প্রজননকৃত ডিম থেকে ইলিশ উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাত থেকে জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হল
০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
মূল প্রজননকালে ইলিশের ডিম থেকে লার্ভা পরিস্ফুটনের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের সাথে গত মধ্যরাতেই সারা দেশে জাটকা আহরন,পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। আগামী ৩০জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞাকালে সরকার ঘোষিত ৬টি অভায়শ্রম সহ অনুর্ধ ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত ইলিশ পোনা-জাটকা আহরন, পরিবহন ও বিপনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে সরকার ইতোমধ্যে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। অপরদিকে নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত ও নির্বিঘœ করতে গত ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে দেশের উপকূলীয় ৭ হাজার ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার প্রজনন ক্ষেত্রে সব ধরনের মাছ সহ সারা দেশেই ইলিশ আহরন, পরিবহন ও বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে ৩ নভেম্বর মধ্য রাতে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে প্রতি বছরই মূল প্রজননকাল হিসেবে আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগে পরে ২২দিন উপক’লীয় প্রজনন এলাকা সহ সারা দেশে ইলিশ আহরন নিষিদ্ধ থাকছে। এসময়কালে মা ইলিশের নির্গত ডিম থেকে লার্ভা হয়ে বাচ্চা পরিস্ফুটনের পরে তা জাটকা থেকে পূর্ণাঙ্গ ইলিশে রূপান্তর নির্বিঘœ ও সহজত করতে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা আহরন নিষিদ্ধ থাকে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সহ সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং জাটকা আহরনে টানা ৮ মাসের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন ও সহনীয় আহরন ২ লাখ টন থেকে প্রায় পৌনে ৬ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।
এবারো জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞা বলবত করতে বরিশাল সহ সন্নিহিত উপকূলীয় এলাকায় প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা সহ নানা ধরনের অভিযান পরিচালিত হবে বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এসব অভিযানের পাশাপাশি জাটকা নিধন বন্ধে পুলিশের ছাড়াও নৌ বহিনী, কোষ্ট গার্ড, র্যাব ও নৌ পুলিশ অভ্যন্তরীন নদ-নদী ও উপক’লীয় এলাকায় নজরদারী চালাবে বলেও জানা গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দেশে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যন্য ক্ষতিকর মৎস্য আাহরন উপকরনের সাহায্যে যে পরিমান জাটকা আহরন হয়, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে আরো অন্তত ১ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেত। তবে নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকা’র উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯,২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২,২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। এমনকি ২০২২ সালের প্রজনন মৌসুমে দক্ষিণ উপক’ল সহ সংলগ্ন অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে প্রায় ৮৪% মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। এরমধ্যে ৫২ ভাগ মা ইলিশ ২২ দিনের মূল প্রজননকালীন সময়ে এবং আরো ৩২% ডিম ছাড়ারত ছিল। যা ছিল আগের বছরের প্রজননকালের চেয়ে প্রায় ২.৪৫% বেশী। গতবছর এবং চলতি বছরও ইলিশের প্রজনন ও পরিস্ফুটনের হার তুলনামূলকভাবে বাড়ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট ও অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
জাটকা আহরন ও বিপনন নিষিদ্ধকালীন সময়ে দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের মৎস্য আহরনও নিষিদ্ধ থাকবে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, শ্রোতের বিপরিতে প্রতিদিন ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে সক্ষম ‘অভিপ্রয়াণী ইলিশ’ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপক’লের ৭ হাজার ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মূক্তভাবে ভাসমান ডিম ছাড়ার পরে তা থেকে ফুটে বের হওয়া ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নর্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে। এরা খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই প্রজননক্ষম ইলিশ হিসেবে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় জাটকা বিচরন করে খাদ্য গ্রহন সহ বেড়ে ওঠে, মৎস্য বিজ্ঞানীগনের সুপারিশে সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহিৃত করে ‘অভয়াশ্রম’ ঘোষনা করা হয়েছে। ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্য়ন্ত ১শ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার, খেপুপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এবং হিজলা ও মেহদিগঞ্জের লতা, নয়া ভাঙ্গনী ও ধর্মগঞ্জ নদীর মিলনস্থলের ৬০ কিলোমিটার সহ মোট ৬টি অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ইলিশ আহরন নিষিদ্ধ করায় উৎপাদন বাড়ছে।
জাটকা আহরন বন্ধে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে বরিশাল সহ উপক’লভাগের সবগুলো উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রচার-প্রচানাও শুরু হয়েছে। তবে মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যন্যি ক্ষতিকর মৎস্য আহরন উপকরনের ব্যবহার বন্ধে আরো কঠোর নজরদারী সহ তা কার্যকর ভাবে বন্ধের কোন বিকল্প নেই।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কোচ হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করলেন মেসি
কাভার্ড ভ্যানচাপায় প্রাণ গেল দুই বন্ধুর
চবিতে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
এবার মার্কিন নির্বাচনে ‘জেন-জিকে’ টানতে কমলার নানা কৌশল
জমকালো আয়োজনে পালিত হচ্ছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসবঃ 'ফাতেমা রানীর তীর্থযাত্রা'
স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকে ৫৮৯ জনের চাকরিচ্যুতি
ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলা যাবে না : হেফাজতে ইসলাম
সাবেক এমপি বদির ম্যানেজার জাফর গ্রেফতার
শেরপুরে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু
আজ থেকে কাঁচা বাজারেও নিষিদ্ধ পলিথিন
বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বৈরিতার পথেই হাঁটবে !
এবারের খাল পরিষ্কার লোক দেখানো নয়: উপদেষ্টা আসিফ
বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের টুইট সর্বত্র আলোচনা
যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটিরও বেশি ভোটদাতা আগাম ভোট দিলো
নিখোঁজের ৩৮ ঘন্টা পর নদীতে ভেসে উঠল শিক্ষার্থী জুবায়েদের লাশ
রাজশাহীতে সিএনজি-ভুটভুটি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
চীনের অনলাইন খুচরা বিক্রেতা ‘টেমু’ ইইউর তদন্তের মুখে
তুরস্কে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম মুয়াজ, শুভেচ্ছার বন্যা
যশোরে সড়ক দূর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ