দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার সড়কের কোথাও নেই যানজট, নেই যাত্রীসেবা নিয়ে কোন বিড়ম্বনার অভিযোগ। এবারের ঈদুল ফিতরের আর মাত্র দুইদিন সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের স্বস্তির ঈদযাত্রায় সড়কে নষ্ট হয়নি মানুষের মূল্যবান সময়। কম সময়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পেরে বেশ খুশি প্রিয়জন-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে আসা মানুষজন।
এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। সবধরণের যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের বিশাল টিমের সঙ্গে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ, রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ স্বেচ্ছাসেবকরা। গত বছর ঈদে ঘরমুখো মানুষরা মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের যানজট প্রবণ এলাকা সহ দাউদকান্দি-মেঘনা টোলপ্লাজায় নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলেন। এবারে পুরো উল্টোচিত্র। চালক ও যাত্রীরা জানিয়েছেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। বেশ স্বস্তিতেই গন্তব্যে ফিরতে পারছেন তারা।
শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের যানজটপ্রবন এলাকাগুলোর মধ্যে দাউদকান্দি টোরপ্লাজা, শহীদনগর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনার মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, সদর দক্ষিণের সুয়াগাজী বাজার, পদুয়ার বাজার, নুরজাহান হোটেলের সামনে, কোটবাড়ি সড়কের ইউটার্ন, জাগুরঝুলি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, নাজিরা বাজার ইউটার্ন, নিমসার সবজিবাজার এলাকা এবং চৌদ্দগ্রাম বাজারসহ চিহ্নিত হটস্পট ঘুরে দেখা গেছে কোথাও কোনো যানজট নেই। এসব এলাকায় যেখানেই অহেতুক যাত্রী উঠানামা ও পাকিং করা হচ্ছে, সেখানেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা।
ঈদে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য খুলনার বাগেরহাট থেকে ঢাকায় এরপর ঢাকা হয়ে কুমিল্লায় আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ওমর শরীফ নামের এক যাত্রী জানান, প্রতিবছর ঈদের আগে মহাসড়কে যানজটে অনেক সময় চলে যেত। এবার কোথাও কোনো ধরণের যানজট নেই। এ জন্য সময়মতো নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্কাউট ও বিএনসিসি সদস্যরা আমাদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে মহাসড়কে প্রচন্ড রোদে দায়িত্ব পালন করতে দেখে খুব ভালো লাগছে। তাদের জন্য শুভকামনা।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়ন পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি) মো. খাইরুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কে ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের বিড়ম্বনা কমাতে কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে সেক্টরের তত্ত্বাবধানে ২২টি চেকপোস্ট, সার্বক্ষণিক ৭২টি টহল টিম, যানবাহন চেকিং টিম ২২, ট্রাফিকজ্যাম নিয়ন্ত্রণ টিম ৩৮টি, বাসস্ট্যান্ড লোতে চেকিং টিম ১৩টি, কুইকরেসপন্স টিম ২২টি, একটি কন্ট্রোলরুম ও অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম ছয়টি এবং একটি স্টওাইকিং রিজার্ভ ফোর্স কাজ করছে।এছাড়াও দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রুত সরাতে সার্বক্ষণিক ২২টি রেকার টিম এবং হতাহতদের উদ্ধারে ২৩টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, কমিউনিটি পুলিশিং, রোভার স্কাউট ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতায় করে যাচ্ছেন।
হাইওয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, মহাসড়কে যানবাহনে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধ করতে হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ২৪ ঘণ্টা টহল অব্যাহত রেখেছে হাইওয়ে পুলিশ। রাতে মহাসড়কে সন্দেহ জনক কাউকে দেখলেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে মহাসড়কে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসিফুল হক বলেন, যানজট ও সড়কে সুষ্ঠু যাত্রীসেবা নিশ্চিতে হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, সেনা সদস্য সহ রোভার স্কাউট, বিএনসিসি সদস্যদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকরাও কাজ করছেন। সম্মিলিত এ কাজের সুফল মিলছে। ঈদ ঘনিয়ে আসার এই মুর্হূতটিতে মহাসড়কে যানজট নেই। শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে মহাসড়কে। সবমিলে ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।