পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, সম্মিলিত মতবিনিময় সভায় কাল সমাধান আসছে- বিজিএমইএ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা শ্রম অসন্তোষ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট এবং কখনও কখনও বন্দরের জট তো রয়েছে। এসব ঘটনায় সরবরাহ চেইনে বিপর্যয় দেখা দেয়। উৎপাদন ব্যাহত হয়। সময়মতো পণ্য বুঝে পেতে উদ্বেগ তৈরি হয় ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের। রপ্তানি আদেশের সময় ক্রেতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দর আলোচনায় দেশের পোশাক খাতের এসব দুর্বলতা উঠে আসে টেবিলে। ক্ষুন্ন হয় দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ। সর্বশেষ চলমান অস্থিরতা পোশাক খাতকে আরেক দফা বিপাকে ফেলেছে। অনেক ক্রেতা রপ্তানি আদেশ সরিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশের বিকল্প দেশে। উদ্যোক্তাদের অনুমান, চলমান অস্থিতিশীলতায় অন্তত ১৫-২০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব রপ্তানি আদেশের বড় অংশই যাচ্ছে ভারত এবং পাকিস্তানে। দ্রæত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে আগামীতে দেশের জন্য পোশাক শিল্পের জন্য বিষয়টি ভয়াবহ হবে। গণঅভ্যুত্থানের আগে-পরে মিলিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক ক্রেতা প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসছেন না। সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্রেতারা দেরিতে ম‚ল্য পরিশোধ এবং চুক্তিবদ্ধ দরের চেয়ে দর কম দিতে চান। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ৩০০ গুণ ব্যয়ে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য চাপ দেওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। উৎপাদন হওয়ার পর রপ্তানি আদেশ বাতিল হলে ‘স্টকলট’ হিসেবে স্থানীয় বাজারে ছেড়ে দিতে হয়। অতীতে এ রকম অনেক ঘটনায় কারখানা বসে যাওয়ার ঘটনা আছে। অবশ্য তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান শ্রমিক অসন্তোষ বিষয়ে প্রথমবার সম্মিলিত এক মতবিনিময় সভা আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। এতে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা এবং সমাধান আসবে বলে আশাবাদী বিজিএমইএ।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে পলায়ন করার পর থেকে প্রথমে কয়েকটি শিল্প কারখানায় হামলা শুরু হয়। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে গিয়েছে যে বর্তমানে শুধু আশুলিয়াতেই ২১৯টি শিল্প কারখানা বন্ধ রয়েছে। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম জানান, ২১৯টি কারখানার মধ্যে ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি ১৩৩টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এদিকে পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের তরফে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়। তবে এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। অনেকে শ্রমিকদের দোষারোপ করছেন। কারণ অনেক শ্রমিক নেতা এবং বহিরাগতরা শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছেন বলে উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের এক বহিরাগতকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
হান্নান গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি এ বি এম শামসুদ্দিন বলেছেন, এক বছর আগেই শ্রমিকদের পে কমিশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। নতুন এই সরকারের সময়ে একটা গ্রæপ সুযোগ নিতে চাচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিক সংগঠনগুলো বাইরের পয়সা নিয়ে শ্রমিকদের উষ্কে দিচ্ছেন। এতে যে আমাদের কত বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে সেটা তারা একবারও চিন্তা করছেন না। আমরা অর্ডার না পেলে শ্রমিকদের কি চাকরি থাকবে? এই অবস্থা চলতে থাকলে বায়ররা তো অন্য কোথাও শিফট হয়ে যেতে পারেন।
বিজিএমইএ’র আরেক সাবেক সহ-সভাপতি মশিউল আযম সজল বলেন, ড. ইউনূসের মতো একজন মানুষ আমাদের দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু তাকে বেকায়দায় ফেলতে বহু মানুষ চেষ্টা করছেন। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দ্রæতই পরিস্থিতি শান্ত হবে।
শ্রমিক অসন্তোষের প্রভাব ইতোমধ্যে পোশাকের রফতানি আদেশে পড়েছে। বাংলাদেশ থেকে রফতানি আদেশ অন্যত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বৃহষ্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া জানিয়েছেন, প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়ে গেছে। আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রতিদিন বসছে। একটি বড় কোম্পানি বেতন দিতে না পারার কারণে গাজীপুর-আশুলিয়ায় অসন্তোষ হয়েছিল। অগ্নিকাÐের ঘটনাও ঘটে। বৈঠকে বসে থেকেই আমাদের অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে কথা বলে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৯ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছেন। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
কেন এসব কারখানা বন্ধ করতে হলো? আন্দোলনের নামে কেউ কি পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে? কারখানা বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতি কোনদিকে যাবে? এ সব নিয়ে প্রথমবার সম্মিলিতভাবে এক মতবিনিময় সভা কাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, এই সভা থেকেই দেশ, শিল্প ও শ্রমিকদের স্বার্থে ভালো একটি সিদ্ধান্ত বা সমাধান আসবে। শনিবার থেকেই স্বাভাবিক হবে পোশাক শিল্প।
হঠাৎ করে পরিস্থিতি এমন হলো কেন? কেনই বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না? গার্মেন্টস শ্রমিক, মালিক ও অন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিক অসন্তোষ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ইন্ধনে ভারত এই ষড়যন্ত্র করছে। পাশাপাশি ভারত চাইছে এখানে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে এখানকার অর্ডার তাদের দেশে যাবে। এছাড়া এতদিন ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা, সেটার নিয়ন্ত্রণ এখন নিতে চান অন্যরা। এছাড়া শ্রমিকদেরও কিছু দাবি আছে।
তবে শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র তত্ত¡ না খুঁজে তাদের দাবি পূরণের দিকে মালিকদের মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি জলি তালুকদার। তিনি বলেন, শ্রমিকদের অনেকগুলো দাবি তো যৌক্তিক। সেগুলো মালিকরা মেনে নিলে সমস্যা কোথায়? আমরা আশুলিয়ায় সমাবেশ করে শ্রমিকদের কাজে ফেরার কথা বলেছি। আমরা মনে করি, অস্থিরতা বেশিদিন চললে বায়াররা অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন। ফলে সব পক্ষকেই বিষয়টি বুঝতে হবে।
দেশের পোশাক শিল্প এবং অর্থনীতিতে ধ্বংসে এটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা। তিনি বলেন, মালিকরা দাবি মেনেছেন শ্রমিকদের তারপরও কেন আন্দোলন। দাবি মানার পরও বিভিন্ন কারখানায় অসন্তোষ। এটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং ভারতের স্বড়যন্ত্র। তবে এই ষড়যন্ত্রে আমরা শ্রমিকরা নিজেদেরকে আরও উসকে দেই, কারখানা বন্ধ করে দেই তাহলে শ্রমিকদেরই ক্ষতি হবে। এভাবে কিছুদিন চললে অর্ধেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ২০ লাখ চাকরি হারাবে। পরিবার নিয়ে শ্রমিকদের পথে বসে যেতে হবে। দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হবে। তাই শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে দ্রæত কাজে ফেরার তাগিদ দেন তিনি।
অবশ্য তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান শ্রমিক অসন্তোষ বিষয়ে প্রথমবার সম্মিলিত এক মতবিনিময় সভা আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন শ্রম ও শিল্প উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এছাড়া শ্রমিক, এলাকান গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, দোকান মালিক ও বাড়িয়ালাসহ খাতসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। সভায় আশা করছি, দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র ও শ্রমিক অসন্তোষ বিষয়ে ফলপ্রসূ সমাধান হবে। একই সঙ্গে শনিবার থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। যেসব ফ্যাক্টরিতে সমস্যা হয়েছে সেগুলোর সমাধানও হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
বিভাগ : ব্যবসা-বাণিজ্য
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: খালেদা-তারেকসহ সব আসামি খালাস
টিউলিপের জায়গায় নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস
পদত্যাগপত্রে টিউলিপ সিদ্দিক যা লিখেছেন
টিউলিপের পদত্যাগ ইস্যুতে প্রেস উইংয়ের বিবৃতি
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে কায়রো, ঢাকার অবস্থান ৬ নম্বরে
মেয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে লাশ হলো "মা"!
মীরসরাইয়ে মুন্না খুনের ঘটনায়, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেফতার
আজ সারদায় ৪৮০ এসআইয়ের সমাপনী কুচকাওয়াজ
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৬৩ জন ফিলিস্তিনি, মানবিক সংকট চরমে
ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেফতার
সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন রিসোর্ট পুড়ে ছাই
শুল্ক রেলস্টেশন দিয়ে ভারত থেকে ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল আমদানি
শুল্ক–কর বৃদ্ধির ফলে দেশের তামাক খাতে কী প্রভাব পড়বে
ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য
পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ
অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
কারাগারে এস কে সুর
‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’
ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে