুরু থেকে। গত বছর মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হয়।
ক্ষোভ জানিয়ে ফেসবুকে মজিবুর রহমান নামে এক অভিভাবক লিখেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা টা এমনভাবে পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে, এখন ময়না তদন্ত করলে মেরুদণ্ডের একটুকরা হাড় ও মিলবে না।ভেবে দেখেন, ভবিষ্যতে দেশ চালাতে হলে অন্যদেশ থেকে লোক আনতে হবে!বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের ছেলেমেয়েরা কিন্তু বিদেশে পড়াশোনা করছে |সবকিছু তে নিরব থাকার ফল, জনগণ পাচ্ছে এবং পাবে আর আফসোস করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সাইফুল ইসলাম সজল লিখেছেন, বর্তমানে এক আজব শিক্ষাব্যবস্থা চালু হচ্ছে যেখানে নীতি নির্ধারকরা জানে না তারা কী প্রজন্ম চাচ্ছে, শিক্ষকরা জানে না তারা কী শিখাবে, শিক্ষার্থীরা জানে না তারা কী শিখবে!!! একেবারে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। আমাদের পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে এদেশের প্রচলিত মূল্যবোধ আর সংস্কৃতি বিরোধী ব্যাপারগুলো জোর করে অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। ভবিষ্যৎ ভয়াবহ!!!!
আব্দুর রহিম রিফাত খান লিখেছেন, কারিকুলামটি সুন্দর। অনেক ভালো। হয়তো ভবিষ্যতে আরো অনেক ভালো হবে যা আমরা বুঝতে পারছি না যেমনটি বুঝতে পারিনি সৃজনশীল এর সময়ে। তবে সমস্যা হচ্ছে এই কারিকুলাম টি নিয়ে শিক্ষকরাই পরিস্কার ধারণা রাখতে পারছেন না। শিক্ষকদের উপযুক্ত করতে অনেক এবং ঘন ঘন ট্রেনিং দিতে হবে। হয়তো শিক্ষকরাও এক সময় এক্সপার্ট হয়ে উঠবেন। তবে এখানে অসুবিধা একটা এবং অনেক বড় অসুবিধা, সেটা হচ্ছে এই এক্সপার্ট হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত যে শিক্ষার্থীরা পাশ করে বের হয়ে যাবে, তারা কি শিখলো? কতটুকু শিখলো?
সাইফুল ইসলাম শামীম লিখেছেন, নতুন এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর স্কুল থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলে গুগল ও ইউটিউব দেখে সেগুলো লিখে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানেরা। এতে করে তারা অল্প বয়সে অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ায় সামাজিক অবক্ষয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড নয় শিক্ষা জাতির পঙ্গুত্ব।
জিএম আল হোসাইন লিখেছেন, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর নতুন কারিকুলামের নামে নতুন শিক্ষা পদ্ধতির ট্রায়াল চালানো হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কোনো সঠিক, কার্যকরী ও টেকসই কোনো নীতিমালা ও পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক করা হয়নি। শুধু নতুন নতুন ভার্সন আসতেছে আর শিক্ষার্থীদের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। যেমনি ভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন কোনো ইনজেকশন বা এন্টিবায়োটিক ঔষধ আবিষ্কারের পর ইন্দুরের বাচ্চার উপরে প্রয়োগ করা হয়। একবারের জন্য চিন্তা করা হচ্ছে না যেসব শিক্ষার্থীরা এই ট্রায়াল ভার্সন এর উপর দিয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে ? এসব ইস্যুতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষক পরিষদ, দেশের কথিত শিক্ষাবিদ কাউকে কোন ধরনের প্রতিবাদ মূলক কার্যকরী কোন বক্তব্য প্রদান করতে দেখা যাচ্ছে না।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফ্রান্সের নির্বাচন: বিস্ময়করভাবে জয় পেতে যাচ্ছে বাম জোট!
কোটা সংস্কার কি আদালতের বাইরে সম্ভব?
ফ্রান্সে ডানপন্থিদের হারিয়ে অভাবনীয় জয়ের পথে বাম জোট
ইসরাইল-গাজা নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে চায় যুক্তরাজ্য
বিএসএফের দুই নারী কনস্টেবল লাপাত্তা
স্কুল শিক্ষার্থীর ছুরিকাঘাতে শিক্ষকের মৃত্যু
সহস্রাধিক বেসামরিককে হত্যা
অভিবাসী বিতাড়নের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল প্রথম দিনেই
মার্কিন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির খরচ বেড়ে ১৬০০০ কোটি ডলার
অ্যামিবাক্রান্ত আরো এক কিশোর কেরালায়
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের হামলা
নিরপেক্ষ ইসির অধীনে নির্বাচন দাবি ইমরানের
জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় ২ সেনাসহ নিহত ৭
ফের পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা
আমি গরিব নই : নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি
জার্মানিতে টেলর সুইফটের নামে শহরের নাম!
দেশের বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম
শিল্পী উত্তম কুমারের একক চিত্র প্রদর্শনী
লিপি মনোয়ারকে লেখিকা সংঘের স্বর্ণপদক প্রদান
যুক্তরাষ্ট্রের দুই অঙ্গরাজ্যে দর্শক মাতালেন সায়েরা রেজা