বিলুপ্ত তাল গাছ, এখন আর দেখা মেলে না প্রকৃতির সৌন্দর্য বাবুই পাখি
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ এএম
"বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি, ঝড়ে।"
বাংলা কবিতার বিখ্যাত কবি রজনীকান্ত সেনের বাবুই পাখি ছড়াটি পাঠ্য পুস্তকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ তাল গাছ নিয়ে লিখেছিলেন,
"তাল গাছ এক পায় দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে,
উঁকি মারে আকাশে। মনে সাধ কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়
একেবারে উড়ে যায়, কোথা পাবে পাখা সে? "
কালের বির্বতনে চাপা পড়ে যায় জনপ্রিয় এই কবিতা। সেই সাথে প্রাকৃতিক পরিবর্তনে অনেকটাই হারিয়ে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য বাবুই পাখি। এখন আর যত্রতত্র নজরে পরে না বাবুই পাখির বাসা। শোনা যায় না চৈত্রের কাঠফাঁটা দুপুরের বাবুই পাখির সেই কিচিরমিচির শব্দ। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসে, বাবুই পাখির প্রধান আস্তানা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে বিলুপ্তি প্রায় বাংলার ঐতিহ্য তাল গাছ।
এই বাবুই দেখতে অনেকটাই দৃষ্টিনন্দন। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। তাদের বাসা তৈরির শৈল্পিকতা নজর কাড়ার মতো। নিজেদের ঘর সাজাতে তাদের শৈল্পিকতার যেন কোনো জুড়ি নেই। কালের বিবর্তনে প্রকৃতি থেকে তাল গাছ অনেকটাই হারিয়ে যাওয়ায় তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা যেন আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির এই বাসা শিশু কিশোরদের খেলার জন্যও ছিল বিখ্যাত। কিন্তু এক সময় প্রকৃতি দাবড়ে বেড়ানো এ পাখিগুলো কালের আবর্তনে বিলুপ্ত প্রায়।
জানা যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন পথে প্রান্তরে বাড়ির চারপাশ কিংবা পুকুর পাড়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলো প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাসহ বাড়ির ঘর নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হত। তাল গাছ না থাকায় বর্তমানে খেঁজুর গাছে বাবুই পাখিকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। উপজেলার গালা ইউনিয়নের আলমদী এবং সাখিনী গ্রামেই রাস্তার পাশে দেখা মেলে গুটি কয়েক তালগাছ। সেখানেই দেখা যায় শৈল্পিক দক্ষতায় কয়েকটি বাসা বেঁধেছে বাবুই পাখি। পাশেই কয়েকটি খেঁজুর অপরিষ্কার খেঁজুর গাছেও বেশ কয়েকটি বাসা দেখা যায় এবং বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসে কানে। দেখা যায় তাদের খুনসুটি অপরূপ দৃশ্যও।
সাখিনী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের সময়ে যে পরিমাণ তালগাছ ও নারিকেল ছিল, এখন তা নেই। বাবুই পাখির আসল ঠিকানাই ছিল তাল গাছ। এখন তাল গাছ নেই, তাই বাবুই পাখির সেই কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায় না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রাণীবিদ ডা. মোঃ জহুরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, কালের বিবর্তনে তালগাছ, নারিকেল গাছ ও খেঁজুর গাছ কমে যাওয়াসহ বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে বাবুই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। দিনদিন বাবুই পাখিসহ সকল শ্রেণির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি ও কীট-পতঙ্গ পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে এবং অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে। এগুলো সংরক্ষণে এখনই আমাদের সকলের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. তৌহিদুজ্জামান খান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দেশে আগে প্রচুর পরিমাণে তাল ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই তাল এখন অনেক কম। তবে এলাকা ভেদে অনেক এলাকায় এখনও বেশ তাল গাছ দেখা গেলেও তুলনামূলক কম। ফলে বাবুই পাখির আশ্রয় স্থলের অভাবে এ পাখিটি অনেক এলাকায় আগের মতো দেখা যায় না। তাই আমাদের পারিবারিক চাহিদা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অবশই তালগাছ রোপনে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। আমরাও চেষ্টা করছি কিভাবে বিলুপ্তি প্রায় ফলজ গাছগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ
আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম
লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা
দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা
সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত
ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল
যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস
নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে
প্রশাসন সংস্কারে কঠোর হতে হবে
অসভ্য নগরীতে পরিণত ঢাকা
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা
সমুদ্রে ক্ষয়যোগ্য শক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে গাড়িতেও
উৎসবে আতশবাজি নিষিদ্ধে হাজারও মানুষের আবেদন
বাথরুমের নাম করে গয়না নিয়ে পালালেন কনে
অর্থ, রসিদ বই নিয়ে পালিয়ে গেল ইসকনের কর্মী
পণবন্দীর ভিডিও প্রকাশ হামাসের ইসরাইলে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ