সাভার আশুলিয়া ধামরাই থানায় আগুন, লুটপাট, নিহত বেড়ে ২৫
০৬ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৮ এএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের দিন ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিদ্ধি হয়ে অন্তত ২৫জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারীরা ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সরকারী ভবন, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাসা অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও বহু আহত ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর রয়েছে।
সোমবারের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩জন মারা যায়। এরমধ্যে মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী (৪০) ও সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর মহল্লার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে রফিকুল (৩০) এর পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে অন্যদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসক জানিয়েছেন।
সাভারের গনস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জন এবং আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে তিন জন, হাবিব ক্লিনিকে তিন জনের মরদেহ আনা হয়। তাদের সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
গনস্বাস্থ্য সামাজিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, কাউকে মৃত আনা হয়েছে, কেউ হাসপাতালে এসে মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন তাদের সবার বুলেট ইনজুরি। তাদের কারও মাথায়, কারও পেটে গুলি লেগেছে। আমাদের এখানে আরও ৩০ জনের মত গুলিবিদ্ধ ভর্তি রয়েছে।
আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের জুনিয়র অফিসার মো. পারভেজ বলেন, আমাদের হাসপাতালে তিন জনকেই মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাদের সবারই মাথায় গুলিবিদ্ধ ছিল।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার সজীব রায় বলেন, ৮ জনের সবার মৃত্যুর কারণ ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট।
এছাড়াও আশুলিয়ার হাবিব ক্লিনিকে তিন জনের মৃতদেহ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার বেলা ১১ টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কয়েক শতাধীক আন্দোলনকারী সড়ক অবরোধ করে। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। পরে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। এর পর্যায়ে মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করে।
দুপুরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, গুলিবিদ্ধ রমজান নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যু অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তিনি বাইপাইলে মাছের আড়ৎতে মাছ বিক্রি করতেন। তবে এখন পর্যন্ত অন্তত আরো ৫ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
দুপুরের পরে সাভার বাসস্ট্যান্ড, রেডিও কলোনী ও আশুলিয়ার বাইপাইলে দফায় দফায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিকালে সাভার আশুলিয়া ও ধামরাই থানার সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশ প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
একপর্যায়ে হামলাকারীরা ধামরাই উপজেলা, ধামরাই থানা, পৌরসভায় ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধামরাই উপজেলা র্নিবাহী অফিসারের বাসভবনে ও গাড়িতে আগুন। ধামরাই থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে ১০টির বেশি যানবাহন পুড়ে যায়। থানা পুলিশের রেশন লুট করা হয়। জীবন বাঁচাতে ধামরাই থানা পুলিশ সিভিল পোষাকে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে বেরিয়ে যাওয়ায় হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও আন্দোলনকারীরা ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে ২০ থেকে ২৫টি মটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার রান্না ঘরে বাহির থেকে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। তবে এর আগে আশুলিয়া থানা পুলিশের সাথে দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে আশুলিয়া থানা পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এছাড়া সাভারের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ অফিসে বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিকেল ৩ টার দিকে সাভার থানা রোড়ে স্লোগান দিতে দিতে কয়েক শ’ আন্দোলনকারীরা প্রবেশ করে। এসময় সাভার প্রেসক্লাব ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করে। পরে তারা সাভার মডেল থানার দিকে এগিয়ে আসে। এরপর সাভার মডেল থানার এক’শ গজ সামনে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় আন্দোলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও গুলি ছোঁড়ে। এতে অন্তন ১০ গুলিবিদ্ধ হয় এবং রফিকুল নামে এক যুবক নিহত হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা থানা ও পোষ্ট অফিসের ভেতরে ঢোকে আগুন দিয়ে লুটপাত ও ভাঙচুর চালায়। তখন অস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। পরে আন্দোলনকারীরা থানার ভিতরে থাকা সকল যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সাভার পৌর কমিউনিটি সেন্টারে থাকা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সদের মালামাল, রেশন লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়ার বাইপাইলের কাছে ফুট অভারব্রিজের দুই জনের লাশ ব্রিজের রেলিংএর সাথে উল্টো করে ঝুলানো দেখতে পেয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া বাইপাইলে একটি পোড়া লেগুনা গাড়িতে তিনটি লাশও রয়েছে যা পুরে কয়লা হয়ে গেছে।
তবেব মৃত্যের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এমনটা ধারনা প্রত্যক্ষদর্শীদের।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ