জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

অনলাইন ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী পাকিস্তানি সুফি গায়ক রাহাত ফতেহ আলী খান। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে রাহাত বলেন, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হওয়া সব বিপ্লবের আমি প্রশংসা করি।

সেটা বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা বিশ্বের যেকোনো দেশেই হোক না কেন। বিপ্লব যদি শান্তির পক্ষে হয়, তাহলে আমরা তার প্রশংসা করি।’ বিখ্যাত এই সঙ্গীতজ্ঞ বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধ বা ধ্বংস চাই না... অতীতে যেসব বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর লক্ষ্য ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা।’ সম্প্রতি ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনারের বাসায় তাকে এক সংবর্ধনা দেয়ার ফাঁকে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।

চলতি মাসের ২১ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত ‘চ্যারিটি কনসার্ট’ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা সফরে আসেন গুণী এই শিল্পী। রাজধানী ঢাকা ত্যাগ করার পূর্বে এ সাক্ষাৎকারে তিনি সংস্কৃতিকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা জাগিয়ে তোলার একটি বৈপ্লবিক উপাদান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এসময় রাহাত বলেন, ‘প্রতিটি দেশের প্রত্যেক মানুষের ভ্রাতৃত্ব ও অন্যের প্রতি ভালোবাসা থাকা উচিত।’ এ প্রসঙ্গে রাহাত বলেন, ‘আমাদের কাওয়ালিও শান্তি ও শৃঙ্খলার বার্তা দেয়।

বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।’ তিনি তার দাদা ফতেহ আলী খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাওয়ালিসহ সুফি ভক্তিমূলক বিভিন্ন গান বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিচ্ছেন। সুফি ঘরানার এই শিল্পী ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যে পরিবারের সদস্যরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আধ্যাতিক গানের মাধ্যমে বিশেষত কাওয়ালির মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার আবেগ-অনুভূতি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নিজেদের নিবেদিত করে আসছে এবং এর জন্য এ পরিবার ‘কাওয়াল পরিবার’ উপাধি অর্জন করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, ‘আমি আহতদের দ্রুত সুস্থতা এবং আল্লাহর দরবারে নিহতদের পরিবারকে এই ক্ষতি সহ্য করার মতো শক্তি কামনা করছি।’ ওস্তাদ রাহাত আলী তার সুমধুর কণ্ঠে হারমোনিয়ামে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন। গজল ও শাস্ত্রীয় গানের জন্যও আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন এবং উর্দু ও হিন্দি চলচ্চিত্রের সংগীতেও কণ্ঠ দিয়েছেন। অভিনেতা শবনম, নাদিম বেগ, রবিন ঘোষ এবং পরে সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার মতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তারকাকে স্মরণ করে রাহাত ফতেহ আলী খান তার দেশ এবং বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধনের উপাদান হয়ে উঠবে বলে আশা করেন। তিনি বলেন, ‘এটি সাংস্কৃতিক ঐক্য, একটি বিপ্লবও... এটি সাংস্কৃতিক শিল্পের জন্যও কল্যাণময়।’

ওস্তাদ রাহাত আলী বাংলা গান শোনেন কি না- জানতে চাইলে ইতিবাচক উত্তরে বলেন, ‘আমি হিন্দুস্তানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হৃষিকেশ মুখার্জির ছবিতে অনেক পুরনো বাংলা গান শুনেছি।’ প্রচলিত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে গ্ল্যামারের পরিবর্তে গানে সরলতা ও উষ্ণতা পছন্দ করা চলচ্চিত্র নির্মাতা মুখার্জির কথা উল্লেখ করে ওস্তাদ রাহাত আলী খান বলেন, ‘আমি সত্যিই বাংলাদেশের এই ধরনের সংগীতের প্রশংসা করি।’ তার পরিবার ও সংগীত শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রাহাত ফতেহ আলী খান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, আমার পরিবার ৬০০ বছর ধরে কাওয়াল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সংগীত শিক্ষা আমাদের পরিবারে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত।’ তিনি বলেন, ‘নুসরাত ফতেহ আলী খান আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন, কিন্তু তার জীবন ছিল মাত্র ৪৮ বছরের। তাই তিনি আমাকে যে সময় দিয়েছেন তা খুবই সংক্ষিপ্ত। এখনও আমি আমার গুরু নুসরাত ফতেহ আলী খানকে মিস করি। আমার বাবা তার ছোট ভাই ছিলেন।

তিনি আমাকে আমার বাবার কাছ থেকে দত্তক নেন।’ বাংলাদেশে তার প্রিয় গায়িকা কে জানতে চাইলে রাহাত ফতেহ আলী খান তাৎক্ষণিকভাবে রুনা লায়লার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি সবসময় তার গান শুনি। তিনি একজন অসাধারণ গায়িকা, একজন বড় মনের কিংবদন্তি শিল্পী।’

বিভাগ : আন্তর্জাতিক