১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ তিন গুণ বেড়েছে
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৪ পিএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৪ পিএম
বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০২২ সালে কমলেও বাংলাদেশের বেড়েছে। গত বছর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশের বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ বছরে বাংলাদেশের ঋণ তিন গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেট রিপোর্ট বা বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদন ২০২৩-এর তথ্যানুসারে, ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৭ দশমিক শূন্য ১২ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭১২ কোটি ডলার; ২০২১ সালে যা ছিল ৯১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ১৪৭ কোটি ডলারের বেশি। সেই হিসাবে এক বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি।
২০২১ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ছিল ৯ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। ২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ ট্রিলিয়ন বা ৯ লাখ কোটি ডলারে। অর্থাৎ এ সময়ে সম্মিলিতভাবে এসব দেশের বিদেশি ঋণ কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৫ সালের পর ২০২২ সালে এই প্রথম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে। ২০২২ সালে এসব দেশ ঋণ পেয়েছে ১৮৫ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার; ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫৬ বিলিয়ন বা ৫৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই এক বছরে নিট ঋণ প্রবাহ কমেছে ৬৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত বছর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় প্রকৃতির ঋণই কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক ঋণ প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণ ছিল ২৬ দশমিক ৫২ বিলিয়ন (২ হাজার ৬৫২ কোটি) ডলার; ২০১৮ সালে যা ৫৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন (৫ হাজার ৭১২ কোটি) ডলার ও ২০২২ সালে তা ৯৭ বিলিয়ন (৯ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর ১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগের গতি প্রকৃতি বদলে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে। দেশের ঋণ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হলেও সামগ্রিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখনো ৪০ শতাংশের নিচে। তবে বিদেশি ঋণের অর্থে যেসব প্রকল্প হচ্ছে, সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের তেমন সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে টাকার যেভাবে অবমূল্যায়ন হচ্ছে, তাতে সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে রাজস্ব আয় আনুপাতিক হারে না বাড়লে ঋণ পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে কেন কমল
নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এসব দেশের সরকারি ও বেসরকারি বন্ড থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে যাওয়ার বিষয়টিকে। বলা হয়েছে, বন্ড কমে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এসব দেশ থেকে ১৮৯ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছেন। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্বের সব দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদহার বেড়েছে। সে জন্য নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ করার ব্যয় বেড়েছে।
আরেকটি বিষয় হলো, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়া। বিনিয়োগকারীরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে বন্ডে এসব বিনিয়োগ করছেন। এই প্রক্রিয়ায় নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো থেকে ১২৭ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৭১০ কোটি ডলার চলে গেছে। ২০১৯-২১ সালে এসব দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০২ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন এই বিনিয়োগকারীরা। ঋণের প্রবাহ নেতিবাচক হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এসব দেশের ঋণপ্রাপ্তির তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন মুদ্রার সাপেক্ষে মার্কিন ডলারের দরবৃদ্ধির কারণেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে যেসব দেশ ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রায় ঋণ নিয়েছে, তাদের ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হলে ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যায়।
সামগ্রিকভাবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিদেশি ঋণ কমে গেলেও যারা আইডিএ (বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) থেকে ঋণ পাওয়ার যোগ্য, সেই দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ ২০২২ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে এই দেশগুলোর মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার।
ঋণের সুদ পরিশোধ
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে রেকর্ড ৪৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪৪ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়েছে। গত বছর এবং এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতি কম। এই পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণের কিস্তি হিসেবে পরিশোধ করার কারণে এসব দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বাজেট কমে গেছে। এ ছাড়া আইডিএ থেকে যেসব দেশ ঋণ পাচ্ছে, তাদের ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তাদের ঋণের বোঝা চার গুণ হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই সময়ে বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়া। এই পরিস্থিতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক তা পূরণের চেষ্টা করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে ১১৫ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নতুন অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে, তার অর্ধেক দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাচ্চারা প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই হলিউড ছাড়বেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
হজযাত্রায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা
বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ২ সার ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা
কমলো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা
আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ আইটি স্কলারশিপ ৫৯ তম রাউন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ব্যাচের ফেয়ার ওয়েল অনুষ্ঠিত
পদ্মা রেলসেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে মঙ্গলবার
সেনবাগ হুফফাযুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
মানুষের ‘হৃদয় স্পর্শ করার’ ট্রেনিং নিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরামর্শ
জনসংযোগ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা ওপাশ কমিউনিকেশনস লিমিটেডের যাত্রা শুরু
নরসিংদীর পলাশে ইটবাহী ট্রলির ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত
ড. মাহবুব মোল্লা কলেজ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে
পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার চেষ্টায় আ.লীগের দোসররা
মাওলানা আতাহার আলীকে বাদ দিয়ে দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না : ধর্ম উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে ৪ জন গুরুতর আহত
আসছে বছর গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে তামান্না-বিজয় জুটি
সিলেটে 'রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা' শীর্ষক বিএনপির কর্মশালা কাল মঙ্গলবার
কোনো গণমাধ্যমে ভাঙচুর বরদাশত করা হবে না: নাহিদ ইসলাম