রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষককর্মচারীগণ বেতন বোনাস না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ব্যাংক থেকে ফিরে এসেছেন শত শত শিক্ষক কর্মচারী। গোদাগাড়ী সোনালী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ ব্যাংকের শেষ কর্মদিবস। ২ টা ৩০ মিনিটের ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকে কোন টাকা আসেনি রাত ৭/৮ টার দিকে আসতে পারে। যাদের এটিএম কার্ড আছে তারা রাতে বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারবেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার কয়েক হাজার শিক্ষক কর্মচারী বেতন-ভাতা ও বোনাস না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা তিন মাস থেকে বেতন ও বোনাস না পেয়ে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির নানা জটিলতার কারণে বেতন আটকে গেছে গোদাগাড়ীর কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর। কেউ তিন মাস, কেউ দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। রাষ্ট্রীয় চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের অর্থ বিতরণ করা হয়। সে মোতাবেক গোদাগাড়ী সোনালী ব্যাংক শাখায় ঈদের আগে মাত্র এক দিন (২৭ মার্চ) ব্যাংকের কর্মদিবস রয়েছে। এদিনও বেতন না ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন শিক্ষককর্মচারীগণ। তার ঈদ আনন্দ হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গত ২০২৪ ইং সনের ডিসেম্বর থেকে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না উপজেলার রাজবাড়ী হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষক কর্মচারী। তাদের মত অবস্থা আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মতিয়ার রহমান বলেন, নির্দেশমতে সংশোধন করা হয়েছে একাধিকবার তারপরেও শিক্ষককর্মচারী বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। তাদের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। আজকেও বেতন ও বোনাসের জন্য গোদাগাড়ী সোনালী ব্যাংকে গিয়েছিল আমার শিক্ষক কর্মচারীগণ।
গোগ্রাম আদর্শ বহুমূখি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার স্কুলের পিয়ন গত ডিসেম্বর মাস থেকে শিক্ষক কর্মাচারী ফেব্রুয়ারী, মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় শিক্ষার বৈষম্য কীভাবে দূর করবেন সরকার। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীগণ কি বাতাস খেয়ে বেঁচে থাকবেন। তাদের কী ইদ নেই, ছেলে মেয়ে নেই। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকগণ কোটি কোটি টাকার মালিক তাদের নিকট ৫/৬ করে ক্রেডি কার্ড আছে তারা ম্যানেজার সাহেবের কথামত গভীর রাতে এটিএম ব্যুথে গিয়ে টাকা তুলে ঈদের বাজার করবেন। এগুলি আমাদের সাথে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে এখনও পতিত হাসিনা সরকারের লোকজন বসে আছে বলেই শিক্ষককর্মচারীগণ ঈদের আগে বেতন বোনাস থেকে বঞ্চিত হলো।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এমএন রিদওয়ান ফিরদৌস বলেন, অনেক শিক্ষক কর্মচারী দুমাস ও তিন মাসের বেতন ও বোনাস পাচ্ছেন না । আজ ২৭ মার্চ শেষ কর্ম দিবসেও বেতন ও বোনাস না পেয়ে গোদাগাড়ী সোনালী ব্যাংক থেকে কয়েক শিক্ষক কর্মচারী খালিহাতে ফিরে এসেছে। এধরনের অমানবিক কাজ শিক্ষককর্মচারীদের মাঝে হবে সেটা কোনদিন ভাবতে পারি নি। সরকারী স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীগণ আগাম মার্চ মাসের বেতন ও বোনাস পেলেও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীগণ বেতন বোনাস পেলেন না এ যেন একচোখে নুন অন্য চোখে তেল দেয়ার মত অবস্থা।
মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ মোমিনুল ইসলাম বলেন এসএসসির খাতা দেখার কিছু টাকা পেয়েছি কিছুটা বাজার করেছি সব কিছু বেতন ও বোনাসের উপর নির্ভর করচ্ছি, সে আশায় গুড়ে বালি, গোদাগাড়ী সোনালী ব্যাংকে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসলাম। আমাদের মাসের পর মাস তাদের বেতন বাকি পড়ে থাকছে। অথচ সরকারি শিক্ষকরা মার্চের বেতনও আগাম পেয়ে গেছেন।
সহকারী শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন৷ এমপিও শিটে নামের বানান সমস্যা রয়েছে পাঁচজনের। আর ডট নিয়ে সমস্যা ছিল ১১ জনের। সেগুলির সংশোধনী করা হয়েছে কিন্তু বেতন বোনাস পাচ্ছেন না শিক্ষককর্মচারীগণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মচারী অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী বেতনের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
ইএফটি জটিলতার কারণে বেতন না পাওয়া একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের যেসব শিক্ষক-কর্মচারীর এনআইডি, এমপিও শিট, ব্যাংকের তথ্যের মিল রয়েছে, শুধু তারাই প্রথম ধাপে বেতন পেয়েছেন। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীই এনআইডি, এমপিও শিট, ব্যাংকের তথ্যের সামান্য ভুল, ডট, কমা, স্পেস, আক্ষরিক ভুলের কারণে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ধাপের শুধু ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন। এ ছাড়া অনেকের জন্ম তারিখ, জন্ম সাল, নামের বানান ইত্যাদি শিক্ষা সনদের সঙ্গে অমিল আছে। তারাও বেতন পাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেতন-ভাতা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান সমকালকে বলেন, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করার পরও সবার সমস্যা সমাধান করতে পারেননি। মন্ত্রণালয়, আইবাস ও ইএমআইএস সেলের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে তারা সংকট কাটাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবেদিন জানান, বেতন ভাতা না পাওয়া সত্যি দুঃখজনক, আমার কাছে সংশোধনীর জন্য সেসব আবেদন এসেছিল তার সবই জেলায় আমি পাঠিয়ে দিয়েছি।