পাহাড়ের ফল নেমে এসেছে সমতলে, কমলা মাল্টা ড্রাগনের উৎপাদন বেড়েই চলেছে
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৪ পিএম
পাহাড়ী জমি না হলে সু-স্বাদু পুষ্টিকর মাল্টা, কমলা বা ড্রাগনসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর ফল উৎপাদন হয় না। সেকেলের এই ধারনা পাল্টে গেছে। কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়া, কৃষকদের প্রচেষ্টা আর কৃষি বিভাগের উৎসাহে এখন বাংলাদেশের সমতল ভূমিতেই আবাদ হচ্ছে সকল ধরনের সুস্বাদু ফল। যার মধ্যে রয়েছে চর্বি বা সোডিয়ামমুক্ত ৬০ ক্যালোরি শক্তির পাশাপাশি ভিটামিন এ ও সিসহ বিভিন্ন ভিটামিনযুক্ত কমলা ও মাল্টায়। আর এ কারনে ধনিক শ্রেণির অত্যন্ত জনপ্রিয় একদা বিদেশী ফলটির ধারে কাছে যেত পারতো না নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। কিন্তু এখন দেশেই উৎপাদিত ফল পাওয়া যাচ্ছে অনেক দামে। প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত এসব ফল এখন সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে। যাচ্ছে বিদেশেও। তবে তা বাংলাদেশী প্রবাসী ভাইদের নিজস্ব উদ্যোগে তাদের শপিং মলে বিক্রির জন্য। ধানের চেয়েও দ্বিগুনের বেশী দাম পাওয়ায় কৃষকেরাও ঝুকছে সুস্বাদু ফল আবাদের দিকে। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে মৌসুমী ফলের আবাদ আল্লাহর রহমত হিসাবে দেখা দিয়েছে কৃষকদের পরিবারে।
শস্য শামলা আমাদের এই বাংলাদেশের মাটিতে এক ফসলের জায়গায় তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হতো। এক জমিতে চার ফসল উৎপাদন হওয়ায় আমরা আমাদের জমিকে উর্বরা জমি হিসাবেই বিবেচনা করতাম। কালের বিবর্তন আর আধুনিক চাষাবাদ ব্যবস্থা’র পাশাপাশি কৃষকদের প্রাণপন প্রচেষ্টায় ভুট্টা, লিচুসহ বিভিন্ন ফল কৃষি অর্থনীতিতে জায়গা করে নেয়। বান্দরবান, রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি, সিলেট অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় পাহাড়ী ভুমি ছাড়া কৃষি নির্ভর উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ের ছিটে-ফোটাও নাই। একদা পাহাড়ী জমি ছাড়া চা গাছ হয় না বলেই সিলেট অঞ্চলে গড়ে উঠে চায়ের বাগান। গত দু’দশক আগে নূড়ী পাথর বেষ্টিত পঞ্চগড় জেলায় চা আবাদ শুরু হয়। এখন পঞ্চগড় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন জেলায় পরিণত হয়েছে। মাত্র এক থেকে দেড় হাজার টাকা বিঘা হিসাবেও জমি বিক্রি হতো না সেই জমি এখন এক লাখ টাকা শতক হিসাবেও পাওয়া মুশকিল। শুধু তাই নয় চায়ের আবাদ এখন পঞ্চগড় ছেড়ে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলায় বিস্তিৃতি লাভ করেছে।
ঠিক একইভাবে সুস্বাদু মাল্টা কমলা বলতে ভারতের ডার্জিলিং, ভুটান ড্রাগনের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতো হতো। দামের কারনে এসব ফল ভিআইপি ফল হিসাবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। থাকতো ফরমালিনের ভীতি। তারপরও অসুস্থ রোগীকে দেখতে গেলে মৌসুমী এসব ফলের কদরই আলাদা। কিন্তু এখন হাট বাজারের বাইরে ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে মাল্টা, কমলা বা ড্রাগন ফল। সবুজ রংয়ের ফল দেখলেই এখন সবাই বোঝে এসব দেশে উৎপাদিত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে কৃষি বিভাগ ও উদ্যোক্তা কৃষকদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশেই উৎপাদিত হচ্ছে ডার্জিলিং ভুটান ও চায়না মতই হলুদ রংয়ের মাল্টা ও কমলা। মিষ্টি ও স্বাদে বিদেশী মাল্টা ও কমলার মতই। আর ড্রাগন ফল এখন যত্রতত্রই উৎপাদন হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চ গ্রামে গড়ে উঠা মাল্টা ও কমলার বাগান দেখতে দূর দূরান্ত থেকে নারী পুরুষ শিশুরা আসছে। একই ধরনের বাগান রয়েছে উত্তরের অনেক এলাকায়। স্বাদে ও সাইজে এসব কমলা ডার্জিলিং ভুটানের কমলার মতই। এই বাগানটি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ব্যাপক জনসমাগমের কারনে বাগান কর্তৃপক্ষ টিকেট কেটে বাগানে প্রবেশের ব্যাবস্থা করেছে। বাগানে ঢুকতে জনপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা।
দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার পল্লীতে কমলা চাষে সফলতা অর্জন করেছেন প্রভাষক সেলিম রেজা।
তার নিজস্ব এক একর জমিতে গত ২০২০ সালের জুন মাসে চায়না ও পাকিস্তানী জাতের ২০০ কমলা ও ২০০ মাল্টার চারা রোপণ করেন। গত ২০২২ এপ্রিলে তার বাগানে প্রথম ফলন আসতে শুরু করে। প্রথম বছরেই তিনি ৩৫ মণ কমলা ও ৫০ মণ মাল্টা বিক্রি করেন। তারপর দ্বিতীয় বছর ২০২৩ সালে তার বাগানের সব গাছেই ফল আসে। এবারে তার মাল্টা গাছ থেকে ১২০ মণ ফল পেয়েছেন। এসব মাল্টা বাগান থেকে ক্রেতারা ক্রয় করে নিয়ে গেছেন। আর কমলা গাছ থেকে তিনি ১০০ মণ কমলা পাওয়ার আশা করছেন। এরই মধ্যে তিনি ৩০ মণ কমলা বিক্রি সম্পন্ন করেছেন। আরো ৭০ মণ কমলা পাবেন বলে আশা করছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষিরা দামী ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পাহাড়ের ফলগুলো নেমে এসেছে সমতল ভ’মিতে। আলু, পটল, করলা চাষের জমিতে দেদারসে ফলছে দামী ড্রাগন ফল। সামান্য উঁচু জমিতে চাষ হচ্ছে মাল্টা, কমলা,রাম্বুটানসহ বেশ উচ্চমূল্যের ফসল। হটাৎ দামী ড্রাগন ফল, মাল্টা-কমলা চাষে কৃষকদের আগ্রহী হওয়ার পিছনে অল্প জমিতে অধিক লাভই অন্যতম কারন বলে জানা গেছে।
সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে বছরে ফলের বাজারের আকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় আপেল। এর পরের অবস্থান মাল্টার। এ দুটি ফলের বাইরে কমলা, ডালিম, আঙুর, নাশপাতি ও লেবুজাতীয় ফল আমদানি হয়। যার পূরোটাই ছিল বিদেশ নির্ভর। গত দশ বছরে ক্রমান্বয়ে এই বাজারের একটি অংশ দেশে উৎপাদিত ফল দখল করে নিয়েছে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে ফল আবাদ এখন নির্দিষ্ট এলাকা ভেদে নয় দেশের সকল অঞ্চলেই উচু সমতল জমিতে আবাদ হচ্ছে।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈষ্ঠ অধ্যাপক কৃষিবিদ হাসান ফুয়াদ এলতাজ কমলার গুনাগুন বর্ননা করে বলেন, প্রতিটি কমলাতে প্রস্তাবিত দৈনিক পরিমাণের ১০০ ভাগের বেশী ভিটামিন সি 100% এরও বেশি ভিটামিন সি থাকে। এটি অন্য যে কোনো সাইট্রাস বা লেবু জাতীয় ফলের চেয়ে বেশি। তার মতে একটি মাঝারি আকারের কমলায় আছে: চর্বি বা সোডিয়ামমুক্ত ৬০ক্যালোরি শক্তির পাশাপাশি ভিটামিন এ ও সিসহ বিভিন্ন ভিটামিনযুক্ত কমলা ও মাল্টা চিনি কোনো নেই ফাইবার ৩ গ্রাম চিনি ১২গ্রাম প্রোটিন ১গ্রাম ভিটামিন-এ ১৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-সি ৭০ মিলিগ্রাম দৈনিক প্রস্তাবিত পরিমাণের ৬% ক্যালসিয়াম
পটাসিয়াম২৩৭ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট ১৫.৪গ্রাম কমলা লেবুর উপকারিতার তালিকায় রয়েছে কোষকে যে কোনো ধরণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে শরীরকে কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, কোলাজেনএকটি প্রোটিন যা ক্ষত নিরাময়করেএবংত্বককে মসৃণ করে রক্ত স্বল্পতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আয়রন শোষণ করা সহজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষা বৃদ্ধি করে বয়স-সম্পর্কিত মলিকুলার ডিজেনারেশন (AMD) এর অগ্রগতিকে ধীর করে, যা দৃষ্টি শক্তি হ্রাসের একটি প্রধান কারণ ক্যান্সার-সৃষ্টি কারী ফ্রি radicals সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে। মাল্টা লেবু ড্রাগন সব ফলেরেই রয়েছে অসাধারন গুনাগুন।
যেহেতু দেশে এসব ফল উৎপাদিত হচ্ছে এবং তুলনামূলক দামও কম। সৌখিনতা নয় বরং পুষ্টি ও রোগ বালাইয়ে এসব ফলের গুনাগুন তুলে ধরে সকল শ্রেনীর ও পেশার মানুষকে নিয়মিতভাবে এসব ফল খেতে উদ্বুত করতে হবে। গবেষনা করতে হবে এসব ফলের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কৃষকদের কি করতে হবে। কিটনাশক নয় অর্গানিক পদ্ধতিতে এসব ফল আবাদের দিকটি বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দুর্নীতির মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান-বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বগুড়ায় গ্রামে সর্বহারা পার্টির পোষ্টারে গ্রাম ভিত্তিক জনযুদ্ধের ডাক, আতংক উদ্বেগ
হুতি আক্রমণের বার্ষিকীতে সংহতির আহ্বান আমিরাত নেতাদের
৯ বছর পর দেশে ফিরে স্ত্রীকে পেলেন ঝুলন্ত অবস্থায়
চীনে জন্মহার হ্রাস, অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা
বিএনপিকে ধুয়ে দিলেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল
যুক্তরাজ্য-ইউক্রেন ১০০ বছরের ‘যুগান্তকারী’ চুক্তি
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বাংলাদেশিরাও
কেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি ফারিয়া?
বাসের ধাক্কায় মীরসরাইয়ে তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
তাপমাত্রা কমে বাড়বে শীত
এলএন-এর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, কলম্বিয়ায় শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত
ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি হলেন ইউসুফ হোসেন
ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছিল মোটরসাইকেল আরোহীর চূর্ণ-বিচূর্ণ লাশ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাই আজকের বাংলাদেশ- কক্সবাজারে শিল্প উপদেষ্টা
অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল
গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ
নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮
পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি
মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’