ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহসহ তিনজনের উপর হামলার ঘটনার তিনদিন পর অবশেষে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে দায়ের করা মামলায় জেলা আইনজীবীব সমিতির সাধারন সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল ও সাদ্দাম হোসেন নামে পিয় কে আসামী করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আতাউল্লাহ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি বেলা সাড়ে তিনটার দিকে থানায় নথিভুক্ত করা হয়। মামলায় দু’জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬জনকে আসামী করা হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গত দু’দিন ধরে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে জেলা আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলন করার পর দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ সময় আদালত এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মারধরের শিকার জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
গত রবিবার আইনজীবী ও তাদের সহযোগিদের পরিকল্পিত হামলার শিকার হন বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ। আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সালিশ সভায় বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে হওয়া মারামারির সময় জাতীয় কমিটির এক নেতা আহত হন।
আইনজীবী সমিতি ভবনে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইউনুছ সরকার জানান, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠত মো. আতাউল্লাহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বিএম ফরহাদ হোসেনের ঘনিষ্টজন আসাদুজ্জামান খোকনকে সোমবার জামিন করান। চট্টগ্রাম আদালতে দায়ের হওয়া মামলার উপনথি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এনে বিচারককে চাপ প্রয়োগ করে জামিন করিয়েছেন, যা নজিরবিহীন ঘটনা। এরপর কসবার একটি পারিবারিক সালিশ করার জন্য বাদী পক্ষের হয়ে আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলের কক্ষে যান। সেখানে সালিশ হওয়া না হওয়া নিয়ে বাদী ও বিবাদী পক্ষের মধ্যে হওয়া মারামারিতে টেবিলের গøাসে লেগে পড়ে গিয়ে একজন আহত হন।
বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে ফেসবুকে লাইভ করে অপপ্রচার চালানো শুরু হয়। পরে তাদের পক্ষ নিয়ে কয়েকজন এসে মফিজুর রহমান বাবুলের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। তবে মফিজুর রহমান বাবুল কোনো পক্ষেরই আইনজীবী নন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে পৌর এলাকার কাউতলীর সড়ক ভবনের সামনে থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি বিক্ষোভ মিছিল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শেষ হয়। সেখানে তারা মফিজুর রহমান বাবুলকে জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক উল্লেখ করে তাকে গ্রেপ্তারে শ্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ তাদেরকে সেখানে আটকে দেয়। এক পর্যায়ে মিছিল নিয়ে ফেরার পথে সার্কিট হাউজের ভেতরের রাস্তা দিয়ে তারা আবার আদালত প্রাঙ্গনে প্রবেশের চেষ্টা করে। এখানেও পুলিশেথর বাধার মুখে পড়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। মফিজুর রহমান বাবুলকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাবে করা সংবাদ সম্মেলন করে মো. আতাউল্লাহ এ বিষয়ে দেওয়া পুলিশ সুপারের বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান। তিনি দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার যে কথা বলছেন সেটা মিথ্যা। কোনো আত্মীয়ের কাজে আদালতে তিনি আসেননি। রবিবার এক সহযোদ্ধার জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে আসেন। তবে ফয়েজ নামে এক পরিচিত ব্যক্তি বিকেলে তাকে আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলের কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় পরিচয় জানার পরপরই তিনিসহ সঙ্গে থাকাদের উপর হামলা করা হয়। চট্টগ্রামে নাগরিক কমিটির নেতাদের উপর হামলার রেশ ধরে এটি একটি পরিকল্পিত হামলা বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘একটি সালিশ সভার জন্যই আতাউল্লাহ আমার কক্ষে আসেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে দু’দফা মারামারি হয়। প্রথমবার মারামারি হওয়ার পর সালিশ পরে হবে জানিয়ে আমি চলে আসি। পরে আবার তাদের মধ্যে মারামারি হয়।’এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন জানান, আদালত এলাকায় এমনিতেই পুলিশ থাকে। এখানে বিক্ষোভ কিংবা অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। বিক্ষোভকারিদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’
তবে কারো (ব্যক্তিগত) চাকরি করেন না জানিয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান সাংবাদিকদেরকে জানান, ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রশ্নই উঠে না। ঘটনা যা ঘটেছে ও যে কারণে ঘটেছে জেনেশুনে তিনি সেটাই বলেছেন এবং অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। ঘটনার পর পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে জানান পুলিশ সুপার।