চাঁবিপ্রবি’র জন্য দীপু মনি গংদের দখলকৃত শত শত একর কৃষিজমি-বসতবাড়ি এখন পতিত ভূমি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২০ পিএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২০ পিএম
ফ্যাসিবাদী সরকারের মন্ত্রী দীপু মনির টাকার মেশিনখ্যাত বালুখেকো সেলিম খানের গনরোষে মৃত্যুর পর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জোরপূর্বক দখলকৃত শত শত একর কৃষিজমি ও বসতবাড়ি এখন পতিত ভুমিতে পরিনত হয়েছে। মেঘনা নদীর পাড়ে আদৌ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্¦বিদ্যালয় হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। আর এই ধোঁয়াশার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অধিগ্রহণের নামে দখলকৃত সকল ভূমি এখন পরিনত হয়েছে পতিত ভূমিতে। দখলকৃত ভূমির প্রকৃত মালিকরা এখন তাদের জমিজমা ফেরতে পেতে চায়। কিন্তু কিভাবে এবং কোন পথে তা ফেরত পাবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদী সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দীপু মনির আর্শিবাদপুষ্ট বালুখেকো সেলিম খান জোরপূর্বক দখল করেছিলো শত শত একর কৃষিজমি ও বসতবাড়ি। দখলবাজ লোকটি নিজ এলাকার কৃষিজমি ও বাড়িঘর দখলের শুরুটা করেছিলো ২০১৮ সালের পূর্বে সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কথা বলে। সেই সময় লক্ষ্মীপুর গ্রামের বেড়ি বাঁধের ভেতরে এবং বাইরে প্রায় ৪০০ একর কৃষি জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। অথচ সরকার সেখানে কোন ধরনের মেডিকেল কলেজ করার চিন্তাও করেনি তখন। মানুষকে ধোঁকায় ফেলে এভাবেই দখলের সূচনা করেন তিনি।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি দখলবাজ সেলিম খান। নদীর তীরবর্তী এলাকায় একের পর এক কৃষি ও অকৃষি জমি দখল করেন আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মানে নামে। সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য লক্ষ্মীপুর গ্রাম ও ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকার বিরাট একটি অংশ জোরপূর্বক নিজের নামে লিখে নিয়ে সরকারের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলেন। সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের নামে সরকারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
সেলিম খানের ব্যাপারে দীপু মনি এতোটাই অন্ধ ছিলেন যে, সেলিম প্রশ্নে তিনি যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি ছিলেন। সেলিমকে দিয়ে মেঘনা নদীতে থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনায় মন্ত্রীত্ব নিয়েও টানাপোড়েন শুরু হয়েছিলো। কিন্তু তিনি ছিলেন অনড়। কারণ সেলিম খান ছিল তার কাছে টাকার উন্নত মেশিন।
২০১৮ সালের পর থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার নাম করে দ্বিতীয়বার দখল করা শুরু করেন বালুখেকো সেলিম খান। ঐ সময়ে মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও জোর জবরদস্তি করে পূনরায় তার নামে ও বেনামে মাত্র ৩০ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা শতাংশ মৌজা রেইট হিসেবে জমি পুনরায় লিখে নেন। কিন্তু সেই জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা শতাংশ হিসেবে মৌজা রেইট দেখিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। জানা যায়, চাঁদপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসকে ম্যানেজ করে জালজালিয়াতির মাধ্যমে লক্ষীপুরের মৌজা রেইট ৩০-৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করে মৌজা রেইট জারি করে সেলিম খান। শুধু তাই নয় ঐ সময় লক্ষীপুর মৌজায় অন্য সবার জন্য জমি ক্রয়-বিক্রয় ও নামজারি নিষিদ্ধ করে রাখেন।
মন্ত্রী দীপু মনির ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু এবং সেলিম খানসহ মন্ত্রির আশির্বাদপুষ্ট ঐ জায়গায় ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিলসহ নানা জালিয়াতি করে ৫ শ’ ৬০ কোটি টাকা দুর্ণীতির মাধ্যমে সরকার থেকে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শেষ পর্যন্ত তা রুখে দেয় তৎকালীন চাঁদপুরের ডিসি অঞ্জনা খান মজলিশ। একপর্যায়ে চাঁদপুর ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রাক্কলন প্রক্রিয়া চুড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে যায়।
সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হলে সীমানা নির্ধারণ করে পতাকা টানানা হয়। সীমানার মধ্যে অনেক বসতবাড়িও পড়ে। সেই সব বসতবাড়ি থেকেও তাৎক্ষনিক মানুষকে উচ্ছেদ করে সেলিম খান। পাশ^বর্তী বিলসহ কয়েকটি স্থানে কিছু মানুষকে বাড়ি নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই বিলের কৃষি জমিগুলোও ছিলো অন্য মানুষের। উচ্ছেদকৃতরা বাধ্য হয়ে বাড়ি নির্মার্ণ করে তারা সেখানে বসবাস শুরু করে। মূলতঃ এখন ঐসব মানুষই পড়েছেন বিপাকে। কারণ একদিকে সেলিম খান জোরপূর্বক তাদের বসতবাড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে, অপরদিকে যে জায়গায় তারা বসবাস করেছেন সেই জায়গাও অন্যজনের। তাই ঐ জমির প্রকৃত মালিকরা এখন চাপ দিচ্ছে তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন হলে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান গণপিটুনিতে মারা যায়। এখন কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে তা তারা বুঝতে পারছেন না। এসব মানুষ কোথায় যাবে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করবে।
এদিকে একটি চক্র ঐ এলাকার ভূমি নিয়ে নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে বলেও এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তবে এর সুষ্ঠ সমাধান প্রশাসনই দিতে পারে বলে তারা মনে করেন। অন্যথায় ঐ এলাকার জমিজমা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র সংঘাত ও সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জয়ের খোঁজে নারী দলের বিশ্বকাপ যাত্রা
গ্রিসের কাছে নৌকা ডুবে চার অভিবাসীর মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্রে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক মোদীর
সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণে তিনদিনের নিষেধাজ্ঞা
যশোরের সাবেক এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে থানায় মামলা রেকর্ড
রাতেও বিমান হামলা, লেবাননে সহস্রাধিক মানুষ হারিয়েছে আশ্রয়
তিন সংস্করণ মিলিয়ে বুমরাহ-ই সেরা: স্মিথ
ড. তাহমিদ আহমেদ গেটস ফাউন্ডেশনের গোলকিপারস চ্যাম্পিয়ন স্বীকৃতি অর্জন
কুলাউড়ায় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
'দেশে ফিরলে সাকিবকে হেনস্তা করা হবে না'
যবিপ্রবিসহ চার বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ
যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারসহ ৩ জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদকের
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকি অভিযান
অধিবেশনে যোগ দেয়ায় ড. ইউনূসকে জাতিসঙ্ঘের শুভেচ্ছা
বিএসএফ জওয়ানকে আটক করেছে বিজিবি
আশুলিয়ায় আজও বন্ধ ৫৫ কারখানা
লুটপাট-দুর্নীতিই নওফেলের ‘নীতি’ : বিশ্ববিদ্যালয় দখল, নিয়োগ বাণিজ্যে সম্পদ বেড়ে দশগুণ
টাকা না ছাপিয়ে, ডলার বিক্রি না করে আর্থিক খাত ঠিক করা হচ্ছে -গোলটেবিল বৈঠকে গভর্নর
পৃথিবীর সব স্বৈরাচারকে হাসিনার মত গণঅভ্যুত্থানে পালাতে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছুতেই ব্যার্থ হতে দেয়া যাবেনা - কক্সবাজারে সালাহউদ্দিন আহমদ
অর্থপাচার নিয়ে আইএমএফ এর সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ