কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হলেও, গ্রুপিং বিলুপ্ত হয়নি নেতারা শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরে ব্যস্ত
২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পরেও গ্রুপিং আরো মাথাচাড়া দিয়েছে। অঙ্গ দলসমূহকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরে ব্যস্ত রয়েছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে এই গ্রুপিং ছড়িয়ে পড়ায় বিএনপির ভাবমূর্তি প্রায় শূন্যের কোঠায়। গ্রুপিং এমন পর্যায়ে চলে গেছে গতকাল ২৭ অক্টোবর যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শহরের চারটি স্থানে পালিত হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয় কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তাসভীর উল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা নির্বাচিত হন এবং ১৫১ বিশিষ্ট কমিটি ২ বছরের জন্য গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর কিছুদিন যেতে না যেতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় দলের মধ্যে বিভক্তি। পরবর্তীতে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। গত ২০২০সালের১৯ আগস্ট কুড়িগ্রাম শহরের ভেলাকোপা এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণে কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সামনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সহ ১০ জন মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনায় কেন্দ্র থেকে সাইফুর রহমান গ্রুপের সাইফুর রহমানকে ও তাসভীর গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদকে শোকজ করা হয়। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা ও যুগ্ম সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদকে এক মাসের জন্য দলের সকল কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় বিএনপি। এতেও গ্রুপিং মীমাংসিত হয়নি। পরবর্তীতে গ্রুপিং আরো তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে দুটি পার্টি অফিসের জন্ম হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা শহরের পোস্ট অফিস পাড়া থেকে এবং সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম আমিন মোক্তার পাড়াস্থ অফিস থেকে বিএনপির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।দুই গ্রুপের গ্রুপিং ছড়িয়ে পড়েছে জেলা পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়েও। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সকল উপজেলা ও পৌর শাখা সহ অঙ্গদল সমূহে দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে । কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির গ্রুপিং নিরসনের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গত ২০২১ সালের ১ফেব্রুয়ারী দায়িত্ব প্রদান করেন।তিনি ২০২১ সালের ১২ মার্চ দুই গ্রুপের ৭জন করে মোট ১৪নেতার সাথে ঢাকায় বৈঠক করে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে রিপোর্ট জমা দেন। ঐ বৈঠকের সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ঐ রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। এভাবে দু'বছরের জেলা বিএনপির কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে ৯ বছর পার করে।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বাদেও সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে আরো একটি গ্রুপের জন্ম হয় বর্তমানে তিনটি গ্রুপেই সক্রিয়।
গত ৬ অক্টোবর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাসভীর গ্রুপ ও রানা গ্রুপ মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয় এতে কমপক্ষে ১০ জন মারাত্মক আহত হয়। বিষয়টি কেন্দ্র আমলে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৬ অক্টোবর রাতে জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পরও গ্রুপিং থেমে থাকেনি বরঞ্চ নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করার জন্য গ্রুপিং আরো বেড়েছে।
গতকাল ২৭ অক্টোবর যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ৪টি স্থানে ৪ গ্রুপ পালিত করার মাধ্যমে গ্রুপিং আরও স্পষ্ট হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি তারিক নাজমুল রোকন বলেন, মূলত গ্রুপের নেতৃত্ব দানকারী নেতারা কেউই বিএনপিকে ভালোবাসেন না। নিজের আখের গোছাতে তারা মরিয়া উঠেছে। এজন্য টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্ম করে দ্রুত ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। গত ১৫ বছরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তি দাবিতে ১০০ লোকের সমাবেশ না হলেও এখন তারেক রহমানের জন্য মায়া কান্না করে হাজার হাজার লোক দিয়ে তার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করছে। এটিও জনগণ ভালোভাবে বোঝে। এছাড়া দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তাসভীর উল ইসলাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল পরে অবশ্য তাকে দলে নেয়া হয়। বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা, সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ,সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক সহ অনেকে দলছুট হওয়ায় বিএনপির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই। তাছাড়া গত ২০০১থেকে ২০০৬ বিএনপি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় অনেক নেতা টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেন।
আবারো বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে এই আশা নিয়ে তারা নিজেদের দল ভারী করছেন। তার মতে, কেন্দ্রীয় বিএনপি জেলা বিএনপির নেতৃত্বে যাদেরকে দিবেন তারা যেন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হয়।
রাজশাহী নিউ ডিগ্রী কলেজ সংসদের সাবেক জিএস ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কারাবরণকারী নেতা আনিসুর রহমান ফিরোজ বলেন, জেলা কমিটি বিলুপ্ত হলেও গ্রুপিং যায়নি। নেতৃত্ব পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন অঙ্গ দল এবং উপজেলা কমিটির মাধ্যমে তাদের কর্তৃত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। এরকম চলতে থাকলে বিএনপি ক্ষয়িষ্ণু দলে পরিণত হবে। আমরা যারা পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে চাই তাদের জন্য রাজনীতি করা খুবই দুষ্কর হবে। তারও একই দাবি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ দিয়ে জেলা বিএনপি গঠন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানকে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির ৯ বছর মেয়াদকালের সালতামামি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৪ঠা নভেম্বরের কাউন্সিলকে যে কারণে আমি বর্জন করেছি সেটি প্রতিফলিত হয়েছে সমগ্র জেলাময়। জেলা কমিটি থেকে ওয়ার্ড শাখা সহ সর্বত্রই ৩/৪টি করে গ্রুপের ছড়াছড়ি। বিএনপির আদর্শ পরিপন্থী ও সাংগঠনিক রীতিনীতি ভঙ্গের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়েছে এই ৯ বছরে। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা ও অপরাপর আত্মীয়সর্বস্ব নেতাগণের ভূমিকা ছিল সংগঠন বিরোধীএবং গ্রুপিং এর মূল কারণ। এখন প্রয়োজন নতুন জেলা কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমি কোন তৃতীয় গ্রুপের নেতৃত্ব দেই না। তবে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্র না মেনে অনেক অগণতান্ত্রিক কাজ করে প্রতিটি উপজেলায় বিএনপিতে দলাদলি সৃষ্টি করেছেন। এই অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং বিএনপিকে রাহুল মুক্ত করার জন্য আমার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। পরিছন্ন রাজনীতিবিদ দিয়ে জেলা কমিটি গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা বলেন, গত ১৫ বছরে হাসিনা সরকারের আমলে মিটিং মিছিল করা দূরহ ছিল। তবুও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা মোতাবেক কর্মকাণ্ড পালন করেছি।হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে শহরে কয়েক হাজার লোকের মিছিল হয়েছে আমি সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছি। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কয়েকটি গ্রুপ যে সমাবেশ করেছে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। শীঘ্রই কুড়িগ্রাম জেলা কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মিরা ঠাঁই পাবে। এটি আমার বিশ্বাস।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম বলেন,বড় দল হিসেবে নেতৃত্বের বা পদের জন্য প্রতিযোগিতা রয়েছে। এখন দলের সুসময়ে অনেকেই পদে আসীন হতে চাইছেন।হাইকমান্ড কুড়িগ্রামের নেতৃত্ব সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। শীঘ্রই কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হলে আমরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করবো।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত
গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার