পুরো গ্রাম বিক্রি হওয়ার তথ্য সত্যি নয়, বিক্রি হয়েছে শুধু একটি বাড়ি

Daily Inqilab শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ

২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম

‘উমানাথপুর’ গ্রামটি সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত একটি গ্রাম। কারণ, এই গ্রামে বাড়ি মাত্র একটি। জনসংখ্যাও মাত্র দুজন। পুরো গ্রামে জমি রয়েছে ১০ একরের বেশি। সাড়ে ২২ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে বাড়িটি। আর্থিক সংকট আর একাকী নিরিবিলি পরিবেশে ভয়ভীতির কারণে আলোচিত গ্রামের সেই বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেছে।
 
 
এই গ্রামটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বাড়ির মালিক সিরাজুল ইসলাম সরকার (৭০)। চার মাস আগে ১৫ লাখ টাকায় পাশের উদয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মন্নাছের কাছে বাড়িটি বিক্রি করে দেন তিনি। বুধবার (২৬ মার্চ) বিষয়টি জানাজানি হয়।
 
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো গ্রামের মালিক সিরাজুল সরকার একা নন। সিরাজুল প্রায় দুই একর জমির মালিক। এই গ্রামে তার এক ভাইয়ের রয়েছে ২২ শতক আর দুই বোনের রয়েছে ১৫ শতক জমি। এছাড়া বাকি জমিগুলো তার চাচা ও চাচাতো ভাইসহ তাদের সন্তানদের। চার বছর আগেই সিরাজুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাড়িটি বিক্রি করে সড়কের পাশে বাসা নির্মাণ করে থাকবেন। সে অনুযায়ী তার পাশের গ্রামের প্রতিবেশী ও আত্মীয় আব্দুল মন্নাছের কাছে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন।
 
 
সিরাজুল বর্তমানে উমানাথপুর গ্রামেই বসবাস করছেন। কারণ, বাড়ি বিক্রির আগে একই গ্রামে সড়কের পাশে নিজের ৩৩ শতক জমিতে নির্মাণ করেছেন একটি নতুন বাড়ি। বর্তমানে সেখানেই সস্ত্রীক বসবাস করছেন তিনি।
 
 
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে কথা হয় সিরাজুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামসহ বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি-এমন একটি খবর এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আসলে পুরো গ্রামের জমির মালিক আমি একা না। এখানে অনেকে মালিকানায় আছেন। বাড়ির সাড়ে ২২ শতক জমি ছাড়া আমার মোট জমির পরিমাণ প্রায় দুই একর।’
 
 
তিনি বলেন, “১৬১০ সালে ব্রিটিশ আমলে এই এলাকায় উমানাথ চৌধুরী নামের একজন প্রভাবশালী শিক্ষিত লোক ছিলেন। গ্রামের পুরো জমি তার একার ছিল। ব্রিটিশ সরকার জমি জরিপ করার সময় জনবসতিহীন অবস্থায় এই গ্রামের নামকরণ করেন ‘উমানাথপুর’ গ্রাম। পাশের রামগোবিন্দপুর গ্রামে বসবাস করা আমাদের পরিবারের সদস্য বেশি ছিল। তাই বাবা সাবেক ইউপি সদস্য রমজান আলী সরকার ও চাচারা উমানাথ চৌধুরীর ওয়ারিশানদের (উত্তরাধিকার) কাছ থেকে জমি কিনে নেন। আমরা ১৯৬৫ সাল থেকে এই বাড়িতে বসবাস করে চাষবাসও করতে থাকি। অন্যরা এই গ্রামে বাসা না করে শুধু ফসল আবাদ করেন।”
 
 
বাড়ি বিক্রির কারণ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী এক বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। একমাত্র ছেলে গত বছর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর পুত্রবধূ নাতিকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে তার বাবার বাড়ি চলে গেছে। আমি এখনো দলিল লেখার কাজে ব্যস্ত থাকি। ছেলে মারা যাওয়ার পর জনসংখ্যা চারজন থাকলেও একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে বসবাস করতে থাকি। আমার তেমন শক্তি-সামর্থ্য নেই। নিরিবিলি স্থানের বাড়িটি দখলে নিতে একটি মহল পাঁয়তারা করছে। বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দিয়েছে। স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছি। অন্যের জমির আলপথ দিয়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। তাই বাড়িসহ শুধু বাড়ির জমি বিক্রি করে একই গ্রামে সড়কের পাশে ভিটে পর্যন্ত পাকা করে টিন দিয়ে বাসা নির্মাণ করে থাকছি। যিনি কিনেছেন, তিনি জমি রেজিস্ট্রির পরদিন থেকে পরিবারের ১০ জন সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন।’
 
 
বাড়িটি কিনে নেওয়া আব্দুল মন্নাছের মোবাইল নম্বরের একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। তবে তার ছেলে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বাবা ১৫ লাখ টাকায় বাড়িসহ বাড়ির জমি কিনেছেন। রেজিস্ট্রিসহ খরচ পড়েছে ১৭ লাখ টাকা। পরিবারের সবাই এখন আলোচিত এই বাড়িতেই বসবাস করছি।’
 
 
রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আলী ফকির বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম বাড়িসহ বাড়ির জমি বিক্রি করলেও এই গ্রামেই স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন। শেষ বয়সে সন্তানকে হারিয়ে তিনি মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তবে তার যে কোনো বিপদে সবসময় পাশে দাঁড়াবো বলে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
 
 
২০২৪ সালের জুলাইয়ে একটি বাড়ি নিয়ে একটি গ্রামের ঘটনা প্রকাশ পায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর এই গ্রাম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ সব স্থানে কাগজে-কলমে এ বাড়িকে ঘিরেই গ্রামের পরিচয়। উপজেলার উত্তর দিকে গ্রামটির অবস্থান। এই গ্রামের পাশে পশ্চিমে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। গ্রামটি উপজেলা সদর থেকে ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কাগজপত্রে মৌজার নামও উমানাথপুর।
 
 
উমানাথপুরের উত্তরে রামগোবিন্দপুর, দক্ষিণে হরিপুর, পূর্বে উদয়রামপুর এবং পশ্চিমে রামগোবিন্দপুর ও হরিপুর গ্রাম। উমানাথপুরে আলোচিত এই বাড়িঘিরে রয়েছে একটি গোয়ালঘর, একটি ছোট পুকুর, একটি টয়লেট ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি।

বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানালো ফুলকুঁড়ি আসর তারার মেলা
শেরপুরে আড়াই শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ- “মাইসাহেবা মসজিদ”
লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মরলো ৩ গরু
মাগুরায় মা সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
শার্শায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক ২
আরও
X

আরও পড়ুন

আসামিদের গ্রেপ্তারে অনুমতি আদেশ চ্যালেঞ্জ, হাইকোর্টে রিট

আসামিদের গ্রেপ্তারে অনুমতি আদেশ চ্যালেঞ্জ, হাইকোর্টে রিট

লাঞ্চের পর বৃষ্টির বাগড়া

লাঞ্চের পর বৃষ্টির বাগড়া

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানালো ফুলকুঁড়ি আসর তারার মেলা

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানালো ফুলকুঁড়ি আসর তারার মেলা

শেরপুরে আড়াই শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ- “মাইসাহেবা মসজিদ”

শেরপুরে আড়াই শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ- “মাইসাহেবা মসজিদ”

নারী চিকিৎসক দিয়ে নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত কেন নয়: হাইকোর্ট

নারী চিকিৎসক দিয়ে নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত কেন নয়: হাইকোর্ট

লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মরলো ৩ গরু

লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মরলো ৩ গরু

মাগুরায় মা সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

মাগুরায় মা সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষার্থী ফাইয়াজের মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার আহ্বান আইন উপদেষ্টার

শিক্ষার্থী ফাইয়াজের মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার আহ্বান আইন উপদেষ্টার

মার্কিন শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক হাজার পোশাক কারখানা, মালিকদের শঙ্কা

মার্কিন শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক হাজার পোশাক কারখানা, মালিকদের শঙ্কা

ঢাকায় তৎপর ‘র’! জুলকারনাইন এর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

ঢাকায় তৎপর ‘র’! জুলকারনাইন এর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

ভবেশের মৃত্যুতে ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

ভবেশের মৃত্যুতে ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

শার্শায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক ২

শার্শায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক ২

সার্বজনীন না করে সেকুলার নারীদের দিয়ে কমিশন গঠন করায় একটা ক্যাচাল তৈরি হয়েছে  : রাশেদ খান

সার্বজনীন না করে সেকুলার নারীদের দিয়ে কমিশন গঠন করায় একটা ক্যাচাল তৈরি হয়েছে : রাশেদ খান

আশুলিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়া দেওয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার

আশুলিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়া দেওয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বিএনপি

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বিএনপি

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ

আশুলিয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন, স্বামী পলাতক

আশুলিয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন, স্বামী পলাতক

রাজধানীতে যুবদল নেতাকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক

রাজধানীতে যুবদল নেতাকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক

আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

লালপুরে ফসলের মাঠ থেকে কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার

লালপুরে ফসলের মাঠ থেকে কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার