খুলনা জেলার দক্ষিণে কয়রা উপজেলা। এই উপজেলার ঘেঁষে রয়েছে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী। একসময় এ নদী দিনে বহু লঞ্চ চলাচল করতো। দক্ষিণের প্রয়োজনীয় নিত্যপন্য আনা-নেওয়া হতে নদী দিয়ে। কিন্তুে এখন আর সেই সব বড় বড় লঞ্চের দেখা মেলে না। এই নদীগুলোর ভুতল অনেকটাই উচু হয়েছে। জেগে উঠেছে বালু চর। ফলে জোয়ারে কিছু ভারী নৌযান চললেও ভাটায় চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান নৌ সংশ্লিষ্ঠরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নামের দুটি নদী রয়েছে। এই নদী দুটিতে কার্গো, লঞ্চ, ট্রলার সকল নৌযান চলাচল ঝুকিতে রয়েছে। বিশেষ করে শাকবাড়িয়া নদীতে খাশিটানা চর, জোড়শিং চর, ফুলতলা চর, গড়িয়াবাড়ি চর, পবনা ও কালিবাড়ি নামক স্থানগুলিতে নদীর মধ্যে চর জেগেছে। এসব চরের কারণে লঞ্চ ও কার্গো জাহাজ এমনকি ভাটার সময় ট্রলারও পর্যন্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া কপোতাক্ষ নদীতে একই অবস্থা থাকায় গোবরা, কাঠমারচর, মেদেরচর ও লোকার চর নামক জেগে ওঠা চরের কারণে নৌ চলাচল বন্ধ হওয়ার পথে।
বিষয়টি খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গত ২০২৪ সালের ৪ঠা জুলাই জেলা বালুমহল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আলোচনা ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্তের হয়। আইলা কবলিত এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব মোঃ রুহুল আমিন একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি প্রদান করেন, যার স্মারক নং ৩৪৮/১(৫)। অপরদিকে জেলা ডেপুটি কালেক্টর, খুলনা গত ২০ অক্টোবর ভুমি মস্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বালু ও মাটি উত্তোলনের প্রস্তাব চেক লিষ্ট অনুযায়ি কয়রা উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবরে পত্র প্রেরণ করেন, যার স্মারক নং ১৩৪১। জানাযায়, গত ৬ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ( ভুমি) রুলি বিশ্বাস কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর জেগে ওঠা চরের বর্ননা দিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং একটি কমিটি গঠন করেন। সহকারী কমিশনার (ভুমি), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা কৃষি, মৎস্য কর্মকর্তা ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশেষ করে বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা ১৬ আগষ্ট ২০১৮ তারিখের ১৫ অনুচ্ছেদ মোতাবেক উপজেলা সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন করার রেকর্ড রয়েছে। উক্ত কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল ১৩-১৪/২ ও ১৪/১ বেড়িবাধের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য লোকাল বালু উত্তোলনে দুটি নদীর ভরাট চর উল্লেখ করেন। এসব চর হলো, কপোতাক্ষ নদের লোকার চর, কাঠমারচর, মেদের চর গোবরা চর এবং শাকবাড়িয়া নদীর জোড়শিং চর, কাটকাটার চর, গুড়িয়াবাড়ির চর, পবনা ও কালিবাড়ির চর হতে বালু উত্তোলন করা যাবে। বিষয়টি নির্ভর করছে উক্ত কমিটির প্রতিবেদনের উপর।
একাধিক সূত্রে জানাযায়, দেশের সর্ব দক্ষিণে আইলা কবলিত কয়রা উপজেলার চারিপাশে নদী থাকার কারণে এ উপকুলের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে। সিডর, আইলা থেকে শুরু করে ফনি পর্যন্ত প্রতিটি প্রলয়ঙকরী ঝড়ের কবলে পড়ে মানুষ দিশেহারা হওয়ায় দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের দাবি, "ত্রাণ চাইনা, চাই টেকসই বেড়িবাধ"। বর্তমানে কয়রা উপজেলার দক্ষিন বেদকাশিতে চলছে জাইকার অর্থায়নে বেড়িবাধের কাজ। সে কারণে জনস্বার্থে ও মানুষের জীবন নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করার লক্ষ্যে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে উল্লেখিত চরগুলি ইজারা দিয়ে জাইকার বেড়িবাধ নির্মানে সহায়তা করা হলে আগামী ১শ বছরের জন্য দক্ষিণ জনপদের মানুষ নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবে বলে এলাকাবাসি মনে করেন।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা সুজনের সভাপতি মোস্তফা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় সময় দঃবেদকাশি ইউনিয়নের মানুষ পাউবোর বেড়িবাধের ভাংনের কবলে পড়ে। এমনকি নোনা পানির কারণে বহু মানুষ গৃহ হারা হয়েছে। তাছাড়া ঝড় আসলেই তাদের ভয় থাকে কখন নোনা পানি আসবে। সে কারণে নদীর মধ্যস্থলে জেগে ওঠা চরের বালু বা মাটি দিয়ে বাধ নির্মাণ করা হলে একদিকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে বেড়িবাধ নির্মান হবে।