সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ নিয়ে আলোচনা

Daily Inqilab চট্টগ্রাম ব্যুরো

২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১০ পিএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১০ পিএম


ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতম গণহত্যার বিচারকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে দেশে যখন স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার ঠিক তখন অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বিশেষ একটি মহল। কথিত ৮দফা দাবিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ শেষে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা সেই বিশেষ মহলের চক্রান্তের অংশ মনে করছেন সচেতন মহল। তাদের মতে, এ সময়ে এ ধরনের কর্মসূচি সরকারের অগ্রাধিকার কর্মকা- বিঘিœত করার পাশাপাশি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়।
শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে গণসমাবেশ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এই কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ নিয়ে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার পতনের পর মাত্র আড়াই মাসে তিনটি বড় সমাবেশ করেছে সংগঠনটি। সমাবেশে দেওয়া হিন্দু নেতাদের বক্তব্য নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নজিরবিহীন এ রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দেড় দশকের মাফিয়া শাসনের অবসান হয়, তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।
বিগত ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক এক গণঅভ্যূত্থানে হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর তার দোসরেরা দেশব্যাপী বিক্ষুদ্ধ জনতার রোষানলে পড়েন। তাদের বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আর তখনই এই ঘটনাকে ভিন্ন রূপ দিয়ে মাঠে নামে হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠন। আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কিছু হিন্দুর উপর রাজনৈতিক কারণে হামলার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হয়।
ঠিক তখনই বিএনপি, জামায়াতসহ দেশের সব রাজনৈতক দল হিন্দুদের পাশে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররাও হিন্দুদের মন্দির, বাসা-বাড়ি পাহারা দেন। তাতে কম সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর আসে হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সরকার ও প্রশাসনের তরফে শান্তিপূর্র্ণ পূজা উদযাপনে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হিন্দুদের দাবি মেনে পূজার সরকারি ছুটি দুইদিন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও উৎসমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে নানা সহযোগীতা করা হয়। তাতে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবের আমেজে উদযাপিত হয় দুর্গাপূজা।
এতো কিছুর পরও এই সরকারের প্রতি ওই সম্প্রদায়ের কোন সন্তুষ্টি নেই। কথিত ৮ দফা দাবিতে তারা ফের রাস্তায় নেমেছে। সমাবেশ থেকে তারা সরকারের প্রতি নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। লালদীঘির সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তিনি বলেন, ‘সনাতনীদের এ দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ছয় দফা দাবি উঠেছিল, সেই মাঠে বাংলাদেশের সব মঠ-মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছেন সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে, আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। দাবি আদায়ে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ শেষে আমরা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করব।’ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার, সংখ্যালঘু কমিশন সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি আট দফা দাবির মধ্যে অন্যতম।
প্রধান বক্তা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী আরও বলেন, ‘ ‘কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এ দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। কারণ, সহনশীলতা লুপ্ত হচ্ছে। সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না।’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে-আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানব না। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছেন। আর এ দেশে একজন করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন।’ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘এ দেশের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ রয়েছি এখনো, নিঃশেষিত হইনি। এলাকায় এলাকায় একেকটা যুব গোষ্ঠী গড়ে তুলুন। আমাদের দেবালয় আমরা পাহারা দেব।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের এ সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য ও দাবি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। তারা বলছেন, সংখ্যালঘুদরদি দাবিরা শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তখন কয়টা দাবি তিনি মেনেছেন। আর হাসিনার পতনের পরপরই দাবির বহর নিয়ে হাজির হচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের উপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা, তাদের বাড়ি ঘর ও সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান নির্দলীয় সরকারের আমলে তেমন কিছু না ঘটলেও কথায় কথায় রাস্তায় নামছে তারা।
শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে একের পর এক চক্রান্ত চলছে। আনসারের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে নানা দাবি নিয়ে রাজপথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে হাজির হচ্ছেন স্বৈরাচারে দোসরেরা। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করা। দেড় শতাধিক ছাত্র জনতার জীবন দান, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্ববরণের এক রক্ত সাগর পেরিয়ে জনগণের ইচ্ছা পূরণে এ সরকার গঠিত হয়েছে।
খুনিদের বিচারের পাশাপাশি শেখ হাসিনার ধ্বংসস্তুপের উপর নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলছে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম। আর তাতে বেপরোয়া হয়ে গেছে পতিত স্বৈরাচারের দেশি বিদেশি দোসরেরা। তারাই এ সরকারকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত রয়েছে। কথিত দাবি আদায়ের নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এমন কর্মসূচির সাথে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা নিয়েও নানা আলোচনা চলছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন

সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক

সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে

পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে

লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর

কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর

এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা

মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা

সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান

সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান

কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!

কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

আবারও  ভানুয়াতুতে  দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস