আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের সেই শিক্ষার্থী ফাহিম জামিনে মুক্ত
০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৭ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কলেজপড়ুয়া আলফি শাহরিয়ার মাহিম (১৬) জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা একটার দিকে শিশু আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে ১০০ টাকার বন্ডে তাকে জামিন দেন।
বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই মাহিমকে কারাগারে পাঠান আদালত। তবে মাহিমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি এতদিন অগোচরেই ছিল।
বুধবার (৩১ জুলাই) একমাত্র ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় মাহিমের বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে লেখেন, গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে। এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।
‘রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না– তখন বাবার কাছে একটা কল আসে। তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু, পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে চারটায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
স্টাটাসে তিনি আরো লেখেন, ‘আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাইদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর; তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেয়া হলে– ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দিবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই।’
সানজানা আখতার বলেছেন, ‘যে ছেলেটা লিগ্যাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু; তাকে তারা কোন হিসাবে এভাবে হ্যারাস (হয়রানি) করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল। আইডি ছিল। সে পুলিশদের ইনস্টিটিউটেরই ছাত্র। এক্ষেত্রে কি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারও কিছুই করার নাই? আমার ভাইকে কোন লজিকে তারা আটকে রেখেছে, দেখাও করতে দিচ্ছে না!’
আলফি শাহরিয়ার মাহিম গত বছর রংপুর নগরীর আশরতপুর চকবাজার এলাকার সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। সে বর্তমানে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’
সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’
এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে। তাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে আটকের ঘটনা নিয়ে তার বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৮ জুলাই যখন থানায় হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিনসের প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া অবস্থায় আটক হয় মাহিমকে। পরে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ১৮ এবং ১৯ তারিখে সংঘাত-–সংঘর্ষ নিয়ে পুরো ফোর্স ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি। মূলত ২০ তারিখ থেকে আমরা যাচাই বাছাই সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করেছি। বিষয়টি আমাদের নলেজে আসা মাত্রই পুলিশ কমিশনার মহোদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যেহেতু মাহিম ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছিল মাত্র। জামিনের মাধ্যমে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অসিম কুমার পাল গ্রেফতার।
জাল স্টাম্প-কোর্ট ফি তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতো চক্রটি
উত্তরায় শিকলে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় ২ কিশোরকে নির্যাতন, আটক ২
শৈলকুপায় চাঞ্চল্যকর ‘ফাইভ মার্ডার’ মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন
চাঁবিপ্রবি’র ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল হলেও দীপু মনির চাপে গোপন রাখা হয়
ঢাকায় মানবাধিকার অফিস খুলতে চায় জাতিসংঘ : সমকামিতা প্রসারের আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে নারী প্রতারক আটক
গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের বেতন-টিউশন ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত
জর্জির ১০০, দ. আফ্রিকার ২০০
আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার
ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে কাশ্মিরে গেরিলা যোদ্ধা নিহত ১
দুদকের চেয়ারম্যান মইনুউদ্দীনসহ দুই কমিশনারের পদত্যাগ
সৎ ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা, সৎ মা নিজেই হত্যার শিকার হয়
ফিলিপাইনের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘ডেথ স্কোয়াড’, দুতার্তের স্বীকারোক্তি
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস র্যাগিং ও মাদক মুক্ত ঘোষনা
রাজবাড়ীতে অস্ত্র মামলায় এক সন্ত্রাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
জর্জি-স্টাবসের শতরানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে দক্ষিণ আফ্রিকা
মহেশপুরে অসুস্থ্য গরুর মাংস বিক্রয়ের অপরাধে কসাই আটক, জেল-জরিমানা
ব্যবসা নয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে হাজীদের সেবা করা
কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত