সূর্যের দেখা মিললেও কমেনি শীতের তীব্রতা
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পিএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পিএম
ঠাকুরগাঁও জেলা হিমালয়ের পাদদেশের জেলা হওয়ায় প্রতি বছর শীতের তীব্রতা বেশি হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও নভেম্বর মাসে শীতের আমেজ দেখা দেয়। দিন যতই যায় ততই কমে সূর্যের উত্তাপ এবং বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা।
এদিকে ডিসেম্বর মাসের শুরুতে হালকা কুয়াশা ও হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকলেও হঠাৎ করে গত সোমবার রাত ৯টা চারদিক থেকে নেমে আসে ঘন কুয়াশা। নিমিষে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে রাস্তাঘাট ও দোকানপাট সহ সর্বত্র। দ্রুত গামীর যানবাহন গুলোর গতি থেমে যায়। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। সন্ধার পরপই বাজারগুলো জনশূণ্য হয়ে পড়ছে।
তবে আজ বুধবার দুপুর ১২টায় সূর্যের দেখা মিলেছে কিছু সময় তবে সূর্যের তাপ না থাকায় তাপমাত্রার কোন পরিবর্তন হয়নি। উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ঠান্ডা ও কুয়াশা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সামনে ১০ ফুট দূরেও রাস্তা দেখা যায় না। হাই ভোল্টেজের হেড লাইট জ্বালিয়েও রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেছে কেউ কেউ। কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারণে হঠাৎ করে বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। হঠাৎ কুয়াশার কারণে আগাম আলু চাষীরা পড়েছে বিপাকে।
রাস্তায় চলাচল কারী হানিফ কোচের চালক ফজলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন গাড়ি চালিয়ে আসছি। হঠাৎ করে চারদিক ঘিরে কুয়াশায় আচ্ছাদিত হতে কোনদিন দেখিনি।জীবনে প্রথমে সোমবার রাতে দেখেছি এবং আতংকিত হয়ে পড়ি। এদিকে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির ন্যায় কুয়াশা ঝড়ে। এ সময় হাড় কাপুনি শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজে যেতে না পেরে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে নিম্ন আয়ের মানুষের।
সালন্দর কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু হাসান ত্বোহা বলেন, এটা কেয়ামতের লক্ষন। এভাবেই একদিন সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। সূর্য পশ্চিম আকাশে উঠবে। ঘন ঘন ভূমিকম্প হবে। সেজন্য বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার বিকল্প নেই।
অটো চালক নুরুল হক ঘটক বলেন,কুয়াশার ঘনত্ব এতই বেশি ছিল যে যানবাহনের হেডলাইটও কাজ করছিল না। লাইটের আলো ১০-১৫ গজ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারছিল না। কুয়াশা কারণে সড়কে গাড়ি চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কায় ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে বাধ্য হই চালকরা। ট্রাক চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জীবনে অনেকদিন গাড়ি চালিয়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ কুয়াশায় রাস্তাঘাট আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে দেখেনি। তাই রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করি। ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রতিনিয়ত প্রায় ৪-৫শ জনের উপরে রোগী ভর্তি থাকে। শীতের সময় রোগীর বেশি চাপ তুলনামূলক বেশি। তবে এবার আগের মতোই রোগীর চাপ থাকলেও বর্তমানে বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি।
হাসপাতালটিতে ৪০ শয্যার শিশু ওয়ার্ড হলেও বুধবার রাত ১১ টার দিকে ১৩০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি ছিল। আসন সংখ্যার তিন থেকে চার গুণ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিক সীমা আকতার জানান, প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন কমছে। বার্ষিক পরীক্ষা তাই কোন মতে শিক্ষার্থীদৈর ধরে রাখা হয়েছে। সদর উপজেলার কুজিশহর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মামুন হক বলেন, ঠান্ডার কারণে সন্তান নিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছি। হাসপাতালে এতো শিশু রোগী যে তিল ধারণের ঠাই নাই। তারপরও সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করি।
হাসপাতালের সিনিয়র শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে আসন সখ্যার চাইতে ৩/৪ জন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে আমরা হিমসিম খাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন,এই সময় নবজাতক শিশুদের ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। তাদের পরণের কাপড় ঘন ঘন পাল্টে দিতে হবে যাতে প্রসাব করে কাপড় ভিজিয়ে রেখে ঠান্ডা না পায়। শিশুদের পুষ্টিকর তাজা খাবার খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া,শ্বাসকষ্ট থেকে যেন নিউমোনিয়া না হয় সেজন্য আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলায় কোন আবহাওয়া অফিস নেই। তাই দিনের তাপমাত্রার সঠিক হিসাব জানা যায় না। তারপরও পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে আকাশে মেঘ থাকায় সোমবার রাতে হঠাৎ কুয়াশায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ মাসে আরো কয়েকটি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে বাড়বে শীতের তীব্রতা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম আমাদের দৈনিক ইনকিলাব জেলা সংবাদদাতা মাসুদ রানা পলক এর সাথে কথা হলে জানান, সোমবার রাতে থেকে হঠাৎ কুয়াশার তীব্রতার কারণে আগাম আলু চাষীদের কুয়াশার ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এতে আলু উৎপাদন খরচ এ বছর বাড়ার আশংকা রয়ে গেছে। তাই কৃষকদের শীত সহনশীল পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা শীত সহনশীল পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার তেমন সুযোগ নেই।
জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, আমরা চাই এ জেলার শীতার্ত মানুষকে উষ্ণতা দিতে। তাই ইতোমধে ঠকুরগাঁও জেলার জন্য ৮০ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেলে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অনুপ্রবেশকারীদের টার্গেট নরসিংপুর সীমান্ত!