আরো একবার প্রমানিত হল দক্ষিনাঞ্চলে নিরাপদ ভ্রমনে নৌ-পথের গুরুত্ব হারিয়ে যায়নি

Daily Inqilab নাছিম উল আলম

৩০ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম

 

এবারের ঈদে ঘরেফেরা মানুষের জন্য নৌপথই প্রধান ভরসাস্থল হিসেবে কাজ করছে। এমনকি ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলমুখী কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের জন্যও নৌপথই প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ বরিশালের সাধারণ মানুষও।

 

২০২২-এর জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে রাজধানীর সঙ্গে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌযোগাযোগের গুরুত্ব অনেকটাই গৌণ হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ মানুষই নৌপথের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে সড়কপথমুখী হয়েছেন। ফলে একের পর এক বিলাসবহুল নৌযান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক নৌযান স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রিও হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। কেউ কেউ নৌযানের মালিক ব্যাংকের দেনা শোধ করতে গিয়ে যেমনি পথে বসে গেছেন, তেমনি নৌপথের ওপর নির্ভরশীল অন্তত ৫০ হাজার কর্মজীবী ও শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। শুধু বরিশাল-ঢাকা নৌপথে রুট পারমিটধারী প্রায় ২৯টি নৌযানের মধ্যে এখন অন্তত ১০টির কোনো হদিস নেই।

 

কিন্তু নৌপথ ও নৌযান ব্যবসার এ ক্ষরার মধ্যেও গত ২৯ মার্চ থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটে বিলাসবহুল নৌযান ‘এমভি এম খান-৭’ চালু হয়েছে। এম খান শিপিং লাইন্স-এর এ পদক্ষেপকে নৌযান ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করলেও ইতোমধ্যে নৌযানটি যাত্রীদের নজর কাড়তে শুরু করেছে।

 

গত কয়েকটি বছরের মতো এবারের ঈদের আগেপরেও ন্যূনতম ১০ লাখ যাত্রী বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করবে বলে আশা করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু শুধু সড়কপথে এত অল্প সময়ে এ বিপুল সংখ্যক যাত্রী চলাচলের সক্ষমতা শুধু দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহনের দূরের কথা, সারা দেশের সব যানবাহন যুক্ত করলেও সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ফলে নৌপথই এবারও প্রধান অবলম্বন ঈদের আগে ঘরে ফেরা ও ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলমুখী মানুষের। কারণ, যেখানে একটি বাসে সর্বোচ্চ ৫০ জন যাত্রী বহন সম্ভব, সেখানে বরিশাল-ঢাকা রুটের দেড় হাজার যাত্রী বহনের অনুমতিপ্রাপ্ত নৌযানে প্রায় ৫ হাজার যাত্রীও বহন করছে, যা ১০০টি যাত্রীবাহী বাসের সমান।

 

গত ২৬ মার্চ ঈদের লম্বা ছুটি শুরু হওয়ার দিন থেকেই ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ৬টি করে বেসরকারি নৌযানের চলাচল শুরু হলেও শনিবার ঢাকার সদরঘাট থেকে ১৩টি নৌযান ধারণক্ষমতার ৩ গুণেরও বেশি যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এসব নৌযান রোববার ভোরে বরিশাল নৌবন্দরে যাত্রী নামিয়ে পুনরায় ঢাকায় ফিরে গেছে। নৌযানগুলো দুপুরের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছে সন্ধ্যার মধ্যে পুনরায় যাত্রী বোঝাই করে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে।

 

বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন মালিক-কর্মচারীসহ যাত্রী সাধারণের মতে, গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত শুধু নৌপথেই প্রায় ৪ লাখ যাত্রী বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছেছেন, যার সিংহভাগই এসেছেন বরিশালে।

 

ফলে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবহন সেক্টরে এখনো নৌপথ যে অপরিহার্য, সে বিষয়টি অকপটে আরো একবার স্বীকার করে নিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরাও। তবে নৌপথে এখনো বেশ কিছু বিড়ম্বনা যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি করে চলেছে। বিশেষ করে ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে সদরঘাটে পৌঁছার বিড়ম্বনা এখনো যাত্রীদের নৌপথে ভ্রমণে অনাগ্রহী করছে।

 

এর সঙ্গে ঘাট শ্রমিকদের কারণে বরিশাল ও ঢাকার সদরঘাট নৌ টার্মিনালে ব্যাগেজ নিয়েও যাত্রীদের চরম বিড়ম্বনা ভোগ করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি বরিশাল ও ঢাকার নৌ টার্মিনাল দুটিতে গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে যাত্রীদের ন্যূনতম কোনো সুযোগ-সুবিধাও অনুপস্থিত। এসব টার্মিনালে অসুস্থ রোগীদের পরিবহনে কোনো সচল স্ট্রেচার ও হুইলচেয়ার পর্যন্ত নেই। পাশাপাশি বরিশাল টার্মিনালের গ্যাংওয়ে এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ছাড়াও গাড়ি পার্কিংসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বিড়ম্বনার সঙ্গে ভোগান্তিও শুধু বাড়ছে, যা যাত্রীদের নৌপথের প্রতি বিরক্তির উদ্রেক করে মুখ ফিরিয়ে নিতেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

 

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টার্মিনাল ফি। রেল ভ্রমণে যেখানে যাত্রীদের কোনো টার্মিনাল ফি দিতে হয় না, সেখানে নৌ টার্মিনালে যাত্রীপ্রতি টার্মিনাল ফি এখন ১০ টাকা, যা পদ্মা সেতু চালুর আগে ছিল ৫ টাকা। স্বাধীনতার পরে ছিল ১০ পয়সা।

 

এসব বিষয়ে বরিশালের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার সাথেই দায়িত্বশীল (?) ঐ কর্মকর্তা কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতেই কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

 

অপরদিকে বিপুল সম্ভাবনা ও নির্ভরতার নৌপথের রাষ্ট্রীয় নৌবাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসির অবহেলা ও উদাসীনতাও সাধারণ মানুষকে নৌপথ বিমুখ করে তুলছে। জনগণের নিরাপদ নৌভ্রমণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৫টি যাত্রীবাহী নৌযান থাকার পরেও গত কয়েকটি বছর ধরে সংস্থাটি রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।

 

তবে এসব কিছুর পরেও এখনো রেল যোগাযোগবিহীন দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থায় নৌপথের গুরুত্ব হারিয়ে যায়নি বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। বরিশালের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীরা রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার স্বার্থে নৌপরিবহনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। তাদের মতে, কোনো দেশ বা অঞ্চলে কখনোই একমুখী পরিবহন ব্যবস্থা জনগণের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পারে না। এক্ষেত্রে সড়কপরিবহনের পাশাপাশি অবশ্যই নৌযোগাযোগকেও যথাযথ গুরুত্ব প্রদানের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। পাশাপাশি বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণসহ প্রস্তাবিত বরিশাল-ভাঙ্গা রেলপথ নির্মাণ ও বরিশাল সেক্টরে নিয়মিত বিমান ফ্লাইট পুনর্বহালেরও দাবি জানানো হয়েছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন
লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ
রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২
সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা
ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন
আরও
X

আরও পড়ুন

ঈদ মিছিলে মূর্তি ঈদের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হেফাজত

ঈদ মিছিলে মূর্তি ঈদের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হেফাজত

ফার্নান্দেসের রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন তার কোচ

ফার্নান্দেসের রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন তার কোচ

রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপে: আনচেলত্তি

রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপে: আনচেলত্তি

উইন্ডিজের নেতৃত্ব ছাড়লেন ব্র্যাথওয়েট

উইন্ডিজের নেতৃত্ব ছাড়লেন ব্র্যাথওয়েট

ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছিল: জামায়াত আমির

আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছিল: জামায়াত আমির

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন

পশ্চিমবঙ্গ-গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ২১

পশ্চিমবঙ্গ-গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ২১

আমাদের চেতনার প্রাণপুরুষ আল্লামা ফুলতলী (র.)

আমাদের চেতনার প্রাণপুরুষ আল্লামা ফুলতলী (র.)

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ

রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা

সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখরিত

ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখরিত

কুমিল্লায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা বাসের, নিহত ৩

কুমিল্লায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা বাসের, নিহত ৩

দাউদকান্দিতে এক যুবকের লাশ উদ্ধার

দাউদকান্দিতে এক যুবকের লাশ উদ্ধার

ঈদের পাঞ্জাবি নিয়ে বিপাকে বাবর, ডিজাইনারকে ছাঁটাই করতে বললেন ভক্তরা

ঈদের পাঞ্জাবি নিয়ে বিপাকে বাবর, ডিজাইনারকে ছাঁটাই করতে বললেন ভক্তরা

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ

সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী আদিত্যনাথের

সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী আদিত্যনাথের

মির্জাপুরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিরোধপূর্ণ দুই ঈদগাহসহ আড়াই শতাধিক মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের জামাত

মির্জাপুরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিরোধপূর্ণ দুই ঈদগাহসহ আড়াই শতাধিক মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের জামাত