ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩ পৌষ ১৪৩১
দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার ভাগিনা প্রয়াত নেত্রী চকলেট আপার জ্যৈষ্ঠ পুত্র ডন

শুদ্ধি অভিযানের শুরুতে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদকের পদ স্থগিত, এখন টপ অব দ্যা টাউনে পরিণত

Daily Inqilab মাহফুজুল হক আনার

০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৭ পিএম | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম

বেগম খালেদা জিয়ার শৈশবের শহর দিনাজপুর জেলা বিএনপি-তে কি হচ্ছে ? মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত জেলা বিএনপি’র নেতৃত্বদান দানকারী বেগম খুরশিদ জাহান হক চকলেট আপার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারনে রাতের অন্ধকারের ভোট ছাড়া অন্য কেউ দাড়াতেই পারেনি। ২০০৬ সালে খুরশিদ জাহান হকের মৃত্যু দিনাজপুরের মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতে থাকে তাকে। এর পর শুরু হয় ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের একনায়কতন্ত্রের অধ্যায়। জুলাই আগষ্ট বিল্পবে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের বিদায়ের পর দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র হাতে গোনা কয়েকজন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি, দখলবাজীর অভিযোগ উঠে। দিনাজপুরের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখা চকলেট আপার জৈষ্ঠ পুত্র শাহারিয়ার আক্তার ডন দিনাজপুরে এসে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ৩১ দফা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামেন। স্বস্থি ফিরে আসে মাঠ পর্যআয়ের বিগত দিনে নিপীড়িত নির্যতিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বস্তি থেকে দোকান সবখানে ৩১ দফা লিফলেট বিতরন করে বলেন তারেক জিয়া ঘোষিত দফাগুলি পড়ে দেখুন এর মধ্যেই আছে গণতন্ত্র,উন্নয়ন ও গর্বিত জাতি হিসাবে মাথা উচু করে দাড়ানোর পথ। এরই মধ্যে গত ২ জানয়ারী রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত পত্রে বিভিন্ন অভিযোগে স্থগিত করা হয় জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক তরুন নেতা বখতিয়ার আহমেদ কঁচির সদস্য পদ। ডন মামা হিসাবে পরিচিত শাহারিয়ার আক্তার ডন এর আগমন ও বিভিন্ন অভিযোগে জেলা বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান বিএনপিসহ সর্বস্তরে টগ অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে। কেননা দিনাজপুর শহরকে ৪ টি ভাগে ভাগ করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এমনকি মাদক ব্যবসার সাথে জেলা বিএনপি’র অনেকের নাম জড়িয়ে আছে। যা ইতিমধ্যেই দলের কর্ণধারের ধারে নজরে দেয়া হয়েছে।

 

বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন বেগম খুরশিদ জাহান হক দীর্ধকাল জেলা বিএনপি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দিনাজপুরের মাটি ও মানুষের কন্যা পতুল (খালেদা জিয়া’র) সহযোগিতায় উন্নতমানের দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, দিনাজপুর, জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণাজ্ঞরুপে চালু করাসহ অসংখ্য স্থায়ী উন্নয়ন ছাড়াও স্কুল কলেজ রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটান। দিনাজপুরের মানুষের ধারনা চকলেট আপা থাকলে দিনাজপুর আরো এগিয়ে যেত। তাই এই অঞ্চলের মানুষের কাছে খুরশিদ জাহান হক এখনও মাথার মুকুট হয়ে আছে। পরবর্তীতে দিনাজপুরে বিএনপি’র মধ্যে মার্শেল ম্যান থেকে অনেক নেতা কর্মীর আবির্ভাব হয়েছে। যে কোন কারনেই হোক খালেদা বা চকলেট আপার পরিবারের কোন সদস্য বা নেতা এই হাল ধরতে পারেননি। সর্বশেষ দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। সেই কাউন্সিলে সাধারন সম্পাদক হিসাবে অপেক্ষাকৃত তরুন নেতা বখতিয়ার আহমেদ কচি, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মুরাদ আহম্মেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোকাররম হোসেন, সাংগাঠনিক সম্পাদক প্রয়াত সাধারন সম্পাদকের স্ত্রী হিরা, আমিনুল ইসলাম মুন্না ও আনিসুর রহমান বাদশা নির্বাচিত হোন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিএনপি নেতা জানান, এদের ১/২ নেতা সরাসরি ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের দিনাজপুরের একনায়ক হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি’র আর্শিবাদপুষ্ট। আগষ্ট পূর্ব এক নেতা গ্রেফতার হোন ইকবালুর ডান হাত ও ক্যাশিয়ার এডভোকেটের বাসা থেকে। জুলাই আগষ্ট বিল্পবের পর দিনাজপুর ষ্টেশনরোডে মিলেনিয়াম মার্কেটে অফিস স্থাপন করেন জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি। যা সাধারন মানুষের কাছে দূরের কথা বিএনপি, যুবদলসহ অংগ সংগঠন সমূহের নেতা কর্মীদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখ পড়তে হয়। ৫ আগষ্টের পর মিলেনিয়াম মার্কেটের সামনে ষ্টেশন চত্বরে ছাত্রদলসহ সাধারন মানুষ আটক করে হুইপ ইকবালুর রহিমের মদদপুষ্ট ঠিকাদার পান দোকানদার থেকে মাত্র ৫ বছরে সিআইপি বনে যাওয়া শাহ আলমকে। দিনাজপুর শহরে সেসময় সবচেয়ে আলোচিত এই ঘটনায় কোটি টাকার বানিজ্যে শাহ আলমকে মুক্ত করে দেয়া হয়। গোপালগঞ্জ এলাকার এক মেম্বার বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতার কাছে নগদ ২০ লক্ষ টাকা নেয়া ছাড়াও আছে অগুনিত চাঁদা বাজি, দখলদারী’র অভিযোগ। দিনাজপুরের মানুষের কাছে হাতে গোনা কয়েকজন বিএনপি নেতা দৃর্শমান আতঙ্ক। বিষয়টি আপামর সাধারন মানুষ এমনকি বিএনপি শীর্ষস্থানীয় নেতারাই মেনে নিতে পারছিলেন না।

 

তবে বখতিয়ার আহমেদ কচি’র অনুসারীরা পদ স্থগিত করার ঘটনাকে সাধারনভাবে মেনে নিতে পারেনি। তাদের আওয়ামী সরকারের আমলে জেল জুলুম নির্যআতনের শিকার হয়েছিল এই তরুন নেতা। সেসময়ে আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এই নেতা। অন্যান্যদের কথা আগে ভালই ছিল কিন্তু ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর সে ও তার অনুসারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ রয়েছে শহরে উত্তর দক্ষিন পূর্ব ও পশ্চিম ভাগ করে নিয়েছিল হাতে গোনা কয়েকজন নেতা। যারা চাঁদাবাজি আর দখলদারী করে ৫ মাসে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এক্ষেত্রে তারা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন তরুন নেতা সদ্য স্থগিত হওয়া বখতিয়ার আহমেদ কচিকে। কিন্তু চাঁদা বাজি ও দখলদারীর বিষয়টি সকল শ্রেনীর ও পেশার মানুষের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। এছাড়া এসবের কিছু কিছু বিষয় ছিল দিবালোকের মত সত্য।

 

এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসে দিনাজপুরে আসেন বেগম খুরশীদ জাহান হক এর জৈষ্ঠ পুত্র শাহারিয়ার আক্তার ডন। জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের হাজার হাজার নেতা কর্মি তাকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মাধ্যমে বরণ করে নেন। তিনি তার জবাবে বলেন রাজনীতি নয় এসেছি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা জনগনের দোরগোয়ারে পৌছে দেয়ার জন্য। আওয়ামী সরকারের নিপীড়ন নির্যআনের শিকার মায়ের কাছ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার পরও যে মানুষটি দেশের জনগনের কথা চিন্তা করে প্রবাস থেকেই গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তার কথা পৌছে দেয়ার জন্য। ডন বিভিন্ন বাজারে বাজারে বস্তিতে যেয়ে তারেক রহমানের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেন। তিনি বলেন ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের মত নয় প্রকৃত গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপি’র লক্ষ্য। তিনি একথাও বলেন, তারেক জিয়া বলেছেন জনগন যদি ভালবাসে এবং নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিএনপিকে বেছে নেয় তাহলেই বিএনপি সার্থক হবে। ডন বলেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মাদককারবারী যেই হউক তাদের সাথে বিএনপি’র কোন সম্পর্ক নেই।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বোরহানউদ্দিনে আসামি ধরতে গিয়ে হামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা আহত
রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন
ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি
গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
আরও

আরও পড়ুন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ, নয় বছরের অধ্যায়ের সমাপ্তি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ, নয় বছরের অধ্যায়ের সমাপ্তি

তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্প, নেপালে অনুভূত কম্পন

তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্প, নেপালে অনুভূত কম্পন

গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, নিহত আরও প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, নিহত আরও প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি

সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এলেন পর্তুগিজ তরুণী

সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এলেন পর্তুগিজ তরুণী

বোরহানউদ্দিনে আসামি ধরতে গিয়ে হামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা আহত

বোরহানউদ্দিনে আসামি ধরতে গিয়ে হামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা আহত

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য: ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ই সমাধান

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য: ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ই সমাধান

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ

মিনেরোকে উড়িয়ে কোপা দেল রের শেষ ষোলোয় রিয়াল

মিনেরোকে উড়িয়ে কোপা দেল রের শেষ ষোলোয় রিয়াল

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া

রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন

রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন

ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি

ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি

আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান

আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান

গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন

গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন

লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব

লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব

খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার

পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার

১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান

হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান

বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে

বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে

তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল

তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল