গাজীপুরের শ্রীপুরে নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর মরদেহ তিনতলা ভবনের নিচে আরসিসি ঢালাই করে পুতে রাখা হয়েছে ঘাতক স্বামীর এমন তথ্যে ব্যর্থ অভিযান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় র্যাব-১ ও শ্রীপুর থানা পুলিশ পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা এলাকায় আব্দুল লতিফের নির্মানাধীন বহুতল ভবনের নিচ তলার পেছনের অংশে আরসিসি ঢালাই ভাঙ্গার পর ঘাতক স্বামী এবং বাড়ির মালিককের যোগ সাজসে পুতে রাখা স্হানে মেলেনি নিখোজ নারীর মরদেহ। এ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ও স্থানীয়দের মধ্যে ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়েছে। নিহত পোশাক কারখানার শ্রমিক সুমাইয়া (১৯) কিশোরগঞ্জ জেলর ইটনা উপজেলার আমিনগঞ্জ গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার কন্যা। মা বাবার সঙ্গে শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামের জনৈক গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় আউটস্পেস নামক কারখানায় চাকুরী করতেন।
র্যাব জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় মোছাঃ তাছলিমা আক্তারের বাদী হয়ে তার নিখেজ মেয়ে মোছাঃ সুমাইয়া আক্তারের স্বামী উপজেলার কাওরাইদ গ্রামের হানিফ (৪০) ও শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার কাকরকান্দি গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে মো. জয়নাল আবেদীন (৩৮) এর নাম উল্লেখ করে ৩/৪ জনের নাম অজ্ঞাত হিসেবে মামলা করা হয়। থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্প মামলার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের একপর্যায়ে আসামী জয়নাল আবেদীনকে গ্রেফতারের পর এক পর্যায়ে সুমাইয়ার স্বামী মো. হানিফকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব -১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক স্বামী তার ভাড়া বাড়ির মালিক বেড়াইদেরচালা এলাকায় আব্দুল লতিফ ও অপর বন্ধু আনিসকে সঙ্গে নিয়ে সুমাইয়াকে হত্যার পর ওই বাড়ির তিন তলা ভবনের পেছনে একটি স্টোর রুমের নিচে দুই স্তরের আর সি সি ঢালাই করে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান।
পরে র্যাব বাড়ির মালিক লতিফ ও আনিসকেও গ্রেফতার করেন। ঘাতক স্বামী এবং বাড়ির মালিককের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ও শ্রীপুর থানা পুলিশের প্রায় তিন ঘন্টা নিষ্ফল অভিযানে লাশের সন্ধান না পাওয়াই হতাশ নিখোঁজ সুমাইয়ার পরিবার। ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে খুব শীঘ্রই লাশের সন্ধান পাবেন বলে জানান র্যাব সদস্যরা। নিহতের ভাতিজা হৃদয় জানান,প্রায় দুই বছর পূর্বে সুমাইয়ার বিয়ে হয় হানিফের সাথে। বিয়ের পর সুমাইয়া ও তার পরিবার জানতে পারে হানিফ মেয়েদেরকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করায় । হৃদয় জানান, ঘাতক হানিফ গার্মেন্টস কর্মী ও সুন্দরী মেয়েদের ফুসলিয়ে-পটিয়ে প্রেম কিংবা বিয়ে করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতো। তার আত্মীয় সুমাইয়াকেও একই ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতে গিয়ে অনেক ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা এর প্রতিবাদ করলে সুমাইয়ার ওপর চালাতো নানা ধরনের নির্যাতন। এভাবেই কেটেছে প্রায় দেড়টি বছর। প্রায় পাঁচ মাস পূর্বে সুমাইয়া নিখোঁজ হবার পর স্বামী হানিফকে সন্ধেহ হলেও সে থাকে ধরাছুয়ার বাইরে। এক সংবাদ কর্মীর মাধ্যমে অনুসন্ধানের পর অবশেষে তারা মামলা করে র্যাব এর সহায়তায় সুমাইয়াকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছে। তবে লাশের সন্ধান না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবার। মরদেহ মাটি চাপা দেয়ার খবরে আশপাশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অনেক উৎসুক জনতা ভিড় করছে। এমন অমানবিক নিষ্ঠুরতার খবরে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন এ বিষয়ে পোড়াবাড়ি র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার জুন্নুরাইন বিন আলম জানান,এ হত্যা কান্ডের মূল আসামীদের যেহেতু গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। লাশের সন্ধানও পাবো আশা করছি। তিনি আরও জানান, তদন্ত এবং অভিযান সফলতার স্বার্থে সব কিছু বলা যাচ্ছেনা। শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল , আসামির দেখানো মত স্থানে মনদেহ উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।