বিশ্ববাসীকে করোনা মহামারির পর আবারও নাড়া দিচ্ছে এইচএমপিভি ভাইরাস। এই ভাইরাস ইতোমধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশে হানা দিয়েছে। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং সেই আক্রান্ত রোগী মারা গেছে। এতে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়াতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ( ১৬ জানুয়ারি ) বিকেলে 'আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা' এই স্লোগানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিনের নেতৃত্বে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হয়।
এ সময় এ ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। এ সময় বলা হয়, করোনা মহামারির সময় যেসব সতর্কতা নেয়া হয়েছিল একই ধরনের পদক্ষেপ নিলে এ ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরা, ২০ সেকেন্ড সময় ধরে সাবান-পানি দিয়ে ভালোমতো ঘন ঘন হাত ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না-করা, আক্রান্ত রোগী থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগমস্থল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা, হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখে টিস্যু বা রোমাল দিয়ে ঢেকে নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
প্রচারণায় তারা আরও বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাস রয়েছে এমন বস্তু বা স্থান স্পর্শ করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেট লেগে থাকা স্থান যেমন দরজা-জানালার হাতল, লিফটের বাটন, গণপরিবহনের হাতল, চায়ের দোকানের চায়ের কাপসহ সন্দেহজনক স্থান স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। যেখানে সেখানে হাত দিয়ে স্পর্শ করে চোখে, মুখে ও নাকে সে হাত স্পর্শ করলে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে এসব নির্দেশনা প্রাত্যহিক কাজে মেনে চলতে হবে।
জানা গেছে, এইচএমপিভি ভাইরাস ২০০১ সালে প্রথম শনাক্ত হয়। তবে সম্প্রতি এটি সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। এটি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস। এটি শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাগে এবং নীচের অংশে সংক্রমণ ঘটায়। এ ভাইরাসে যেকোনো বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু, বয়স্ক এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম সম্পন্ন মানুষের জন্য ভাইরাসটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনিরোগ, সিওপিডি, অ্যাজমা ও ক্যান্সার এই ৬ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এ ভাইরাসের উপসর্গগুলো ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। এ ভাইরাসের সাধারণ উপসর্গের মধ্যে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্টের অসুস্থতা পরিলক্ষিত হয়। তবে এ ভাইরাসের গুরুতর দিক হলো মানবদেহে ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, উপজেলাবাসীকে এইচএমপিভি ভাইরাস বিষয়ে সচেতন করে তুলতেই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এই উদ্যোগ। এ প্রচারণা চলমান থাকবে। এ সময়টায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কায়িক শ্রমের পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।
তিনি বলেন, এ সময় সাধারণ সর্দিকাশি বা জ্বর হলেও কোনভাবেই অবহেলা করা চলবে না। সঠিক চিকিৎসা পেতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।