দেশের ১১৫৬ নদ-নদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পিএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পিএম
দেশে বর্তমানে ১ হাজার ১৫৬টি নদ-নদী আছে বলে একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর গ্রিন রোডস্থ পানি ভবনে বাংলাদেশের নদ-নদীর সংখ্যা নির্ধারণ বিষয়ক সেমিনারে এসব তালিকা তুলে ধরা হয়।পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত অতিথি ছিলেন
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসর) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপস্থিত ছিলেন বাপাউবোর মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা প্রমুখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে নাজমুল আহসান বলেন, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ১৫৬টি নদ-নদীর সংখ্যা পাওয়া গেছে। এটিকে খসড়া তালিকা হিসেবে ধরে আগামীতে বাদ পড়া নদীগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, এক বিভাগে বয়ে যাওয়া নদীর সংখ্যা হচ্ছে-১ হাজার ১২৩ টি, দুই বিভাগে ২৭টি, ৩ বিভাগে ৪ টি এবং ৪ বিভাগে ২ টি করে মোট ১১৫৬ টি প্রবাহিত নদ-নদীর সংখ্যা পাওয়া গেছে।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, খাল ও নদীর সংঙ্গা নিরূপণ করতে হবে। ইতিপূর্বে বরিশালে উন্নয়নের নামে খালগুলো ভরাট করা হয়েছে। তা ছাড়া দেশে অসম্ভবভাবে নদীদূষণ হয়েছে। এই দূষণ যে শুধু ব্যবসায়ীরা করছে তা নয়, নদীর ভেতরে অনেক ড্রেজার ও ছোট ছোট জাহাজ ডুবে আছে। অনেক স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জাহাজ ডুবে আছে তা উত্তোলন করা হচ্ছে না। ফলে নদী ভরাট হচ্ছে।
বুড়িগঙ্গা নদীর অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর অবস্থা এ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে যে, নদীর কাছে গেলে আতর ছিটিয়ে যেতে হবে। সেখানে সাকার ছাড়া কোন মাছ নেই। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে মেঘনা পর্যন্ত নদী ভরাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যত ধরনের ময়লা আছে সব নদীর ধারে রাখা হচ্ছে।
বর্তমানে ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে। অথচ এটি ছিল ১৪-১৫ হাজার কিলোমিটার। বালি উত্তোলনের কারণে এক জায়গায় খনন হচ্ছে অপর স্থানে নদী ভরাট হচ্ছে। শুধু সংখ্যা নয় নদীকে বাঁচাতে হলে নাব্যতা বাড়াতে হবে। দূষণ বন্ধ করতে হবে।
ইটিপি ব্যবহার না করে যেসব কারখানার নদীর মধ্যে বর্জ্য ফেলছে, তাদের ড্রেনগুলো পাকা করে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নদী উদ্ধার করার এখনই সময়। অবৈধ বালু মহলগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা না করে নদীগুলো কি অবস্থায় আছে সেটি বিবেচনা করতে হবে।
সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা দেখেছি একেক মন্ত্রণালয় ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেয়, আমরা চাই সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত তথ্য এক হবে। দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কত তার তালিকা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, হাওর ও বিলের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সব খালের তালিকা ৩ মাসের মধ্যে করতে হবে।
নদী দখল ও দূষণ মুক্ত করা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় একটি করে নদীকে দখল ও দূষণ মুক্ত করা হবে। আমরা দেখেছি নদীদূষণমুক্ত করা এতো সহজ না, তারপর সকলের সহযোগিতায় সম্ভব। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যাকে দূষণমুক্ত করা হবে। ঢাকার সব খাল উদ্ধার করা সম্ভব নয়। মোট ২১টি খালকে দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে।
আগামী পহেলা বৈশাখের দিন নদ-নদীর এই তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এই খসড়া তালিকা প্রস্তুতের সঙ্গে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় জড়িত রয়েছে। আমরা এখানে ভূমি মন্ত্রণালয়কেও যুক্ত করবো। আমরা তিনটি মন্ত্রণালয় মিলে একসঙ্গে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে এই তালিকাটা চূড়ান্ত করে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিতে চাই। যে নদীগুলোর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, সেগুলোর যদি রেকর্ড থাকে তাহলে ডিসিদের বলবো, সেটি যাচাই করে আমাদের পাঠিয়ে দিতে। নদীর সংখ্যাটা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পহেলা বৈশাখের মধ্যে নদীর সংখ্যার চূড়ান্ত তালিকা দিয়েই আমরা থেমে থাকবো না। এরপর পর্যায়ক্রমে নদীর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, অবস্থাসহ অন্যান্য তথ্য সেই তালিকায় যুক্ত করা হবে। তালিকায় নদীর অফিশিয়াল নামের পাশাপাশি স্থানীয় নামও থাকবে।
মৃত নদী বলে কিছু নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রবাহহীন নদী বলা যায়, কিন্তু মৃত নদী বলার সুযোগ নেই। মৃত নদী বলেই ডিসিদের কেউ কেউ নদীকে লিজ দিয়ে ফেলেন। প্রবাহহীন নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকে। কিন্তু মৃত ঘোষণা করলে নদীর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এটা আমরা হতে দিবো না।
তিনি আরো বলেন, আমরা হাওর ও বিলের তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছি। এরপরে আমরা খালের তালিকা চূড়ান্ত করবো। আজকে থেকে তিন মাসের মধ্যে ডিসিরা এই তালিকা করবেন।
নাজমুল আহসান জানান, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর এই খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এটি জমির সিএস এবং আরএস এর মাধ্যমে হয়েছে। এই তালিকায় ৩৬৫টি এমন নদীর নাম যুক্ত করা হয়েছে, যেটা ২০১১ সালে বাপাউবো কর্তৃক প্রকাশিত ৪০৫টি নদী ও ২০২৩ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ১০০৮টি নদীর তালিকায় ছিল না।
তিনি আরো জানান, ২০১১ সালে বাপাউবো কর্তৃক প্রকাশিত ৪০৫টি নদীর তালিকায় থাকা ১৮টি নদী এবং ২০২৩ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ১০০৮টি নদীর তালিকায় থাকা ২২৪টি নদীর নাম নাম পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তালিকায় রাখা হয়নি। এই বিষয়ে আরো অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান তিনি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে: ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ফরিদপুরে প্রিন্সিপালের ওপর অতর্কিত হামলা
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠিত
‘সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে’
অসহায় শীতার্তদের মাঝে রূপালী ব্যাংকের কম্বল বিতরণ
জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই: ফখরুল ইসলাম
মীরসরাইয়ে অবৈধ বেহুন্দি ও মশারি জাল জব্দ
গণঅভ্যুত্থানে সংবাদমাধ্যমের চিত্র প্রদর্শনী করছে তরুণ কলাম লেখক ফোরাম
মারা গেলেন আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী
নালিতাবাড়ীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ১৩ হত্যার নির্দেশদাতা নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়?
যে কারণে ছাত্রদের ঘোষণাপত্র দিতে মানা করেছিলেন ড. ইউনূস
মানিকগঞ্জে এলজিইডির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
বাংলাদেশে কখনো স্বৈরাচারের শাসন জনগণ মেনে নিবেনা: আমিনুল হক
প্রতিনিয়ত মোশাররফ করিমের থেকে শিখি: মম
অবৈধ ৭টি কয়লা তৈরির চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন