৬ শতাধিক কৃষকের জমিতে সরকারি পেয়াজের বীজ গজায়নি, লোকসানের ঘানি টানছেন কৃষকেরা
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের বলাইকান্দি গ্রামের কৃষক বাচ্চু হোসেন। ৩৩ শতাংশ জমিতে রোপন করেছিলেন সরকারি ভাবে দেওয়া এক কেজি পেয়াজের দানা। সরকারিভাবে বিনামূল্যে পেয়াজের বীজ পেলেও চাষাবাদ করতে খরচ হয়েছে আরো ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু দুই মাসের মাথায় বীজ থেকে কলির বদলে গজিয়েছে জমিতে ঘাস ও আগাছা।
তাই বাধ্য হয়ে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নতুন করে চাষাবাদ করতে শুরু করেছেন তিনি। পেয়াজ চাষী বাচ্চু হোসেন বলেন, ‘সরকারি ভাবে যখন কৃষি অফিসের স্যারেরা পেয়াজের দানা আমাকে দেয়। তখন আমি বার বার তাদের বলেছিলাম, পেয়াজের দানা ভাল হবে কি না? স্যারেরা বলেছিল তখন, পেয়াজের দানা খুব ভাল হবে। ফলনও ভাল হবে। তাদের কথায় বিশ্বাস করে আমি সরকারি ভাবে দেওয়া এক কেজি পেয়াজের দানা আমি রোপন করেছি। কিন্তু দুই মাস হয়ে আসলেও আমার জমিতে কোন পেয়াজের কলি গজায়নি। গজিয়েছে ঘাস ও আগাছা। এখন নতুন করে বদলা কামলা দিয়ে জমি পরিষ্কার করছি। সরকারের কাছে আমার ক্ষতিপূরণ চাই। পেয়াজের জন্য যে ৪০ হাজার খরচ করেছি। তার ক্ষতিপূরণ চাই। একই গ্রামের আরেক পেয়াজ চাষী মোশারফ বেপারী। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ শতাংশ জমিতে সরকারি পেয়াজের বীজ রোপন করেছিলাম।
কিন্তু পুরো জমিই এখন ঘাসে ভরা। আমার জমিটি চকের মধ্যে খাঁনে থাকায় অন্যের জমির উপর দিয়ে কোন ট্রাক্টর নিয়ে নতুন করে যে চাষাবাদ করব, সেই পরিস্থিতিও নেই। এই বছর আমার জমিটা ফসল বিহীন কেটে গেল। আমি ধার দেনা করে পেয়াজের চাষাবাদ করেছিলাম। এখন দেনা পরিশোধ করবো কিভাবে সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। এওজ গ্রামের আরেক পেয়াজ চাষী মতিউর সরদার অস্করনী বলেন,‘ আমি ৪০ থেকে ৫০ টাকা খরচ করে কয়েক দফা জমি চাষ করে সরকারি পেয়াজের দানা রোপন করেছিলাম। আমার পুরো টাকাই পানিতে চলে গেছে। একটি দানাও গজায়নি। পুরো জমি খালি পড়ে আছে। সেখানে এতদিন ছিল জঙ্গল। গত সপ্তাহে জমিতে নতুন বদলা নিয়ে পরিষ্কার করেছি। এখন নতুন কোন ফসল চাষাবাদ করা যায় কি না সে চেষ্টা করছি। কিন্তু সরকারি পেয়াজের দানা রোপন এমন লোকসান গুনতে হবে, আগে বুঝতে পারলে কোনদিন সরকারি পেয়াজের দানা চাষ করতাম না। আমি সরকারের দাবি করছি, আমার যে ক্ষতি হইছে সেই ক্ষতিপূরণ সরকার আমাকে যেন দেয়। তাতে আমি লোকসানা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারব। - মাদারীপুর জেলার ৫ টি উপজেলার পেয়াজ চাষীদের একই ধরনের কথা। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গেল নভেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও কন্ট্রাক গ্রোস কৃষকদের মাধ্যমে কেনা হয় ৭ কোটি টাকার বারি-১, বারি-৪ ও তাহেরপুরী পেয়াজের বীজ। যা বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলার ১০৮২০ জন চাষির মাঝে দেয়া হয় বিনামূল্যে। এর মধ্যে মাদারীপুর জেলার ৬’শ কৃষককে দেয়া এই বীজ।
কিন্তু দুইমাস পেরিয়ে গেলেও পেয়াজের কলি নয়, জমিতে গজিয়েছে ঘাস আর লতাপাতা। চাষিদের অভিযোগ, ঠিকাদারের মাধ্যমে নিম্নমানের বীজ সংগ্রহ করে বিতরণ করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরো অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কয়েকজন কন্ট্রাক গ্রোস চাষী ও বিএডিসির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কোন ধরনের ল্যাব টেস্ট ছাড়াই পেয়াজের নিম্ন মানের বীজ সরবরাহ করা হয়। এরজন্য মূলত বীজ গজায়নি। ফরিদপুর অঞ্চলের কন্ট্রাক গ্রোস কৃষক নূরে আলম বলেন, ‘কন্ট্রাক গ্রোস পেয়াজের বীজের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সব কিছু জানে স্যারেরা। তারাই ভাল বলতে পারবে কিভাবে বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে।’ এই বিষয়ে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যে পেয়াজের দানা দেওয়া হয়েছিল, তা আমরা ৬ শতাধিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে প্রদান করি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে, ৫২৭ জন কৃষকের জমিতে কোন পেয়াজ গজায়নি।
পরবর্তীতে প্রণোদনা হিসেবে আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আধা কেজি করে ৫২৭ জন কৃষককে বিনামূল্যে পেয়াজ দানা প্রদান করি। তবে কেন বিএডিসি’র বীজ কৃষকের জমিতে গজায়নি, সেটি বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ভাল বলতে পারবে। আমরা শুধু তাদের বীজ এনে কৃষকদের প্রদান করেছি। এরইমধ্যে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়। তবে নিম্নমানের বীজ প্রদানের বিষয়ে ফরিদপুর অঞ্চলের বিএডিসি’র সহকারী পরিচালক সায়েম মল্লিক দায়সারা উত্তর দিয়ে বলেন, ঢাকা থেকে আমাদের যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে আমরা সেই বীজ কৃষকদের প্রদানের জন্য বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়েছি।
কেন গজায়নি এটা ভাল বলতে পারবে ঢাকার প্রধান কার্যালয়। তবে উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে দাবি করে বীজ সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের প্রধান রফিকুল ইসলাম মুক্তা বলেন, আমরা যখন বীজ সংগ্রহ করি তখন আমাদের কাছ থেকে বিএডিসি’র কর্মকর্তা বীজের স্যাম্পল সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টে পাঠান। পরবর্তীতে ল্যাব টেস্টে আমাদের বীজ ভাল এই রকম সনদ প্রদান করেন বিএডিসির কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে আমরা সরকারকে বীজ সরবরাহ করি। এখন বীজ থেকে কেন চারা গজায়নি এটা ভাল বলতে পারবে বিএডিসির কর্মকর্তারা।
মাদারীপুর অর্থনীতি সমিতির সভাপতি রিপনচন্দ্র মল্লিক বলেন, এই প্রকল্পটি সরাসরি কৃষকের স্বার্থরক্ষার জন্য সরকার গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এই প্রকল্পে নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট অর্থের অপব্যহার করার বিষয়টি অনুমান করা যাচ্ছে। তাই এই প্রকল্পের প্রকৃত অনিয়মগুলো তদন্ত করে বের করে দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ ও স্থানীয় কন্ট্রাক গ্রোস কৃষকের নামের মাধ্যমে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকায় কেনা হয় বারি-১, বারি- ০৪ ও তাহেরপুরি জাতের এই পেয়াজের বীজ। ফলন না হওয়ায় লোকসানের মুখে মাদারীপুরের চাষিরা। এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবী করছে কৃষকেরা। সেই সাথে যারা এই প্রকল্পের অর্থ খরচের অপব্যবহার করেছে তাদের বিচার দাবী করছেন তারা
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সালথা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন বহিষ্কার
হোক না সবার সুপারনিউমেরারি পদোন্নতি, কর্মক্ষেত্রে আসুক গতি
জামিনে এসে হত্যা মামলার সাক্ষীসহ ৫ জনকে কুপিয়েছে প্রধান আসামি
সীমান্তে ভারত উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে: ইসলামী আন্দোলন
কলম্বিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৬০
প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য সাংবাদিক হবে
কাঁটাতার পেরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে কুড়িগ্রামে ভারতীয় গৃহবধূ
জাতির সংকট উত্তরণে সর্বদা মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থল জিয়া পরিবার : মীর হেলাল
স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে চায়: আমিনুল হক
গুলি করা পুলিশের শাস্তি নয়, চিকিৎসকের গ্রেফতার ফ্যাসিবাদের উদাহরণ - ডা. রফিকুল
ফেনীতে সিক্সার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ছাগলনাইয়া উপজেলা দল চ্যাম্পিয়ন
দৌলতপুর সরকারি প্রমোদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
গোপালগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করণে জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রম আয়োজন
সৈয়দপুরে শহিদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন
বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত
স্বভাবী চোরের শাস্তি ইসলামেই নির্ধারিত - পীর সাহেব চরমোনাই
‘সীমান্তে গন্ডগোল শুরু হয়েছে, জীবন বিপন্ন হলেও দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখবো’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী: সরকারের নতুন পদক্ষেপে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়
আলজেরিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজ তাওহিদুলের দেশত্যাগ
লামায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষীকি পালিত