বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ এএম
বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিটেই চিকিৎসাধীন রোগীরা চরম মানবিক বিপর্যয়ের কবলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০২২-এর শেষ দিকে হাসপাতালের মূল ভবন থেকে মেডিসিন ইউনিটটি পাশে নব নির্মিত প্রশাসনিক ভবন হিসেবে নির্মিত একটি ৫ তলা ভবনে স্থানান্তরের পরে ইতোমধ্যে দু দফায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে। চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রী সহ হাসপাতাল কর্মীদের তরফ থেকে যৌক্তিক আপত্তিকে বিবেচনায় না নিয়ে সাবেক পরিচালকের এক গুয়েমীতে হাসপাতালটির সবচেয়ে বড়, মেডিসিন ইউনিটটি নতুন ভবনে স্থানান্তরের পরে চিকিৎসা ব্যবস্থাই চরম বিপর্যয়ে কবলে। এমনকি ইউনিটটি স্থানান্তরে আপত্তি জানানোয় মেডিসিন বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান কর্তৃপক্ষের রোষানলে পরে তদবির করে অন্যত্র বদলী হয়ে যান।
ভবনটির নকশা ও নির্মাণ পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট ছাড়াও ১টি বিশেষায়িত মেডিসিন ইউনিট স্থানান্তরের ফলে গত প্রায় ৩বছর ধরে রোগী ও স্বজনদের চরম ভোগান্তি এখন সব বর্ণনার বাইরে। এমনকি ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত বেডের চেয়ে মেঝেতেই রোগীর পড়ে আছে বেশী। মেডিসিন ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেড সংখ্যা মাত্র পৌনে ২শ হলেও সেখানে প্রতিনিয়ত রোগী থাকছেন ৭-৮শ পর্যন্ত।
এমনকি পুরো ভবনটিতে আলো বাতাস চলাচলের ব্যাবস্থা অপ্রতুল। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে ঐ পাঁচতলা ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ড সমূহে অনেকটাই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মূলত ১০তলা এ ভবনটির যে ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, নকশা অনুযায়ী তা প্রশাসনিক কাজেই ব্যবহ্রত হবার কথা। ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত আইসিইউ এবং ওপারেশন থিয়েটার হিসেবে ব্যবহারের কথা।
কিন্তু কতিপয় বিবেকহীন কর্তার একগুয়েমীতে মূল পরিকল্পনা থেকে সরে এসে চিকিৎসাধীন রোগীদের দূর্ভোগই শুধু বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমনকি নির্মিত ঐ ভবনটিকে মেডিসিন ওয়ার্ডে রূপ দিতে ইতোমধ্যে নকশা বহির্ভূতভাবে প্রায় ৩০টি জনালা সহ আরো বেশকিছু সংস্কার এবং পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে গিয়ে সরকারী কোষাগাড় থেকে বিপুল পরিমান অথ্য ব্যায় হয়েছে। নতুন করে ঐ ভবনটির শৌচাগার থেকে কমোড অপসারন করে সেখানে প্যান বসানোর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
এদিকে ৫শ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে নির্মিত বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি বিগত সরকার কোন ধরনের অবকাঠামো বৃদ্ধি না করেই ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করলেও তার জন্য কোন জনবল মঞ্জুরী হয়নি এখনো। এমনকি ৫শ শয্যার অনুমোদিত জনবলেরও কর্মরত আছেন সাড়ে ৩শ রোগীর জনবল। অথচ শণিবারও এ হাসপাতালটিতে ১৮শর ওপরে রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরমধ্যে এখন সবচেয়ে করুন অবস্থা মেডিসেন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটেরই। ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত দূর্গন্ধ আর অন্ধকারে সুস্থ মানুষেরও দমবন্ধ হবার অবস্থা। স্থানভাবে মাঘের শীতেও অনেক মুমূর্ষ রোগীরও ঠাই হচ্ছে মেঝেতে।
আবার মেডিসিনের পেয়িং বেড ও পেয়িং কেবিন এখনো মূল ভবনে রয়ে গেছে। ফলে এখানের চিকিৎসকদের রোগীদের দেখভাল করা সহ চিকিৎসা দিতে দুটি ভবনেই ছুটতে হচ্ছে। এমনকি এতেকরে মূল ভবনে পেয়িং কেবিন ও পেয়িং বেডে চিকিৎনাধীন মুমূর্ষ রোগীরা অনেক জরুরী সময় যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি নতুন ভবনের মেডিসিন ইউনিটের রোগীদের পথ্য আসছে ৩শ মিটার দুরের মূল ভবনের ৫ম তলা থেকে। ফলে খেলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলোÑবালুর রাস্তায় ট্রলিতে ছোট-বড় হাড়ি চাপিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিদিন তিন বেলা। পাশাপাশি মেডিসিন ওয়ার্ডে মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রীদের ক্লাস করার মত কোন কক্ষ না থকায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রীদের লেখাপড়া নিয়ে সংকট অব্যাহত রয়েছে। ক্ষুদ্ধ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়টি একাধিকবার কলেজ প্রিন্সিপাল ও পরিচালককে অবহিত করলেও এখনো সংকটের তেমন কোন সমাধান মেলেনি।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আইনগত জটিলতায় জড়িয়ে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় গনপূর্ত অধিদপ্তর এ ভবনটি নির্মানে ১০ বছরেরও বেশী সময়ে লেগেছে। করোনা মহামারীর শুরুতে তড়িঘরি করে ভবনটির কাজ শেষ করে সেখানেই ‘কোভিড-১৯ ওয়ার্ড’ চালু করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভবনটির ৬ষ্ঠ তলার নির্মান কাজ শুরু হয়েছে। যেখান ১শ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড চালু করার কথা রয়েছে।
মূল পরিকল্পনাকে এড়িয়ে নতুন ভবনটিতে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট চালু করায় সু চিকিৎসার নামে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীর ও মনের নিত্য নতুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারন রোগী ও স্বজনদের।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মশিউল মুনির-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, কেন কিভাবে মেডিসিন ওয়ার্ডটি প্রশাসনিক ভবনে স্থানন্তর করা হয়েছে, তা এখন বলে লাভ নেই। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি মেডিসি ওয়ার্ডটিকে পরিপূর্ণ ওয়ার্ডে রূপান্তর করে চিকিৎসাধীন রোগীদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে। অদুর ভবিষ্যতে নতুন ভবনটিতে রোগীর সু চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সম্ভব সবকিছু করার কথাও জানান তিনি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তারা সংস্কার শেষ করবে : মির্জা ফখরুল
ঘাটতি পূরণে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে: কবির উদ্দিন
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ডিবিসিসিআই’র নতুন সভাপতি মামুন, সেক্রেটারি রিসালাত
হামাস বন্দি তালিকা না দিলে যুদ্ধবিরতি স্থগিত : নেতানিয়াহু
কুলাউড়ায় পাওনা টাকা চাওয়ায় নারীকে পিটিয়ে হত্যা, আটক-১
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের '৯ম কর্ণেল কমান্ড্যান্ট' অভিষেক অনুষ্ঠিত
দ. কোরিয়ায় ইয়ুনের আটক বাড়ানোর পর আদালতে হামলা ও বিক্ষোভ
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প
ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ইসরাইলি বিমানবন্দর বন্ধ
৬০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বেচবে সরকার, পাওয়া যাবে যেখানে
লাইফ সাপোর্টে কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল
স্পেনের এনজিওগুলো ইলন মাস্কের বিরোধিতায় এক্স ছেড়ে যাচ্ছে
যে দেশ বা সমাজে ন্যায়বিচার নেই, সে জাতিকে ধ্বংস করে দেন আল্লাহ: আল্লামা মামুনুল হক
গাজায় প্রতিদিন ঢুকবে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ
যুদ্ধবিরতির আনন্দে গাজায় কর্মরত সাংবাদিকদের আবেগ-উল্লাস
ফের শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিলো আবহাওয়া অফিস
লিমায় স্প্যানিশ বিজয়ী ফ্রান্সিসকো পিজারোর মূর্তি পুনঃস্থাপন
আবারও পেছাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি
‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে’