নিকলীর বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা এখন শয্যাশায়ী
২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৩ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৩ এএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত সহনানা রোগে আক্রান্ত। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধে নারীদের মধ্য যাঁরা বীরত্বের সঙ্গে রণাঙ্গনে লড়াই করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় স্বাক্ষর রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হাওর অঞ্চলের সখিনা বেগম। লাল সবুজের পতাকার স্বপ্নচারী এ সাহসী নারী গত শনিবার থেকে শ্বাসকষ্ট সহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। তাঁর খোজ খবর নিতে সখনির ঘরে মিডিয়া পাড়ার লোকজনের দৌড়যাপ ।
নিজ এলাকায় ১৯৭১ সালে দা দিয়ে কুপিয়ে পাঁচ রাজাকারকে হত্যা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা । মুক্তি যোদ্ধের সাহসী ভুমিকার নানা বৈচিত্রের ঘটনা প্রবাহের কথা এখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে । ৯২ বছর বয়সী পল্লী বালার সখিনা বেগম এখন যেন অন্তিম শয্যাশায়ী। বাংলার এ বাঘিনী কন্যা কিশোরগঞ্জের রূপসী হাওর অঞ্চল খ্যাত নিকলী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মুক্তি যোদ্ধাদের চারন ভূমি গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা । বাবা সোনাফর মিয়া এবং মা, দুঃখী বিবি। স্বামী কিতাব আলী, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বেই মারা যান স্বামী কিতাব আলী। ভাটি বাংলার সখিনা বেগম নিঃসন্তানী এক নারী মা,ডাক শুনতে পাননি তিনি । গুরুই গ্রামে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নেমে পড়েন সশস্ত্র যুদ্ধে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বর্তমানে তাঁর বয়স ৯২ বছর। স্থানীয় মানুষ তাঁকে ‘খটকি বেগম’ বলেও ডাকেন। তিনি একজন তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিজ বাড়িতে সখিনাকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি এখন থাকেন গুরুয়ের সীমান্তবর্তী গ্রাম হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া গ্রামে । দেখভাল করেন সখিনার ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তার।গতকাল মঙ্গলবার বড়মাইপাড়ার ঐ বাড়িতে গিয়ে কথা হয় সখিনা বেগমের সাথে ।তাঁর মুখ থেকে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধে গল্প এবং কেন কিভাবে তিনি মুক্তি যোদ্ধে অংশ গ্রহন করেন । তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান মুক্তিযুদ্ধে সখিনা বেগমের ভাগনে, মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন।
ভাগনের হত্যাকাণ্ডে সখিনা হয়ে উঠেন প্রতিশোধপরায়ণ ।স্থানীয় একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সখিনা বেগম গুরুই গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে রাজাকারদের খোঁজ খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তা জানাতেন। নিকলী উপজেলাকে হায়ানা মুক্ত করার শেষ পর্যন্ত সখিনা বেগম খবর সংগ্রহে সক্রিয় ভাবে কাজ করেন । এ ছাড়া দিনরাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে একদিন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান । পরে কৌশলে পাকিস্তানীদের হাত থেকে পালিয়ে আসেন। আসার সময় সেখান থেকে সখিনা নিয়ে আসেন একটি বড় ধারালো রাম দা। পরে সেই রাম দা দিয়েই নিকলীর কুখ্যাত পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সখিনার রাম,দাটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এবং নামফলকে সখিনা বেগমের নাম উল্লেখ রয়েছে । একাত্তরের পটভুমিতে সখিনা বেগমের বীরত্বের কথা জানার পর ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকার তাঁকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করে । প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধার সন্মানি ভাতা পান তিনি। বয়সের ভারে সখিনা এখন আর নিজে নিজে চলতে পারে না । বিছানা থেকে উঠে বসতে পারেন না।
ভাগনি ফাইরুন্নেছার সহযোগিতা নিয়ে বিছানায় উঠে বসেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায় কিশোরগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইয়ে সখিনা বেগমের বীরত্বপূর্ণ গল্পের চিত্র তোলে ধরা হয়েছে । যে রাজাকার সখিনার ভাগনে মতিউর রহমানকে হত্যা করেছিল, বসু বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে সখিনার হাতে তুলে দেয়। সখিনা তাঁকে বঁটি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয় । তবে স্থানীয় লোকজন জানান, ৭১ সালে সখিনা উল্লেখ যোগ্য পাঁচ জন রাজাকারকে রাম দা, দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন।বর্তমানে সখিনা চোখেও কম দেখেন। জীবনের শেষ বেলায় এসে তাঁর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তাঁর একটু খোঁজখবর নিলেই তিনি খুশি। সখিনা ভালোমতো কথা বলতে পারেন না। নড়াচড়া করতে পারেন না। সারা দিন বিছানায় পড়ে থাকেন।গত মঙ্গলবার সখিনার খোঁজ খবর নিতে ভাগনির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন সখিনা। ফাইরুন্নেছার সাথে কথা হলে এ প্রতিনিধিকে জানান সখিনা বেগম এখন নিজে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।
শোয়া থেকে নিজে নিজে এপাশ-ওপাশও করতে পারেন না। তাঁকে ধরে পাশ পরিবর্তন করে দিতে হয় । মানুষজনের আগমন টের পেলেই কাঁদতে থাকেন আর ইশারা করে তাঁর কাছে বসতে । বিজয়ী এ নারী এক বছর যাবত ফলমূল আর জুস ছাড়া কিছুই খেতে পারে না।ফাইরুন্নেছা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে খালাকে সেবার কারণে আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা তুলতে তাঁকে নিকলী সদরে নিয়ে যেতে হয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা যে ২০ হাজার টাকা পান, তা ওষুধ কিনতে চলে যায়।উপজেলা সদরের মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মেমম্বার বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা মুক্তি যোদ্ধা কমান্ডার মুজ্জাম্মেল হক আবির জানাজ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু মুসলিম নারী-পুরুষ সর্বাত্মকভাবে মায়ের জন্য যোদ্ধে অংশ গ্রহন করেছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি নিকলীকে স্বাধীন করতে এবং রাজাকার মুক্ত করতে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার সাথে সাথে নারী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের সংগ্রামী জীবনের অবদান ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছে থাকবে ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রিয়ালের সঙ্গে ব্যবধান বাড়ালো বার্সা

নোয়াখালীর বিপণী-বিতানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হলেও মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

কোচ ছাঁটাই করল লাইপজিগ

কলাপাড়ায় ঈদের চাঁদ উৎসব

পেকুয়ায় জামায়াতের শিক্ষা বৈঠকে রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যের আহ্বান

আওয়ামী লীগ যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার কোনো ক্ষমা নেই: খোকন

যেভাবে একটি অন্যায়ের সম্মিলিত প্রতিবাদ হলো

শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশসহ তার বাহিনীর ১০ জন গ্রেফতার, অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার

শেষ মুর্হুতের কেনাকাটায় সিলেট নগরীর রাজপথ থেকে শপিংমলে ক্রেতারা

জাতীয় ঈদগাহে আসবেন না প্রেসিডেন্ট, ঈদের নামাজ পড়বেন বঙ্গভবনে

৩৯২টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সিলেট মহানগরীতে, প্রধান জামাত শাহী ঈদগাহ ময়দানে

শহীদ মীর মুগ্ধের বাসায় জামায়াত আমীর

ডিএসই, সিএসই এবং পিএসএক্স’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

সিলেটে চা বাগানের ভেতরে ৩ ট্রাক ভর্তি ৪৬৭ বস্তা ভারতীয় চিনি রেখে পালালো চালক

অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে: রিজভী

অসৎ ব্যবসার অহংকার সিলেটের হরিপুরের সেই "বুঙ্গার বাজার" গুড়িয়ে দিয়েছে যৌথবাহিনী

লন্ডনে ঈদের নামাজ আদায় করলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ-র নিরাপত্তায় ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেশী বন্দুক উদ্ধার

আমরা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই : ধর্ম উপদেষ্টা