সউদী আরব-ইরান সুসম্পর্ক বিশ্বের জন্য কল্যাণবহ

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

১৫ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম

সউদী আরব ও ইরান শত্রুতা ভুলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চুক্তি করেছে গত ১০ মার্চ বেইজিংয়ে। এতে মধ্যস্থতা করেছে চীন। মুসলিম বিশ্বসহ গোটা বিশ্বের কল্যাণের নবযাত্রা শুরু হয়েছে এর মাধ্যমে। চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশ আবার বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতা শুরু করবে এবং দু’মাসের মধ্যে পরস্পরের রাজধানীতে দূতাবাস খুলবে। ২০১৬ সাল হতে তাদের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সে বছর সউদী আরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর তেহরানস্থ সউদী দূতাবাসে হামলা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে তাদের সম্পর্কোচ্ছেদ ঘটে। অতঃপর চরম শত্রুতা শুরু হয়, যার প্রভাব পড়ে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে। এমনকি সব মুসলিম দেশেও। কারণ, ইরান শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত আর সউদী আরব সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। ইরান আঞ্চলিক পরাশক্তি। পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। উপরন্তু শিয়া সম্প্রদায়ের উপর ইরানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে, সউদী আরব ইসলামের মাতৃভূমি এবং ধনী দেশ। ইসলামের পবিত্রতম স্থান হচ্ছে মক্কা ও মদিনা। ফলে দেশটি মুসলমানদের কাছে পবিত্র ভূমি হিসাবে খ্যাত। বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে সউদী আরবের ব্যাপক প্রভাবও রয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বহুদিন আগে। উপরন্তু তারা চরম দ্বন্দ্ব ও হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে। ফলে উভয় পক্ষই দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে আর্থিক, শিক্ষা, শক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রেই। তাতে লাভবান হয়েছে বিধর্মীরা। তাই তারা শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব বাড়ানোর নানা কৌশল গ্রহণ করেছে এবং তাতে সফল হয়েছে। ইসলামী প-িতদের অনেকেই এবং কিছু মুসলিম দেশ সউদী আরব ও ইরানের দ্বন্দ্ব নিরসন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। এ অবস্থায় চীনের মধ্যস্থতায় দেশ দু’টির সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চুক্তি হয়েছে। গত ১১ মার্চ সিএমজির খবরে প্রকাশ, সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে সুপ্রতিবেশী সুলভ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে গত ৬-১০ মার্চ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় বেইজিংয়ে। তাতে সউদী আরবের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসায়েদ বিন মোহাম্মদ আল-আইবান এবং ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিব আলি শামখানি নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন। সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির বিদেশ-বিষয়ক অফিসের পরিচালক ওয়াং ই এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। সংলাপে চীন, সউদী আরব ও ইরান একটি চুক্তিতে পৌঁছায় এবং শেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। উভয় পক্ষ জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিগুলো মেনে চলা, আলোচনা ও কূটনৈতিক উপায়ে উভয় পক্ষের মধ্যকার মতপার্থক্য নিরসন, সকল দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এছাড়া উভয় দেশ ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত একটি নিরাপত্তা চুক্তি সচল করতে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে সন্মত হয়েছে। ত্রিদেশীয় এই সংলাপটি হয়েছে অত্যন্ত গোপনে ও আকস্মিকভাবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি গত ডিসেম্বরে সউদী সফর করেন। এছাড়া, তাঁর আমন্ত্রণে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি গত মাসে চীন সফর করেন। এ দুই সফল সফরের সময়ই উক্ত চুক্তির ভীত রচিত হয়েছে বলে অনুমেয়।

ইরান-সউদী সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চুক্তিটি ইতোমধ্যেই ঐতিহাসিক বলে খ্যাত হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক এই চুক্তিকে অস্বাভাবিক ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষ ছাড়াও সমগ্র মুসলমান এবং অন্য ধর্মের শান্তিপ্রিয় মানুষ খুবই খুশি হয়েছে। বাংলাদেশসহ বহু দেশ ও গণ্যমান্য ব্যক্তি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস তাঁর মুখপাত্রের মাধ্যমে এক বিবৃতিতে ইরান ও সউদী আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনায় সহায়তার জন্য চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এই বৈঠকটি আয়োজন ও সমর্থন করায় সউদী আরব ও ইরান চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। বিষয়টি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। বিষয়টি এখন টক অব দি ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয়েছে। আমরাও উক্ত চুক্তিকে স্বাগত এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে, এ ব্যাপারে উল্লসিত না হয়ে সদা সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ইরান-সউদীর সুসম্পর্কের কারণে মুসলিম দেশের, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পরিস্থিতিতে কিছু ওলট-পালট তথা নতুন বিন্যাস হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন সেখানে একাধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন মদদে ইসরাইলও একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। কিন্তু ইরান-সউদীর ঐতিহাসিক চুক্তিতে চীনের মধ্যস্থতার কারণে সেখানে চীনের প্রভাব বাড়বে। ইরানেরও শক্তি বাড়বে। তাই এই চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের কূটনৈতিক অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছেন প-িতরা। হিজবুল্লাহর উপ মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম বলেছেন, তেহরান ও রিয়াদ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট। সেই সঙ্গে ইরান ও সউদী নাগরিকদের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের জনগণও এই সম্পর্ক থেকে উপকৃত হবে। জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন বলেছে, রিয়াদ ও তেহরানের রাজনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রবর্তন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তরেই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া,পশ্চিম এশিয়া ও ইসলামী বিশ্বের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতিতেও পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, চীনের ভূমিকা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা জোরদার এবং স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রত্যাশী সব দেশের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, চীন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাস্তবায়নে তার অবদান অব্যাহত রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্প্রতি বলেছে, বিশ্বে ওয়াশিংটনের প্রভাব কমে যাচ্ছে এবং ইরান, চীন ও রাশিয়াসহ অন্য শক্তিগুলোর প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। তবুও মধ্যপ্রাচ্যে চীনের নতুন অভ্যুদয়কে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সহজে মেনে নিবে না। ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কার্বি বলেছেন, ইরান তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করবে কিনা, সেটা দেখতে হবে। এশিয়া টাইমসে প্রকাশ, ইরান-সউদীর সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চুক্তি পশ্চিমা বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকারদের হতবাক করছে। বিবিসিতে প্রকাশ, চীনের মধ্যস্থতায় ইরান-সউদীর সমঝোতা ওয়াশিংটনে মারাত্মক অস্বস্তি তৈরি করেছে। তাই উক্ত চুক্তি ভ-ুল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া, উক্ত চুক্তির কারণে ওপেকের উপর মার্কিন খবরদারি খর্ব হয়েছে। তাই ওপেক নিয়েও দেশটি নতুন ষড়যন্ত্র করতে পারে তেল ভান্ডার করায়ত্তে রাখতে। অপরদিকে, ইরানের শক্তি বৃদ্ধির কারণে ইসরাইল অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। ভোয়ার খবরে প্রকাশ, ইরানের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সউদীর আকস্মিক পদক্ষেপ, ইসরাইলের সাথে দেশটির নাজুক কূটনৈতিক তৎপরতায় একটি নতুন, জটিল আবরণ যুক্ত করেছে। তাই উক্ত চুক্তিকে নস্যাৎ করার জন্য ইসরাইল যুদ্ধও বাঁধাতে পারে। তাই এসব সম্ভাব্য ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা দরকার।

স্মরণীয় যে, বর্তমানে বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি, যা জাতিগতভাবে তৃতীয়। কিন্তু মুসলমানের জন্মহার সর্বাধিক এবং ক্রমশ নও মুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্বল্প দিনের মধ্যেই মুসলিমদের সংখ্যা জাতিগতভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছবে। অতঃপর এক পর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠে পরিণত হবে। কিন্তু আধুনিক যুগে কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটির গুরুত্ব বেশি। এ ক্ষেত্রে মুসলমানরা সর্বাধিক পিছিয়ে আছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই। এ অবস্থার প্রধান কারণ-অনৈক্য। মুসলমানরা শিয়া-সুন্নি ও নানা মাজহাবে বিভক্ত, যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিভেদ, দ্বন্দ্ব ও হানাহানি। উপরন্তু যুদ্ধও। এ অবস্থা চলছে বহু বছর যাবত, যা আর্থিকসহ সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ার প্রথম কারণ। যার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে বিধর্মীরা। তারা মুসলমানদের ইচ্ছা মতো শাসন, শোষণ, নির্যাতন ও হত্যা করছে। সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি মুসলিম দেশকে ধ্বংস এবং বহু লোককে হত্যা করেছে। অথচ মুসলিমরা একদা কয়েক শ’বছর বিশ্বের বেশিরভাগ এলাকা শাসন করেছে। আধুনিক বিশ্বের ও জ্ঞান-বিজ্ঞানেরও সূচনা ঘটিয়েছে।কিন্তু সেই বীরের জাতি কাল পরিক্রমায় দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়েছে! অথচ বিশ্বের মোট সম্পদের ৬০% রয়েছে মুসলিম দেশগুলোতে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ, জ্ঞান ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবে তার সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, মুসলিমদের মধ্যে যারা শিক্ষিত ও ধনী, তাদের অধিকাংশই সেসব সম্প্রদায়ের পিছনে ব্যয় না করে নিজেদের ভোগ বিলাসে ব্যয় করছে। এছাড়া, গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাব তো রয়েছেই। তাই সার্বিকভাবে উন্নতি হচ্ছে না। অন্যদিকে, মুসলিমদের অধিকাংশই ইসলামী নীতির চেয়ে রীতি নির্ভর ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়ায় তাদের ঈমানী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আবার অনেকেই শত্রুদের নানা প্রলোভনে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হয়েছে। এতে সমগ্র মুসলিম জাতির শান্তি, উন্নতি ও ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে।

মুসলমানদের এ চরম দুর্দিনে ইরান-সউদীর সম্পর্কোন্নয়নের চুক্তি ঘোর অন্ধকারে আলোক বর্তিকা হিসাবে দেখা দিয়েছে। কারণ, দু’শক্তিশালী দেশের সুসম্পর্কের কারণে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব এবং কয়েকটি দেশের যুদ্ধ-সংকট দূর হবে অচিরেই। উপরন্তু মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি জোরদার হবে। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য পরাশক্তি হতে হবে। মুসলমানদের সংখ্যা, আর্থিক ও সামরিক শক্তি এবং অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরাশক্তি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। শুধু প্রয়োজন উদ্যোগ, সাহস, বিচক্ষণতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। তবে, সর্বাগ্রে প্রয়োজন-নিজেদের দৃঢ় ঐক্য ও সম্প্রীতি। অর্থাৎ যে আল্লাহ ও তার রসুলকে মানে ও বিশ্বাস করে সেই মুসলমান, সেই-ই আপন। তাই কে শিয়া, কে সুন্নি, কে কোন মাজহাবের তার বাছবিচার না করে মুসলিম হিসাবে সকলের একাট্টা হতে হবে। অতঃপর সকলকে খাঁটি ঈমানদার হতে হবে। এছাড়া, সব মুসলিমকেই ধর্ম ও কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে মানসম্মতভাবে। আবিষ্কার ও গবেষণায়ও অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি শরিয়া আইন মেনে নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, মা শিক্ষিত না হলে সন্তানের শিক্ষার সমস্যা হয়। ধর্মীয় উগ্রতা, রীতি ও কুসংস্কার আন ইসলামিক। তাই এসব ত্যাগ করতে হবে। আন্তঃমুসলিম দেশের মধ্যে সংকট সৃষ্টি অনাকাক্সিক্ষত। তবুও কোন সংকট সৃষ্টি হলে তা ওআইসির মাধ্যমে নিরসন করতে হবে। এছাড়া, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম দেশের পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। সব মুসলিম দেশেই দেশীয় সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে স্বীয় প্রচেষ্টায়। উপরন্তু ব্যবসা, বিনিয়োগ, পর্যটন ও কর্মসংস্থান করতে হবে নিজেদের মধ্যে। তবেই ব্যাপক উন্নতি হবে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দারিদ্র দূর হবে। সর্বোপরি সব মুসলিম দেশকেই সাধ্য মতো আধুনিক সামরিক শক্তি বাড়াতে হবে। কারণ, আধুনিক সমরাস্ত্রকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ছাড়া মোকাবেলা করা যায় না। প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন ছাড়া ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং সার্বিক ও টেকসই উন্নতি হয় না। তাই এদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আধুনিক যুগে মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তবুও মুসলমানদের আন্তর্জাতিক মানের মিডিয়া তেমন নেই। ফলে বেশিরভাগ মুসলমান বিধর্মীদের মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এসবের অধিকাংশই ইসলাম বিদ্বেষী। তাই তারা অনবরত ইসলাম ভীতি ছড়াচ্ছে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এটা মোকাবেলা এবং সত্য ঘটনা, মুসলমানের উন্নতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রকাশ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের অনেক মিডিয়া করতে হবে। শিল্প-সাহিত্যেও উন্নতি ঘটাতে হবে।

মুসলমানদের শুধুমাত্র সংখ্যায় বেশি হলেই চলবে না, সে সাথে ঈমান, সুশাসন, শিক্ষা, শক্তি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, বলিষ্ঠ নেতৃত্বসহ সব ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠ হতে হবে। তবেই অচিরে ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। পরাশক্তিতেও পরিণত হতে হবে। তখন আর কেউ মুসলমানদের শাসন, শোষণ, নির্যাতন, হত্যা করার সাহস পাবে না। বরং সমীহ করে চলবে। ফিরে আসবে মুসলমানদের গৌরবময় অতীত।

লেখক:সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক
ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা
গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?
জেনারেল এসির নামে প্রতারণা
সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দিন
আরও
X

আরও পড়ুন

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি  নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে  -মিজান চৌধুরী

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি  নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে  -মিজান চৌধুরী

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

কূট-কৌশলে ‌ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র

কূট-কৌশলে ‌ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক

ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা

ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা

উইন্ডিজের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: নিগার

উইন্ডিজের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: নিগার

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

জেনারেল এসির নামে প্রতারণা

জেনারেল এসির নামে প্রতারণা

ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ

ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ

নোয়াখালীতে ব্রা‌ন্ডের নকল বস্তায় চাউল প‌্যা‌কেট ক‌রে বি‌ক্রি ;ভোক্তা অ‌ধিকা‌রের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে ব্রা‌ন্ডের নকল বস্তায় চাউল প‌্যা‌কেট ক‌রে বি‌ক্রি ;ভোক্তা অ‌ধিকা‌রের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

মুক্তির অপেক্ষায় মিজানুর রহমান লাবুর সিনেমা আতরবিবিলেন

মুক্তির অপেক্ষায় মিজানুর রহমান লাবুর সিনেমা আতরবিবিলেন

সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা আমাকে শান্তি দিয়েছে :বাঁধন

সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা আমাকে শান্তি দিয়েছে :বাঁধন