ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:০০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২২ পিএম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতকে বাণিজ্য ও অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিল্পোৎপাদন, খাদ্য সংস্থান ও জীবনযাত্রার অবিচ্ছিন্ন অনুসঙ্গ বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে ফসিল জ্বালানির অতি ব্যবহার এখন বিশ্বের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশ্বের উষ্ণায়ণ, জলবায়ুর পরিবর্তন, হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধিসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ফসিল জ্বালানি থেকে উদ্ভূত পরিবেশ দূষণকেই মূলত দায়ী করা হয়। এ কারণেই চলতি শতকের শুরু থেকেই টেকসই উন্নয়ন ধারণার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে বিশ্বসম্প্রদায়ের মনোযোগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ, প্রায় শতভাগ আমদানি নির্ভর কয়লা ও পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানির বিদ্যুৎখাতকে টিকিয়ে রাখতে দেশকে এখন চরম সংকট পোহাতে হচ্ছে। সামগ্রিক বাস্তবতায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের উন্নয়নই হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি আদর্শ বিকল্প। গত একযুগে দেশের চাহিদা অনুপাতে বিদ্যুৎখাতের উৎপাদন সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় দেশের মানুষকে এখনো প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লোডশেডিংয়ের ধকল পোহাতে হচ্ছে।

চলতি বছরের প্রথম দুইমাসে একাধিকবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতির গতিকে আরো বেগবান করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকাসহ বাংলাদেশের নগরীগুলো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর জনপদ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, বর্জ্যব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা এবং কয়লাসহ ফসিল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বায়ু দূষণে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। গতানুগতিক ধারার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচের ক্রমবৃদ্ধি একদিকে দেশের অর্থনীতির উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে বায়ু ও পরিবেশ দূষণ জনস্বাস্থ্যের উপর বহুমুখী বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিরসমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে জ্বালানিখাতে বছরে শত শত কোটি ডলারের চাপ, বায়ু ও পরিবেশ দূষণের ঝক্কি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে এ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও উৎসাহব্যঞ্জক তথ্য উঠে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসার্চের গবেষণা রিপোর্টের আলোকে প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে অন্তত ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলে বছরে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার সাশ্রয়ের পাশাপাশি বায়ু ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্বন নিঃসরণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

সবচেয়ে অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ চীন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। চীন বর্তমান ৩ লাখ ৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, যা তার সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা ৩৫ ভাগের বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১ লাখ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করে থাকে, যা তার চাহিদার ১১ ভাগের বেশি, জাপান, জার্মানি এবং ভারতের মতো অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশগুলো সৌর, পানি ও বায়ু থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়িয়ে ফসিল জ্বালানির বিরূপ প্রভাব ও আমদানি নির্ভরতা ও অর্থনৈতিক চাপ কমিয়ে আনতে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছে। সেখানে আমরা সৌরবিদ্যুতের মতো পরিবেশবান্ধব, অর্থসাশ্রয়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী, আমদানিনির্ভর কয়লা বিদ্যুতের দিকেই ঝুঁকে আছি! ধান চাষের জন্য লাখ লাখ সেচযন্ত্র এবং শিল্পকারখানার শেডের উপর সৌর প্যানেল বসিয়ে দেয়া হলে তা জাতীয় জ্বালানি খাতের উপর কী ধরনের ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসার্চের রিপোর্টেও তা উঠে এসেছে। বিশ্বে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর তালিকায় প্রথম ২০টি দেশের সারিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা, ক্লাইমেট চেঞ্জসহ পরিবেশের উপর ফসিল জ্বালানির ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুতের মতো বিকল্প ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিতেই হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান