লক্ষ্মীপুরে অবাদে চলছে ফিটনেস বিহীন যানবাহন, নিশ্চুপ পুলিশ ও বিআরটিএ
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম
লক্ষ্মীপুরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সড়কে অবাধে চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেই সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বেশির ভাগ যানবাহন।নেই কোনো তদারকি,নিশ্চুপ পুলিশ ও বিআরটিএ কতৃপক্ষ। ভয়াবহ বিস্ফোরণসহ নানান ধরণের মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই এসব যানবাহনে চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
অভিযোগ রয়েছে, যানবাহনে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রেখেই দেয়া হয় ফিটনেস সনদ। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, তবে টাকা দিলেই এসব কোনো সমস্যা হিসেবেই ধরছে না সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এরমধ্যে বেশিরভাগেরই নেই ফিটনেস সনদ। আবার এসব যানবাহনে ব্যবহৃত হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার। অথচ পাঁচ বছর পর পর এসব গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করানোর নির্দেশনা থাকলেও, তা মানছেনা কেউ।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুরে রেজিস্টেশন করা শুধু সিএনজি চালিত অটোরিকশাই রয়েছে ৮ হাজার। এরমধ্যে ৭ হাজারের বেশি অটোরিকশার নেই ফিটনেস সনদ।
স্থানীয়রা বলছেন, ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহনে ব্যবহৃত মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার যেনো এক একটি ‘জীবন্ত বোমা’। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বিষ্ফোরণ, তা জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে ওইসব যানবাহনে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। এজন্য প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই দুষলেন তারা।
১৪ অক্টোবর জেলা শহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীণ লিফ ফিলিং স্টেশনে লক্ষ্মীপুর থেকে রামগতি সড়কে চলাচলকারী একটি বাসে গ্যাস নেয়ার সময় সিলিন্ডারে বিষ্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন। এদিকে খোদ চালকরাই স্বীকার করছেন যে, বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও গ্যাস ফিলিং স্টেশনে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই তারা যানবাহন চালাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর গ্রীণ লিফ গ্যাস ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক আল আমিন হোসেন বলেন, সবসময় গাড়ির চাপ বেশি থাকায় গ্যাস ফিলিং করার সময় সব যানবাহনের সিলিন্ডারের কাগজপত্র পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এজন্য পুলিশ প্রশাসন ও বিআরটিএর নজরদারি বাড়ানো দরকার।
জেলা শহরের বাসিন্দা ও লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, লক্ষ্মীপুরে অধিকাংশ সিএনজির ফিটনেস নেই। অনেক ক্ষেত্রে তাদের যে গ্যাস সিলিন্ডার সেটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। আমরা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঝুঁকি জেনেও এসব যানবহন ব্যবহার করছি। পুলিশ প্রশাসন যদি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করে, তাহলে আমাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আমরা এই ঝুঁকি থেকে কোনোভাবেই বাঁচতে পারবো না। এমন বাস্তবতায় পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
জেলা শহরের বাঞ্চানগর এলাকার বাসিন্দা কাউছার বলেন, ঝুঁকি আছে জেনেও ওইসব ফিটনেসবিহীন যানবাহনে প্রয়োজনের তাগিদে চলাচল করতে হয় আমাদের। এসব গাড়িতে আবার ব্যবহার হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার। সবসময় আতঙ্কে থাকি, এই বুঝি কোনো দুর্ঘটনা শিকার হচ্ছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের নীরবতার কারণেই সড়কে অবাধে চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। আর অদৃশ্য কারণে এইসব যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেনা পুলিশ।
লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী সুমন দাস বলেন, আমরা সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন গাড়িতে যখন চলাফেরা করি, তখন ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়। এতে বিভিন্ন সময় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব বিষয়ে বিআরটিএ কোন ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই সড়কে অবাধে চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, সারা বছর নজরদারি না থাকলেও ফিটনেস পরীক্ষার সময় তৎপর হয়ে ওঠেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। তবে তাদের ম্যানেজ করেই বৈধতা নেয়া হয় যানবাহনের।
সিএনজি অটোরিকশা চালক মোরশেদ বলেন, ফিটনেস এগুলি তো আমরা বুঝিনা। আমরা টাকা দিয়ে গাড়ি চালাই। পুলিশে ধরলেই টাকা নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেয়। টাকা দিলেই সব মামলা মাফ। গ্যাস ফিলিং স্টেশনেও ২০ থেকে ৩০ টাকা দিলেই সিলিন্ডারের মেয়াদ না দেখেই গ্যাস দিয়ে দেয়।
কয়েক জন সিএনজিচালক নাম না প্রকাশের শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, গাড়ির ফিটনেস থাকলেও পুলিশকে টাকা দেয়া লাগে, না থাকলেও টাকা দেয়া লাগে। এইভাবেই আমরা সড়কে গাড়ি চালাই। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা গাড়ির কাগজপত্র কিভাবে করবো? বিআরটিএতো আমাদেরকে কোনো ছাড় দেয় না। সেখানে গেলেও টাকা ছাড়া মিলে না কোনো সেবা।
লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখেই ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিআরটিএর যৌথ সমন্বয়ে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। সড়কে চলাচলকারী অধিকাংশ গাড়িরই ফিটনেস নেই উল্লেখ করে বিআরটিএর এ কর্মকর্তা বলেন, গাড়ির মালিক ও চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেনো তারা গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্ট না করে রাস্তায় গাড়ি না চালান।
লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) প্রশান্ত কুমার দাশ বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের নজরে যা আসে, আমরা মামলা দিচ্ছি। সড়কের চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন যে কোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছে পুলিশ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন