ফরিদপুরে দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব লিবিয়া ফেরত আসাদ: মামলা করায় পাল্টা হুমকি
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম
ফরিদপুরে দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব লিবিয়া ফেরত আসাদ: মামলা করায় পাল্টা হুমকি। কথিত মাফিয়া গ্রুপের সদস্যদের হুমকি এরকম,
''আমাগে নেটওয়ার্ক অনেক বড়।
সারাবিশ্বেই আমাগের গ্যাং আছে। তুই কিভাবে বাইর হইস দেইখ্যা নিবো আমরা।''
প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে বিদেশে যেয়ে কাজ না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে এভাবেই আসাদ শেখকে (৩০) হুমকি দেয়া হয়।
এরপর বিদেশ থেকে ফিরে দালালদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে মামলা তুলে নিতে দেওয়া হয় হুমকি দেওয়া হয়।
অথচ বিদেশে কর্মসংস্থানের আশায় ধার দেনা করে টাকা জোগাড় করে তুলে দিয়েছিলো দালালের হাতে। এখন বসতভিটা ও জায়গাজমি সহ অন্যান্য সহায় সম্পদ হারিয়ে আসাদের পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে।
আসাদ শেখ ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের গনি শিকদার পাড়া গ্রামের আনছার শেখের ছেলে। পেশায় একজন ইটভাটা শ্রমিক।
ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ করতে যেয়ে পরিচয় হয় পাশের গ্রাম মোমিনখাঁর হাটের মোমিনখাঁর হাটের মৃত সামাদ শেখের ছেলে আতিয়ার শেখের সাথে।
এসময় তাকে লিবিয়ায় মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায় আতিয়ার। প্রথম দফায় সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর আসাদকে ভিজিট ভিসায় দুবাই নিয়ে যায়।
পরের মাসে ৬ ডিসেম্বর তাকে লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে আটকে তার পরিবারের কাছে ফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
আসাদ ইনকিলাব কে বলেন, সেখানে তাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। একপর্যায়ে তাকে লিবিয়ায় কাজ নেই বলে ইতালি পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে আরো টাকা আনতে বলে দেশ থেকে।
নিরুপায় হয়ে এরপর প্রথমে দুই দফায় ৯০ হাজার ও ৯৩ হাজার টাকা পাঠানো হয় তাদের কাছে। এরপর বসতবাড়ি বিক্রি করে আরো পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হয় তাদের। তারপরেও তাকে আকামা জোগাড় করে দেয়নি তারা।
আসাদ ইনকিলাব কে জানান, লিবিয়া নিয়ে তাকে দুই মাসের ট্যুরিস্ট ভিসায় ক্লিনারের কাজে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে ৯ মাসের কাজের টাকাও তারা আটকে রাখে। একপর্যায়ে আকামা না থাকায় তাকে আটক করে লিবিয়ান পুলিশ।
এরপর দালালের মধ্যস্থতায় ছাড়া পেয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরের দিকে কোনমতে জান নিয়ে দেশে ফিরে আসে।
এ ঘটনায় আসাদ দেশে ফিরে মানবপাচার মনিটরিং সেলে অভিযোগ দায়েরর পর ফরিদপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।
মামলায় আতিয়ার শেখ (২৯) ও তার সহযোগী সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার আমীর হোসেনের ছেলে হান্নান শেখকে (৪২) আসামী করা হয়। তবে মামলা দায়েরের পর উল্টো তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
আসাদ শেখের বাবা আনসার শেখ ইনকিলাব কে বলেন, জমি বন্ধক রেখে ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠাই।
তারপর মুক্তিপণের জন্য বসতভিটাও বিক্রি করে দেই। আমিতো বাড়িঘর সব হারাইছি। লাখ লাখ টাকা দিছি আতিয়াররে। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।
জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে ফরিদপুর পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে। তদন্তকালে আতিয়ার ও হান্নানের বিরুদ্ধে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো, তারপর সেখানে আটকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়, পরে লিবিয়া থেকে ফেরত পাঠানোর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই মো: শহিদুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা ইনকিলাব কে জানান, আসাদকে কে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে লিবিয়া পাঠানোর পর মুক্তিপণ হিসেবে আসাদের পরিবারের নিকট থেকে আরো পাঁচ লাখ টাকা ও কয়েকটি ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে আরো ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।
আদালত তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মামলার বিবাদিকে আদালতে হাজিরের জন্য সমন জারি করেন গত জুলাই মাসে।
৩১ অক্টোবর, মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে, জানতে আতিয়ার শেখের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাব কে বলেন, দুবাই থেকে সাধারণত মিশর কিংবা সিরিয়ায় ট্রানজিট দেয়া হয়।
তবে আসাদকে বেনগাজীতে নামানো হয়।চার লাখ টাকায় আসাদকে লিবিয়া নেয়ার কথা ছিলো। তবে তাকে লিবিয়া পাঠাতে তার সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এজন্য তার নিকট থেকে এক লাখ টাকা ধারও দেন তিনি।
তবে লিবিয়ায় আসাদকে একবছরের ভিসা দিয়ে কাজেও পাঠানো হলেও সে ভ্যাজাল করে চলে আসে।
আতিয়ার ইনকিলাব কে বলেন, আসাদকে লিবিয়া বিমানবন্দর হতে সরাসরি ক্যাম্পে নেওয়া হয়। তার দু'দিন পরেই তাকে এক বন্ধুর মাধ্যমে একটা কফি হাউজের কাজে লাগায় দিছিলাম। সেই কাজ সে করে নাই। পরে তাকে রোড ক্লিনারের কাজ দেয়া হয়।
সেখানে সে কয়েকদিনের টাকা পাওনা পেতো। আসাদের পরিবারের নিকট থেকে মুক্তিপণ বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নেয়ার কথা তিনি জানেন না এবং বিদেশে যাওয়ার পরে আসাদের মামার মাধ্যমে তাকে আগের পাওনার টাকা পরিশোধ করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
জানা গেছে, এর আগে আতিয়ার লিবিয়ায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দুই বছর আগে ফিরে আসেন। তবে আসাদ ছাড়া আর কাউকে তিনি বিদেশে পাঠাননি এবং হান্নানকে তিনি চিনেন না বলেও দাবি করেন।
আর আসাদকে মোবাইল ফোনে দেখে নেয়ার কোন হুমকিও তিনি দেননি বলে এই ইনকিলাব কে বলেন। যদিও মোবাইল ফোনে হুমকির এই রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের
স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা
সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক
অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত
এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল
বড়দিনে ভারতকে ‘দুঃসংবাদ’ শোনালো অস্ট্রেলিয়া
প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা
ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০
যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক
বিচ্ছেদ হতে না হতেই আবারও একসাথে তারকা জুটি বেন-লোপেজ
হাইতির হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত তিনজন
ছাত্রদলের কমিটি : ঢাকা কলেজের সামনে ৭টি ককটেল বিস্ফোরণ
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ১৫
গুম হন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খালেদ হাসান
বিদেশি ভুল তথ্য ঠেকানোর মার্কিন সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ
চাঁদপুরে জাহাজে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় মামলা