গণহত্যাকারীদের বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে: সারজিস
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৭ পিএম
গণহত্যাকারীদের বিচারিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, আমাদের লড়াই বাংলাদেশের জন্য, মানুষের জন্য। আমরা যেন কোনো দল, মত বা গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি না হয়ে যাই। দেশের মানুষ অসহায় হয়ে শেখ হাসিনার কাছে জিম্মি হয়েছে। এতো কিছুর পরে দেয়ালে যখন মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে, তখন মানুষ মুক্তির আশায় জীবন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। কিন্তু আমাদের সম্ভাবনাকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। যেখানেই যাই, যার সাথেই কথা বলি, সবাই চায় গণহত্যাকারীদের বিচার। কিন্তু আজকে এই বিচারিক প্রক্রিয়াকে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে শাপলা চত্বরে শহীদ সিরাজের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত আস-সিরাজ সংগঠনের আয়োজনে ‘২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ও ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ, জুলাই বিপ্লবোত্তর আকাঙ্খা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে সারজিস এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, এখনো দেশ দোসরমুক্ত হয়নি। দেশের অনেক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দোসরদের মদদ দিচ্ছে। আমরা সংস্কারের কথা বলছি কিন্তু যারা এমন করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন কথা বলছি না। তাদের বিরুদ্ধে কথা না বলতে পারলে অভ্যুত্থানের কোনো সফলতা আসবে না। আজকে চাঁদাবাজি হচ্ছে, সিন্ডিকেট হচ্ছে, কারা করছে তাদের কথা কেন আমরা বলতে পারছি না। প্রত্যেকটা বাজারে চাঁদাবাজি জন্য পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে সরকারকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ যদি পোশাকের শপথ সামনে নিয়ে চলে তাহলে আমরা মনে করি দেশের অর্ধেক সমস্যা অটোমেটিক সামাধান হয়ে যাবে। তাদেরকে খুনি হাসিনা একটি প্রতিষ্ঠানের মতো সমুন্নত না রেখে ক্ষমতায় থাকার টোল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এই অভ্যস্থতার কারণে, জিনে দাসত্ব মিশে যাওয়ার কারণে, অভ্যুত্থানে তাদের এতো খারাপভাবে ব্যবহার করার পরও আজকে সবাই নয়, কিন্তু অনেক পুলিশ সদস্য দেখছি যাদের এখনো ওই শিক্ষাটি হয়নি। যারা এখনো বিন্দুমাত্র নিজেদের আত্মসম্মান নিয়ে চিন্তা করছে না, যারা এখনো এই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নিজেদেরকে বিভিন্ন মতের কাছে, দলের কাছে, গোষ্ঠীর কাছে নিজেদেরকে সপে দিচ্ছে। তারা আজকের কথা চিন্তা করছে না। তারা চিন্তা করছে আগামীতে কে তাদেরকে ফেভার করে একটি ভালো চেয়ারে বসাতে পারবে। ঠিক একই জিনিস আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দোসররা, যারা মাঠ পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে, জাতীয় পর্যায়ে খুনি হাসিনাকে পেট্রোনাইজ করছে, তাদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা প্রত্যক্ষ মদদে টাকার বিনিময়ে না হয় ম্যান পাওয়ার সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে প্রটেকশন দিচ্ছে।
সারজিস আলম বলেন, বছরের পর বছর ধরে খুনি হাসিনার মাধ্যমে নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছে এদেশের মানুষ। তার ক্ষমতার পিপাসার কাছে জিম্মি ছিল মানুষ, গোলাপগঞ্জের কাছেও জিম্মি হয়ে ছিল এদেশের মানুষ। তাই দেশের প্রত্যেকটি মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। খুনি হাসিনার দোসররা মাদরাসার ছাত্রকে দেখলে টার্গেট করে গুলি করত। তাই ছাত্ররা পাঞ্জাবি-পাজামা না পড়ে টি-শার্ট গায়ে দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। শুধু মাদরাসা নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। যারা হাসিনার দোসরদের ভয়ে আন্দোলনে যেতে পারেনি তারা তাদের স্ত্রী সন্তান এবং স্বজনদের আন্দোলনে যেতে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এত জীবন দেওয়ার, রক্ত দেওয়ার আকাঙ্খা কোন ভাবেই পূরন হওয়ার নয়।
সারজিস বলেন, খুনি হাসিনা হাজার হাজার পরিবারকে বিগত ১৬ বছরে উৎখাত করেছে। সে একদিনে খুনি হাসিনা হয়নি। যাকে টার্গেট করেছেন তাকেই মেরেছে। আগামীদিনে আমরা কাউকে এমন হতে দিব কি না, তা আমাদের ওপর নির্ভর করবে। খুনি শেখ হাসিনা যা করেছে তার ফলাফল ২৪ এর অভ্যুত্থান। কেউ যদি ভুল পথে হাঁটেন তাদেরও পরিণতি এমন হবে। আমরা কাউকে ছাড়বো না, তাই বুক টান করে প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের এ লড়াই বাংলাদেশকে সামনে রেখে হোক, মানুষের জন্য হোক।
সেমিনারে আস-সিরাজ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুফতি মুহিববুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য লুৎফর রহমান, বাকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. ফজলুল হক ভূইয়া, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, আশরাফ মাহাদী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা লুৎফর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মুফতি মাহাবুল্লাহ, গণতান্ত্রিক সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক সাইদুর রহমান, ডা. মাওলানা আব্দুল বারী, অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি চৌধুরী নাসির আহাম্মদ প্রমুখ।
এর আগে ১৫টি শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনুদানের অর্থ বিতরণ করেন অতিথিরা। পরে অতিথিদের বক্তব্য শেষে জাগরণী সংগীতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় এই সেমিনার। এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরায় ট্রাক চাপায় মোটর সাইকেল চালক নিহত
শেখ হাসিনার আমলে সীমান্তের কাঁটা তারে লাশ ঝুলন্ত, এখন পতাকা বৈঠক হয়--শাকিল উজ্জামান
পেকুয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় মাওলানা ইমতিয়াজ
থানা থেকে ছিনাইয়া নেওয়া যুবদল নেতা গ্রেফতার
শ্রীনগরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের ৩ কর্মী গ্রেপ্তার
মুকসুদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা, প্রতিবাদ জানালো আ.লীগ
নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ
এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান
শার্শা থানা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিকদের মিলন মেলা
মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা!
সোনারগাঁওয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫ দফা প্রস্তাবনা: পৃথক শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি
কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০
দেশের সংগ্রামের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
ভারতে চার বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার
পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন
তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ
দ্বিতীয় চালানে ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার টন চাল
গাঁজা সেবনের অভিযোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থীকে শাস্তি