লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর কেন্দ্র থেকে পাঠানো চিঠি নিয়ে তোলপাড় বিএনপিতে
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর আসনে বিএনপির কেন্দ্র থেকে পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দু-উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। চলছে নেট দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড়।
সুত্র জানায়,গত ২২ অক্টোবর বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, "লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রবকে তার দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সহযোগীতা করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে"। ওই চিঠিকে জাসদের নেতাকর্মীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.স.ম আব্দুর রব ধানের শীষের মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে প্রচার করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এতে শুরু হয় দু'পক্ষের তর্ক বির্তক। বিএনপির তৃনমুল নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দেয় ক্ষোভ অসন্তোষ। তারা এ আসনে কোন ভাবেই আ.স.ম আব্দুর রবকে মেনে নিতে চাচ্ছেননা। চিঠি নিয়ে ফেসবুক সহ সোসাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠে। চিঠিকে তৃনমুল বিএনপি নেতাকর্মীরা কোন ভাবেই মেনে নেননি। চিঠি নিয়ে দলটির মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। চলছে পক্ষে বিপক্ষে নানা তর্ক বির্তক।
কমলনগর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান,উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সাবেক দুইবারের টানা এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানকেই চাচ্ছেন। বিগত ১৬ বছর ধরে এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে হামলা মামলা উপেক্ষা করে তাদের দুর্দিনে পাশে থেকে দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছে আশরাফ উদ্দিন নিজান। কিন্তু এখন হঠাৎ আ.স.ম আব্দুর রবের কয়েকজন অনুসারী আগামী নির্বাচনে আসম আব্দুর রব এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছে বলে নেট দুনিয়ায় প্রচারণা চালিয়ে জনমনে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সুত্র আরও জানায়,২০১৮ সালের নির্বাচনে আশরাফ উদ্দিন নিজানকে বাদ দিয়ে এ আসনে বিএনপি জোট থেকে মনোনয়ন দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রবকে। ওই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে আ.স.ম আব্দুর রব নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নানের নিকট হেরে যান। এক সময়ের জাসদ বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ভোট ব্যাংক শূন্যের কোটায়। এঅবস্থায় আ.স.ম আব্দুর রবকে জিততে হলে বিএনপির মত বড় দল ছাড়া কোন উপায় নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে তার বয়স ও সময় বিবেচনা করে আ স ম আব্দুর রব ধানের শীষ নিয়ে লড়লেও জিতে আসাটা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন অনেকেই। কারণ এ আসনে জেএসডির সাংগঠনিক অবস্থা নেই বললেই চলে।
রামগতি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা: জামাল উদ্দীন বলেন, ১৬ বছর রামগতি-কমলনগরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অভিভাবকের দায়িত্ব পালনকারী সাবেক দুইবারের এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম আশ্রাফ উদ্দিন নিজানকেই এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী চাচ্ছেন তৃণমূল। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবী আশরাফ উদ্দিন নিজানের বাহিরে এ আসনে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আসনটি নিশ্চিত হারাতে হবে। কারণ আশরাফ উদ্দিন নিজান একজন জনপ্রিয় নেতা। টানা দুই বারের জনপ্রিয় এমপি ছিলেন তিনি। তৃনমুল নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে থেকে ১৬ টি বছর দলকে ঢেলে সাজিয়েছেন।
কমলনগর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম কাদের ও সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী একই মন্তব্য করে বলেন, ১৬ বছর ধরে নেতাকর্মীদের নামে হামলা মামলার সময় উনি কই ছিলেন? তার দলের নেতাকর্মীরা আ.লীগের সাথে মিলেমিশে বেশ আনন্দে ছিলেন, নির্বাচন আসলে তিনি হঠাৎ বসন্তের কোকিলের মত সামনে আসেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন আশরাফ উদ্দিন নিজান। তার জায়গা জনবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোনয়ন দিলে তৃনমুল কর্মীরা তাকে কখনোই সাপোর্ট করবেনা বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
গত দুইদিন ধরে ওই চিঠি নিয়ে সোসাল মিডিয়ায় চলছে সমালোচনার ঝড়।
জাসদের কর্মী রিয়াজ লিখেছে-লক্ষ্মীপুর-৪ আসন আসম আবদুর রবকে নিশ্চিত করে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অগ্রিম চিঠি।
মোহাম্মদ জিহাদ হোসাইন লিখেছেন-লক্ষ্মীপুর-৪ আসন জাসদের হাতে তুলে দিয়েছে বিএনপি।
পাল্টা জবাব দিয়ে যুবদল নেতা মোস্তফা সারোয়ার লিখেছেন-
মুরুব্বি...এটা নমিনেশন পেপার নয়, এটা ধুমধারাক্কা থেকে বাঁচার প্রেসক্রিপশন,তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে কেউ যাতে বাধা সৃষ্টি না করে সেই জন্যই এই প্রেসরিলিজ। সুতরাং দিবা স্বপ্ন দেখা থেকে বিরত থাকুন।
আমজাদ হোসেন লিখেছেন-লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগরে বিএনপি মনোনীত আসন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। গত ১৭ বছর যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনিই থাকবে ইনশাআল্লাহ।
জসিম উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন-নিজান সাহেব গাছ রোপণ করেছেন,আর ফল খাবে অন্য জন,তা হবেনা।
জহির উদ্দীন নামে একজন লিখেছেন-দিল্লি বহুত দূর। মনে মনে মন কলা না খাওয়াই ভাল। বয়স হয়েছে তাই সম্মানের সাথে অবসরে যাওয়া ভাল। ১৫-১৬ হাজার পুঁজি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়!
আব্দুর রহিম নামে একজন লিখেছেন- সারা রাত পানি সেচ দিবে একজন, আর মাছ ধরবে আরেকজন,তা কি মেনে নেওয়া সম্ভব হবে?
মুরাদ নামে একজন লিখেছেন-১৫-১৬ হাজার ভোট দিয়ে কি এমপি হওয়া যাবে? ধানের শীষ নিয়ে আসম আব্দুর রব ভোট করলে সর্বসাকুল্যে ১৫ ১৬ হাজার পেতে পারে! জয়লাভ করতে হলে আশরাফ উদ্দিন নিজানের বিকল্প নেই।
মো:শরীফ লিখেছেন-কমলনগর-রামগতির মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল আশরাফ উদ্দিন নিজান।
জিল্লুর রহমান লিখেছেন-এইবারও যদি ধানের শীষ নিয়ে আসম আব্দুর রব নির্বাচন করে, তাহলে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সাহাব উদ্দীন সিহাব লিখেছেন-এই চিঠিতে নির্বাচন সংক্রান্ত কোন লেখা নেই।বিএনপি জোটের যে সকল দলগুলো আছে সে সকল দলগুলো যেন নির্বিঘ্নে তাদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য বিএনপির সহযোগিতা চেয়েছে। আসন ভাগাভাগি এগুলো অনেক পরের ব্যাপার। এবং রামগতি কমলনগরে বিএনপি'র আস্থার প্রতীক জনাব এবি এম আশরাফ উদ্দিন মিজান সাহেবকে যদি কোনক্রমে নমিনেশন নাও দেওয়া হয়, তাহলে আমরা উনাকে স্বতন্ত্র এমপি বানাবো ইনশাআল্লাহ। প্রয়োজনে জোর করে দাঁড় করাবো। এবার আর আমরা মানবো না। এটাই হলো লাস্ট কথা।
ইউছুফ নাজিম লিখেছেন-এগুলা গুজব পাঠি আছেনা কিছু। এগুলা তারা করতেছে। রামগতির বিএনপির অভিভাবক এবিএম আশরাফ উদ্দিন উদ্দিন মিজানের বিকল্প কিছুই নাই। প্রিয় নেতা আমরা আপনার সাথে আছি। আপনার কোন ভয় নাই।
বিএনপি নেতা এবিএম আশ্রাফ উদ্দিন নিজানের পক্ষে ফেসবুক সহ সোসাল মিডিয়ার এমন হাজারো পোস্ট আর কমেন্ট লক্ষ্য করা গেছে। তারা কোন ভাবেই আসম আব্দুর রবকে এ আসনে মেনে নিচ্ছেনা। কারণ ২০১৮ সালে আসম আব্দুর রব এ আসনে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নানের নিকট হেরে যান। ওই সময় এআসনে আশরাফ উদ্দিন নিজান মনোনয়ন পেলে তৃতীয়বারের মত জয়লাভ করতো বলে দাবি করেন তার অনুসারীরা।
এব্যাপারে আসম আব্দুর রবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার স্ত্রী তানিয়া রব বলেন, সেটা সময়ে বলে দিবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কোন তর্কে যেতে চাইনা।
বিএনপি সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন,চিঠিতে নির্বাচন সংক্রান্ত কোন শব্দ নেই। শুধুমাত্র নিজ দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে যাতে বাধার সম্মুখীন না হয়, সেজন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকটি দলের নেতাকে চিঠি দিয়েছে। যাদের চিঠি দেওয়া হয়ছে, তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় গেলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়ার মুখে পড়েন। আবার অনেক জায়গা মারধরের ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি তারা বিএনপির হাইকমান্ডকে জানালে বিএনপি চিঠি ইস্যু করেন। যাতে বিএনপির কোন নেতাকর্মী ওইসব দলের কর্মকান্ড পরিচালনায় বাধা কিংবা হয়রানি না করে,সেজন্যই চিটি দিয়েছে। এখানে নির্বাচন নিয়ে কোন চিঠি দেওয়া হয়নি আর হবেও না। কারণঃ ২০১৮ সালেই জোট ভেঙে দেয় বিএনপি। জোটের রাজনীতিতে বিএনপি আর যাবেনা। নির্বাচন যে যার মত করে করবে। অতি-আবেগের কিছু লোক এই চিঠিকে নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নেতৃত্ব ছাড়ছেন নাজমুল
বরগুনায় ৩টি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি
দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ চায় বগুড়ায় ডা: শফিকুর রহমান
নিন্দা, সংযমের আহ্বান: ইরানে ইসরাইলি হামলায় বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোটাররা, জনমত জরিপে এগিয়ে ট্রাম্প
কক্সবাজারে সাগরে গোসল করতে নেমে ভেসেগিয়ে প্রাণ হারাল আরো এক স্থানীয় যুবক
অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখবেননা নোয়াখালীতে মাওলানা মামুনুল হক
সিলেটে খেলাফত মজলিসের সমাবেশ ও গণমিছিল বৈষম্য, ফ্যসিবাদ ও দূর্নীতি নির্মূল করার
মহিপুরে সাত ব্যবসায়ীকে জরিমানা
কেসিসি, কেডিএ'র মধ্যকার বৈরিতা দীর্ঘদিনের- সনাক খুলনার আলোচনায় বক্তারা
চবি পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈমা নীর্মার মৃত্যুতে ছাত্রদলের শোকবার্তা
ভারতের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের সিরিজ জয়ের ইতিহাস
রংপুরে জাতীয় পার্টির বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল
ইসরাইলি হামলার পর ইরানে বিমান চলাচল আবার স্বাভাবিক
চবি মেডিকেল সেন্টার সংস্কারের দাবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে সিরিজ পাকিস্তানের
মুষ্টিযোদ্ধা মো.আলীর সাবেক স্ত্রী প্রতিষ্ঠা করবেন ক্রীড়া সংস্থা!
মতবিনিময় সভায় তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি
রংপুরে হাসনাত-সারজিসের আসার খবরে জাতীয় পার্টির লাঠি মিছিল
যুক্তরাষ্ট্রের এক বাড়িতে আগুন,শিশু সহ নিহত ৪