পুলিশ পরিচয়ে তরুণকে আটকে চাঁদা দাবি, নোয়াখালীতে ছাত্রনেতাসহ ৫ জন কারাগারে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১০ এএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১০ এএম

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মাদকসহ এক তরুণকে আটকে রেখে পুলিশ-সেনাবাহিনী পরিচয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিসহ পাঁচজনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। এর আগে সোমবার রাতে উপজেলার বাটইয়া ও নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

 

কারাগারে প্রেরণকৃতরা হলেন, কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন (২৫), একই ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর মো. মনিরুল ইসলাম (২১), একই ইউনিয়নের মো. পারভেজ হোসেন (৩০), নরোত্তমপুর ইউনিয়নের অহিদুল ইসলাম (২৪) ও মো. ইউনুস হোসেন ওরফে রাজু (২২)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা কমিটির নেতা মেহেদী হাসান সিমান্ত বলেন, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত তারা ডিবি/সেনাবাহিনী পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করেই ফেঁসে গেছে।

 

 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আসামিদের নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে অভিযুক্তদের জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। কবিরহাট থানা ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের শ্রীনন্দী গ্রামের সফি উল্যাহর ছেলে মো. তাফসীরুল ইসলাম ওরফে রাফসানকে (১৯) মাদকদ্রব্যসহ আটক করেন ছাত্র প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুনসহ স্থানীয় একদল যুবক। তারা তাফসীরুলকে পুলিশে না দিয়ে বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আটকে রাখেন। এই সময়ে মামুন ও তার সহযোগীরা তাফসীরুলের বাবা সফি উল্যাহর কাছে ডিবি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তার ছেলেকে মারধরের হুমকি দেন।

 

 

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা তাকে দাবি করা টাকা বাটইয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণারটেক মসজিদের সামনে রাখার জন্য বলেন। তখন তিনি (বাদী) তার অসহায়ত্বের কথা জানান। একপর্যায়ে তিনি ৭০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে জানান। তখন তারা ওই টাকা স্থানীয় ফরায়েজী বাজারের উত্তর মাথায় স্কুলের পশ্চিম পাশে রাখার জন্য বলেন। পরে তিনি ওই স্থানে টাকা রেখেছেন বলে তাদের জানান। অভিযুক্তরা তখন তাকে বলেন, ‘তোমার সঙ্গে প্রশাসনের লোক আছে।’ এরপর তার ছেলেকে ডিবি পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।

 

 

বাদী আরও উল্লেখ করেন, এতে তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল করেন। একই সঙ্গে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড শুনে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে। পরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা মো. সফি উল্যাহ (৬০) বাদী হয়ে কবিরহাট থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় আরও তিন-চারজনকে।

 

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা কমিটির আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, কারাগারে প্রেরণকৃত ৫ জনের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। জুলাইয়ে সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে সে সমন্বয়ক ছিল না। কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া বলেন, মাদকসহ এক তরুণকে আটক করেন আবদুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েক যুবক। তারা তাকে পুলিশে সোপর্দ না করে উল্টো নিজেরাই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই তরুণকে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে তরুণের বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে মাদকসহ আটক তরুণের বিরুদ্ধেও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলতাক রাকিব নামে অপর আসামিকেও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।  


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

উখিয়ায় কলেজ শিক্ষক ইকবাল হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা
ভারতীয় সীমান্তে নির্যাতনের শিকার দুই কৃষক দেশে ফিরলেন
ভিসির অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশনে কুয়েট শিক্ষার্থীরা
সুন্দরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ, চিকিৎসাধীন আহত একজনের মৃত্যু
মাগুরায় যৌথ বাহিনীর অভিযান ২টি ওয়ান সুটারগানসহ তিনজন গ্রেফতার
আরও
X

আরও পড়ুন

উখিয়ায় কলেজ শিক্ষক ইকবাল হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা

উখিয়ায় কলেজ শিক্ষক ইকবাল হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা

একদিনের ব্যবধানে আজ আবারও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি

একদিনের ব্যবধানে আজ আবারও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি

ভারতীয় সীমান্তে নির্যাতনের শিকার দুই কৃষক দেশে ফিরলেন

ভারতীয় সীমান্তে নির্যাতনের শিকার দুই কৃষক দেশে ফিরলেন

তুরস্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে

তুরস্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে

ভিসির অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশনে কুয়েট শিক্ষার্থীরা

ভিসির অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশনে কুয়েট শিক্ষার্থীরা

সুন্দরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ, চিকিৎসাধীন আহত একজনের মৃত্যু

সুন্দরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ, চিকিৎসাধীন আহত একজনের মৃত্যু

মাগুরায় যৌথ বাহিনীর অভিযান ২টি ওয়ান সুটারগানসহ তিনজন গ্রেফতার

মাগুরায় যৌথ বাহিনীর অভিযান ২টি ওয়ান সুটারগানসহ তিনজন গ্রেফতার

পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে পাকিস্তানে প্রথমবার চালু হলো ড্রোন নজরদারি

পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে পাকিস্তানে প্রথমবার চালু হলো ড্রোন নজরদারি

ছাত্রদল কর্মী পারভেজ হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সৈয়দপুরে ছাত্রদলের মানববন্ধন

ছাত্রদল কর্মী পারভেজ হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সৈয়দপুরে ছাত্রদলের মানববন্ধন

প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস

প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস

কিশোরগঞ্জের ইটনায় চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজা খুন

কিশোরগঞ্জের ইটনায় চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজা খুন

দুপুরে ঘুমালে রাতে ব্যাঘাত হবে কিনা জেনে নিন

দুপুরে ঘুমালে রাতে ব্যাঘাত হবে কিনা জেনে নিন

আজ বিএনপি-জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় দফা বৈঠক

আজ বিএনপি-জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় দফা বৈঠক

বাংলাদেশি নই বলা টিউলিপ বাংলাদেশের এনআইডি-পাসপোর্টধারী

বাংলাদেশি নই বলা টিউলিপ বাংলাদেশের এনআইডি-পাসপোর্টধারী

জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনানি পেছাল

জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনানি পেছাল

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এসি ব্যবহারে নতুন নির্দেশনা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এসি ব্যবহারে নতুন নির্দেশনা

ফ্লাই জিন্নাহ’র পর এবার ঢাকায় ফ্লাইট চালু করতে চায় পাকিস্তানের এয়ার সিয়াল

ফ্লাই জিন্নাহ’র পর এবার ঢাকায় ফ্লাইট চালু করতে চায় পাকিস্তানের এয়ার সিয়াল

উড্ডয়নের আগেই যাত্রীবাহী বিমানে আগুন, নিরাপদে সব আরোহী

উড্ডয়নের আগেই যাত্রীবাহী বিমানে আগুন, নিরাপদে সব আরোহী

বিশ্বজুড়ে বিরাট সাইবার অপরাধের আশঙ্কা: জাতিসংঘ

বিশ্বজুড়ে বিরাট সাইবার অপরাধের আশঙ্কা: জাতিসংঘ

ছারছীনার পীর সাহেব ও মাওলানা আহমদ হাসান ফুলতলীর বৈঠক

ছারছীনার পীর সাহেব ও মাওলানা আহমদ হাসান ফুলতলীর বৈঠক