ই-ল্যাপ: বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করে দিয়েছে যে প্ল্যাটফর্ম
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ পিএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ পিএম
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া গ্রাহকদের জন্য অনেক সময় নানাবিধ কাগজপত্রের জটিল গোলকধাঁধার মতো মনে হতে পারে। ব্যবসায়ের মালিক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। কারণ, এখানে কাগজপত্র জমা, রিলেশনশিপ অফিসারদের বারবার স্বাক্ষর নিতে আসা এবং অন্যান্য অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
এই সমস্যার একটি স্মার্ট সমাধানের কথা ভাবল ব্র্যাক ব্যাংক।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে ব্র্যাক ব্যাংক চালু করে ইলেকট্রনিক লোন অ্যাপ্লিকেশন প্রপোজাল (eLAP) বা ই-ল্যাপ। লোন প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং অধিক কার্যকর করে তোলার একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এটি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ দেশব্যাপী ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিসে এটি চালু করা হলে বাংলাদেশের এসএমই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়।
এর ফলে, সত্যিকার অর্থেই ব্যাংকিং খাতে লোন ম্যানেজমেন্টে আমূল পরিবর্তন এসেছে।
ই-ল্যাপ চালু হওয়ার আগে ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া ছিল অনেকগুলো ধাপে বিভক্ত। ঋণ আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ঋণ অনুমোদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই ম্যানুয়াল ডেটা এন্ট্রি ও ডকুমেন্ট হ্যান্ডলিংয়ের প্রয়োজন হতো, যেটি ছিল অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং এখানে ভুল হওয়ার প্রবণতাও ছিল অনেক বেশি। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই ব্র্যাক ব্যাংক চালু করে ই-ল্যাপ। ভিফিন সল্যুশনস লিমিটেডের তৈরি এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা খুবই সহজ। লোকাল রেগুলেশন সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার পাশাপাশি ই-ল্যাপ বিভিন্ন স্তরের প্রযুক্তিগত দক্ষতাসম্পন্ন ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী একটি প্ল্যাটফর্ম।
ই-ল্যাপের কারণে ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যক্রমে গতি ও দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
লোন প্রসেসিং টাইম কমানোই ছিল মূল লক্ষ্য: ডকুমেন্ট হ্যান্ডলিং এবং বিভিন্ন স্তরের অনুমোদনের কারণে আগে এসএমই লোনের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে গড়ে ১৫ কর্মদিবসের প্রয়োজন হতো। তবে, ই-ল্যাপ চালু হওয়ার ফলে এই সময় কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দিনে। কারণ, এখন আগের চেয়ে দ্রুততর সময়ে যাচাই-বাছাই ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
ডকুমেন্ট হ্যান্ডলিং আগের চেয়ে আরও সহজ হয়েছে। এখন লোন অ্যাপ্লিকেশন জমা দেওয়া যায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ফলে, শুধুমাত্র চূড়ান্ত ধাপে আবেদনকারীকে স্বাক্ষরের জন্য উপস্থিত হতে হয়। এটি কাগজপত্রের ঝামেলা কমিয়েছে এবং রিলেশনশিপ অফিসারদেরও বারবার ভিজিটের প্রয়োজন হয় না।
রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ই-ল্যাপ সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রতিটি ঋণ আবেদনের বর্তমান অবস্থা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম এবং আবেদন কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এটি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়ায় গতিশীলতাও বাড়িয়েছে।
পুনঃআবেদনের ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয় হয়েছে ব্যাপক: পূর্বে করা আবেদনের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহ করতে পারে ই-ল্যাপের সিস্টেম ইনকোয়্যারি ফিচার। ফলে, ম্যানুয়াল এন্ট্রির প্রয়োজন হয় না। এটি বাহুল্যতা হ্রাসের পাশাপাশি প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার সময় এবং ভুলের পরিমাণ কমিয়েছে।
সেইসাথে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়িয়ে তাঁদের কর্মপদ্ধতি আরো সহজ এবং দক্ষ করে তুলেছে। মোবাইল ডিভাইস থেকেও ই-ল্যাপে লগইন করা যায়। ফলে, রিলেশনশিপ অফিসার ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজাররা যেকোনো স্থান থেকে গ্রাহকদের সেবা দিতে পারেন। ব্র্যাক ব্যাংক ইতিমধ্যে ২,২৩৭ জন ফিল্ড কর্মকর্তাকে ইলেকট্রনিক ট্যাবলেট দিয়েছে, যাতে তাঁরা যেকোনো স্থান থেকে গ্রাহকদের উন্নত মানের সেবা দিতে পারেন।
ব্যয় হ্রাসেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে বাতিল আবেদনপত্রের ক্ষেত্রে। যেসব আবেদন বাতিল হতো, আগে সেগুলোও প্রিন্ট করা হতো। এখন কেবল অনুমোদিত আবেদনপত্রই প্রিন্ট করা হয়, যা অপচয় এবং অপ্রয়োজনীয় প্রিন্টিংয়ের খরচ অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছে। ই-ল্যাপের স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াগুলো ডেটা এন্ট্রির ভুল কমিয়ে এনেছে। ফলে, ক্রেডিট ও অপারেশনস টিম আরও নির্ভুলভাবে ডকুমেন্ট হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করতে পারছে।
ই-ল্যাপের প্রভাব বহুমুখী এবং সুদূরপ্রসারী। এটি ৫৫৬টি এসএমই ইউনিট অফিস ও লোন প্রক্রিয়ায় যুক্ত ৩,৭০০-এরও অধিক ব্র্যাক ব্যাংক কর্মীকে সহায়তা করছে।
ই-ল্যাপ শুধু সময়ই নয়, এটি উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যয়ও হ্রাস করেছে। মোট টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম (টিএটি) দুই দিন এবং কাস্টমার সার্ভিস টাইম ছয় দিন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক কর্মীর বছরে কমপক্ষে ১০ দিন সময় সাশ্রয় হয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ই-ল্যাপ অনবোর্ডিং খরচে ৫.৮৫ কোটি টাকা এবং কুরিয়ার খরচ ২৫% হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।
ই-ল্যাপ গ্রাহকদের এক ব্যতিক্রমী ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা দিচ্ছে।
আগে সপ্তাহজুড়ে অপেক্ষা করতে হতো এবং বারবার ব্যাংকে যেতে হতো। তবে, এখন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঋণ আবেদন খুব দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্যাংশন লেটার তৈরি হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ হয়েছে, যা ভুল বোঝাবুঝি ও অভিযোগ হ্রাস করেছে। ই-ল্যাপের কোয়্যারি ম্যানেজমেন্ট ফিচার গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দ্রুততম সময়ে পর্তুগাল বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে : আনোয়ার হোসেন খোকন
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে রংমিস্ত্রী নিহত
বাংলাদেশের মানুষ ভারতের দাদাগিরি পছন্দ করে না - শেখ নুরুল্লাহ বাহার
ভৈরবে যুবকের ফাঁসিতে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
প্রতিশোধ না নিয়ে হামলাকারীর প্রতি উদারতা দেখালেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন
ফের দরপতনে শেয়ারবাজার
বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সফিক ঢাকায় সস্ত্রিক গ্রেপ্তার
বাণিজ্য মেলা আয়োজনের কাজ পেলো ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগত ও সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান, উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ
হজযাত্রী কোটা সর্বনিম্ন ১০০ জন নির্ধারণের দাবি বৈষম্য বিরোধী হজ এজেন্সি মালিকবৃন্দের
চকরিয়ায় ব্লক ইট তৈরির কারখানায় দুর্ঘটনায় দুই শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী নেতার বিরুদ্ধে নাগরিক কমিটির নেতার মামলা
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
পুঠিয়া পৌরসভা সাবেক মেয়র মামুনের বাবার দাফন সম্পন্ন
বিজয় দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জে জাসাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে 'পুতুলনাচের ইতিকথা'
মেঘনা সেতুতে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, নিহত-২
নোবিপ্রবিতে ১৮০ কৃতী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ‘মিট আপ উইথ ভাইস-চ্যান্সেলর’ অনুষ্ঠিত
নির্যাতনের জবাব হিংসায় নয়, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্যায়ের জবাব দিতে হবে: তারেক রহমান
কয়েকদিনের মধ্যেই শিক্ষা কমিশন ঘোষণা করা হবে
কায়রোতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর সাক্ষাৎ