সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নজিরবিহীন একতরফা নির্বাচন ও দেশের ভাবমর্যাদা
১৭ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ এএম
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় যা ঘটেছে, তা এককথায় নজিরবিহীন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে সক্রিয়তা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা ধাক্কা-ধাক্কি, হাতাহাতির পর্যায়ে যাবে, সেটা অপ্রত্যাশিত। অথচ, তাই ঘটেছে। আইনজীবীরা আইনের মানুষ, উচ্চ শিক্ষিত এবং জনসাধারণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের অনিবার্য ভূমিকার কথা কারো অজানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্যে থেকে প্রধানত হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তারাই চূড়ান্ত বিচার নিষ্পন্ন করেন। সেই আইনজীবীদের আচরণই যদি মারাদাঙ্গা হয়, পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তারা কার্পণ্য দেখান, তাহলে তাদের ও অন্যদের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায়? অতীতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা গেলেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। এক সময় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নজির তুলে ধরতে গিয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন ও আইনজীবী সমিতিসমূহের নির্বাচনের কথা বলা হতো। বলা হতো, প্রকৃত নির্বাচন একেই বলে। এখন আর একথা জোরের সঙ্গে বলার উপায় নেই। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন নিয়ে দু’দিন যে কা--কীর্তি হয়েছে, তাতে নির্বাচনী ব্যবস্থাই সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অংশ নেননি। দু’দিনের নির্বাচন ব্যাপক পুলিশ প্রহরার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাই একতরফা ভোট দিয়েছেন।
নির্বাচন ঘিরে পুলিশের ভূমিকা ও আচরণ সঙ্গতভাবেই ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। নির্বাচনের প্রথম দিন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভোট কেন্দ্র থেকে পুলিশ বের করেই দেয়নি, তাদের গায়ে হাতও তুলেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকদেরও বেধড়ক মারধর করেছে। তাদের ক্যামেরা-মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়েছে। ১০-১২ জন সাংবাদিক ওইদিন পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ভোট একতরফা করার ক্ষেত্রে পুলিশের সক্রিয় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। দ্বিতীয় দিনও পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির আইনজীবীরা দু’দিনের ভোট চিত্র আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সামনে তুলে ধরেছেন। সেখানে পুলিশের ভূমিকাও উল্লেখ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে পুলিশ যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, একতরফা কাজকর্ম করেছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও তারই পুনরাবৃত্তি করেছে। গত ১৪ ও ১৫ বছর পুলিশে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে এখন অনেক পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা গর্ববোধ করে। তারা রাষ্ট্রীয় বা পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেয়ে দলীয়কর্মীর দায়িত্ব পালনে অধিকতর আগ্রহী। কারণ, এতে প্রদত্ত প্রমোশনের জন্য কোনো চিন্তা করতে হয় না। পুলিশ সাংবাদিকদের ব্যাপারে বরাবরই বিরূপ আচরণ প্রদর্শন করে থাকে। অথচ, সাংবাদিকতা ও পুলিশের কাজের মধ্যে প্রকৃত ও চেতনাগত মিল অনেক বেশি। তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব থাকা উচিত। একে অপরের সহযোগী ও সহায়ক হওয়া উচিত। পুলিশের দিক থেকে এসব ব্যাপারে দুঃখজনক ঘাটতিই লক্ষ করা যায়। নির্বাচনসহ দলীয় বিভিন্ন স্বার্থে পুলিশকে যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে পুলিশের প্রতিষ্ঠানগত দুর্নাম ও অখ্যাতি যেমন বাড়ছে, তেমনি ভাবমর্যাদাও ক্ষুণœ হয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, হেফাজতে মৃত্যু, মানবাধিকার লংঘন, মানুষের উপর দমন-পীড়ন, অন্যায়-দুর্নীতি, ঘুষ-চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা থেকে পুলিশ মুক্ত। পুলিশের এরূপ পরিচিতি, ভূমিকা ও আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্নের অবধি নেই। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রভৃতি সংস্থা ও দেশের তরফে বিভিন্ন সময় বিরূপ ও সমালোচনামূলক মন্তব্য করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তো র্যাব ও তার কতিপয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বরাবরাই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারা প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা রহিত করা তাদের দাবি। তারা এ নিয়ে সবকারের পর ওপর নিরন্তর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, তাদের চাপ তত বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বেনজির একতরফা নির্বাচন কী বার্তা দিলো? এই সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন তো বটেই, এমনকি, সংঘ-সমিতির নির্বাচনও সম্ভব নয়। এটা সরকারের ইমেজের জন্য, দেশের ইমেজের জন্য যে অত্যন্ত হানিকর, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমন কোনো সুখবর নেই। এমতাবস্থায়, বহির্বিশ্বের সহযোগিতা, উন্নয়ন অংশীদারদের সহায়তা খুবই দরকার। এ জন্য দেশের ও সরকারের গুড ইমেজের কোনো বিকল্প নেই। সরকার এ দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবে বলে আমরা আশা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আশ্বাস, হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-বাইডেন বৈঠক
ভারত-পাকিস্তান বিরোধ: আইসিসিকে যে পরামর্শ দিলেন রশিদ লতিফ
পুরস্কারের অর্থ এখনও বুঝে পাননি অনেক ক্রিকেটার
গাজায় যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিৎ : অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন
আবারও ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান
শীতে এই ৫টি জিনিস ব্যবহারে ত্বক দেখে মুগ্ধ হবে সবাই!
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি ছাড়লেন শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই
প্রতিরক্ষামূলক টানেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে ইরান
আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’
তারুণ্যের প্রভিভা অনুসন্ধানে আসছে রক রিয়েলিটি শো "দ্য কেইজ"
মন্দ কাজের সমালোচনায় সরব থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
বশির-ফারুকীকে অপসারণসহ ৯ দাবি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ১২
হত্যা মামলায় ভোলার সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
ঘোড়াঘাটে শ্বাসরোধে যুবকের মৃত্যু, হত্যাকান্ডের অভিযোগে স্ত্রী আটক
ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় নিহত ৪৭
করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে
হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষে নিহত ৬ ইসরাইলি সেনাসদস্য
রাত আড়াইটায় পঙ্গু হাসপাতালে মাহফুজসহ ৪ উপদেষ্টা, অতঃপর...
এবার বুকার পুরস্কার পেলেন ব্রিটিশ লেখক সামান্থা হার্ভে