দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার কাজ করছে: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ এএম
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার কাজ করছে। আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা আমাদের প্রথম প্রয়োরিটির মধ্যে ছিল। বাংলাদেশ প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। সেরকম এক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে আমরা যেন দেউলিয়াত্বের দিকে না যাই সেই বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে।‘
সোমবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ‘নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বুয়েটের আবরার ফাহাদকে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। তখন ওই ঘটনার আন্দোলন করার জন্যও আমাদের অনেক চাপ সহ্য করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমরা আন্দোলনও করেছিলাম। দেশপ্রেমকে ধারণ করে যে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে লড়াই বাংলাদেশের মানুষ শুরু করেছিল সেই লড়াই আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি ভিন্ন গতি পেয়ছিল। আমাদের সেই লড়াই এখনো রয়েছে। সেই লড়াইয়ের একটি অংশ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হতে পারিনি। এমন একটা সময়ে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি যখন বাংলাদেশ একটা ধ্বংসযজ্ঞের মতো পরিস্থিতিতে ছিল। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। আন্দোলনে শতাধিক শিক্ষার্থীর চোখের মধ্যে ছররা গুলি ঢুকেছে। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশজনের চোখের ভেতর থেকে সফলভাবে স্প্রিন্টার বের করা হয়েছে। ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা করা হয়নি। তখন সরকারী অনেক মেডিকেল কলেজে বলেও দেওয়া হতো যাতে তাদের চিকিৎসা না দেওয়া হয়। অনেকেই তখন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানে অনেকে জমি জাগয়া বিক্রি করেও চিকিৎসা খরচ চালিয়েছে।’
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়া চলামান রয়েছে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ইতিপূর্বে বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার জন্য যেসব খরচ হয়েছে তা সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। পিজি হাসপাতালের সঙ্গে ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য যে সুপার স্পেশালাইজড চালু করা হয়েছিল সেখানে পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। সেটিকে শুধুমাত্র জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিশেষভাবে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না তারা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতে পারে। সেখানে চিকিৎসাদানের জন্য আহতদের আনার প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে আহতদের দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে আহতদের পার্সপোর্ট না থাকা ও অনেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিছু জটিলতা রয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পুরোপুরি সফল হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থান আংশিক সফল হয়েছে। কারণ আমাদের এক দফা দাবির মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ।কিন্তু এখনো সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে বিলোপ করা সম্ভব হয়নি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে। সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামীলীগের পরিণতি কি হওয়া উচিত।’
ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের ব্যাপারে আসিফ মাহমুদ বলেন,
‘যে ক্যাম্পাসগুলো থেকে ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গণতান্ত্রিক চর্চার শুরুটাও সেই ক্যাম্পাসগুলো থেকে হওয়া উচিত। জানুয়ারি - ফেব্রুয়ারীর মধ্যে সকল ক্যাম্পাসগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা ক্যাবিনেটে আলোচনা করব। ’
আয়োজনে আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, ‘যখন মানুষ তার ন্যায্য দাবি, তার ভাত কাপড়ের অধিকার চায় তখন মানুষকে আলাদা করার চেষ্টা করা হয়। সে প্রশ্নে আলাদা হওয়ার সুযোগ নেই। এবং আমরা যদি সবাই যার যার মতো মনে করি বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে থাকব, উপদেষ্টারা আমাদের জন্য সবকিছু করে দেবেন; তাহলে কিছুই হবে না। আমাদের অধিকারের প্রয়োজনে আমাদের সবাইকে জাগ্রত থাকতে হবে। আমাদের অধিকার অন্য কেউ আদায় করে দেবে না। সেজন্য কিছু কিছু প্রশ্নে আমাদের এক থাকতে হবে। আমরা একটা সুষ্ঠু ভোট চাই, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে। রাষ্ট্র যারা চালাবেন তারা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য থাকবেন। এ বিষয়ে একমত হওয়া কি খুব কঠিন? আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই যেখানে আমরা বিচার পাব। এ ন্যূনতম বিষয়ে একমত হওয়া কি খুব কঠিন? আমাদের ধর্ম আলাদা হতে পারে, জাতিগত পরিচয় আলাদা হতে পারে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারে কিন্তু এই মৌলিক প্রশ্নগুলোতে আমরা সবাই এক। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এই প্রশ্নগুলোতে বিভেদ সৃষ্টি করে আমাদের মূল যে দাবি, আমরা ন্যায় বিচার চাই, গরীবের অধিকার চাই সেসব থেকে কেউ যেন আমাদের সরিয়ে দিতে না পারে। সে ষড়যন্ত্র দেশে চলছে, দেশের বাহিরেও চলছে, চলবেই। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের জায়গা থেকে এক থাকি, শক্ত থাকি তাহলে সেটা করা সম্ভব নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জাহাঙ্গীরনগর সে পথ আমাদের দেখাতে পারবে।’
এ সময় সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, গত রেজিমে একজন ডাইনি খুনি কুলাঙ্গার মহিলা দেশটাকে কুক্ষিগত করে দেশের মানুষকে প্রজাজ্ঞান করত। আমি মনে করি এই গণঅভ্যুত্থানের পরে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশের অফিসিয়াল নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ থাকতে পারে না। কারণ যে মুহূর্তে এই শব্দের ভেতরে প্রজা থাকবে, তখনই আমাদের মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করে কেউ না কেউ বোধহয় রাজা আছে। নতুন বাংলাদেশ আমি কোন রাজা দেখতে চাই না, আমি দেখতে চাই এই দেশের মালিক এই দেশের জনগণ। দিন যায়, রাজা যায়, সরকার যায় আমাদের মানসিকতা কি বদলায়? কিছুটা তেতো কথা আমার বলতে হবে ইনফ্যাক্ট তেতো কথা বলতে কেন যেন আমার খুব একটা দ্বিধা হয় না। এই কথা গুলো শুনতে অনেকের জন্য একটু কঠিন মনে হতে পারে। আমি দেখতে চাই এই দেশের মানুষ নাগরিক হয়ে গড়ে উঠছে। কারো তোষামদি করার জন্য যাতে নতুন বাংলাদেশ তৈরি না হয়। আমাদের মনের ভিতরেই আমরা কেন যেন দাসত্ববরণ করি। এই দাসত্ব দূর না করতে পারলে কোনদিনও আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট সফল হবে না।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এবং জুলাই-আগষ্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান ও প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম, বাংলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর শামীমা সুলতানা লাকি, ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মো. লুৎফুল এলাহী, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন রুনু প্রমুখ। আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ শান্ত।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পর্তুগালের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়া
মধ্যপ্রদেশে মেলা থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করা পুলিশ সদস্যের তালিকা হচ্ছে
আয়ারল্যান্ড সিরিজে অভিজ্ঞদের দলে ফেরাল বাংলাদেশ
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী শীর্ষ নেতাদের কারাদণ্ড
হেমন্তের শেষভাগেও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে : কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব অব্যাহত
কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে
ঢাকায় হিপহপের ঝলক দেখালেন র্যাপার টাইগা ট্রিস
মুরাদের হ্যাটট্রিক, বোলিং অনুশীলন হলো ভালোই
গারো পাহাড়ের চাঞ্চল্যকর সোহেল হত্যা মামলায় ৩ জন গ্রেপ্তার
বিতর্কিত এনজিও-নেত্রীদের দিয়ে নারী সংস্কার কমিশন গঠন: ব্যাপক সমালোচনা
সাদপন্থীদের সড়কে অবস্থান : রাজধানীতে তীব্র যানজট
মুখ ঢেকে রাতের অন্ধকারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল
ইমরান খানের ‘শেষ ডাক’’,আগামী দুইমাস ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি
চট্টগ্রামে পালানো হাসিনার বিরুদ্ধে আরেক মামলা
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে নতুন চেয়ারম্যান হলেন শাহীন সুলতানা
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে অসুস্থ প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্ট, হাসপাতালে ভর্তি
ইসরাইলি বর্বর হামলায় নিহত আরও ৫০ ফিলিস্তিনি
মধুপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৪
হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে