বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া উচিত
০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৮ এএম
উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। বিজ্ঞান বিভাগ হতে পাশ করা ছেলেমেয়েদের সাধারণত প্রথম চয়েস থাকে মেডিকেল অথবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হওয়া। এসব জায়গায় চান্স না পেলে তখন তারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং উচ্চ শিক্ষা লাভে সেখানে পড়াশুনা করে।
মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগ থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে তাদের অনেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে অনার্স ও ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হয়। অপরদিকে আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ের অনার্স কোর্সে ভর্তি হয় এবং পড়াশোনা করে। অনেকে আবার উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি জমায় এবং সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে। এই হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের পরবর্তী ধাপের সংক্ষিপ্ত রূপ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করবে তাই এই সময়েই নির্ধারিত হয়ে যায়। যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের পর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়, তার পক্ষেই কেবল চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে একজন চিকিৎসক হওয়া সম্ভব। একইভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর পক্ষেই কেবল প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যয়ন করে প্রকৌশলী হওয়া সম্ভব। একইভাবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে কৃষি বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর পক্ষেই কেবল কৃষি বিদ্যা অধ্যয়ন করে কৃষিবিদ হওয়া সম্ভব। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাদ দেয়ার কারণে উচ্চ শিক্ষা লাভে কিছুটা হলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ না থাকায় অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের পছন্দ মতো বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ লাভে বঞ্চিত হয়। অনেক ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন কারণে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে না, ফলে তারা তাদের পছন্দের জায়গায় ভর্তি হতে পারে না এবং পছন্দের বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারে না। অথচ, দ্বিতীয়বার সুযোগ পেলে হয়ত এসব ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করত এবং তাদের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পছন্দের বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারত। আর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিলে এবং দ্বিতীয় সুযোগে পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পছন্দের বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তো ক্ষতির কিছুই নেই। যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তা দ্বিতীয় বারে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীরই হবে। কারণ, তারা এক্ষেত্রে শিক্ষাজীবনে এক বছর পিছিয়ে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয়বারে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীরা এক বছর পিছিয়ে যাবার মতো ক্ষতিটা হাসিমুখে মেনে নেয় এবং পছন্দের বিষয়ে পড়াশুনার জন্য এটি ছাড় দেয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ¯œাতক লেভেলে ভর্তির জন্য দ্বিতীয়বার সুযোগে দেয়া সঙ্গত ও উচিত।
এদেশে মেডিকেল ভর্তির জন্যই সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হয়। মেডিকেলে ভর্তির জন্য ছেলেদের মতো মেয়েরাও সমহারে আগ্রহী। কারণ, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা ছেলেমেয়ে সবারই প্রায় আজন্ম লালিত। আর পুরুষ এবং নারীর দৈহিক অবকাঠামো এবং গঠন প্রকৃতি যেহেতু ভিন্ন, সেহেতু পুরুষ এবং নারীর চিকিৎসার প্রয়োজনেই সম সংখ্যক পুরুষ এবং নারী চিকিৎসক প্রয়োজন। একারণেই মেডিকেলের ভর্তি যুদ্ধে ছেলেমেয়েরা সমান হারে অংশগ্রহণ করে। ইতোমধ্যেই ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ফলাফল ও প্রকাশিত হয়েছে। দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৪৩৫০টি আসনে ভর্তির জন্য প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকার কারনে প্রতিবছর বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং এতে পাশ করে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়। বরাবরের মতই এবারো দ্বিতীয় বার ভর্তির সুযোগে বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী দ্বিতীয়বারে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। ফলে অনেকের চিকিৎসক হবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এর মাধ্যমে এসব ছেলেমেয়ের মধ্যে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্ম হবে, যার মাধ্যমে আগামীতে এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং দেশের মানুষ চিকিৎসাসেবা পাবে। আর দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ দেয়ায় মেডিকেল কলেজ এবং এর কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়ই কোনো ক্ষতি হয়নি। একইভাবে প্রথমবারের ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে যারা এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়নি, তাদের অনেকেই কিন্তু পরবর্তী বছরে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবে। ফলে প্রথমবারে ডাক্তার হবার স্বপ্ন বঞ্চিত অনেকেই পরবর্তীতে ডাক্তার হবার সুযোগ পাবে। মেডিকেল ভর্তিতে দ্বিতীয় বার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখায় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ পাবার দাবিদার।
বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট এবং রুয়েটে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার নিয়ম নেই। অর্থাৎ দ্বিতীয়বারে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ ভর্তি হতে পারে না, যার কারণে প্রথমবারে চান্স না পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা আর প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশুনার সুযোগ পাবে না। অথচ, আগে দীর্ঘ সময় ধরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারে ভর্তির সুযোগ ছিল এবং এই সুযোগে বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী দ্বিতীয়বারের ভর্তি পরীক্ষায় সফল হয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রকৌশলী হয়েছে, যারা দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন সেক্টরে আজ নেতৃত্ব দিচ্ছে। দ্বিতীয়বারে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রকৌশলী হওয়াদের অনেকেই বিদেশের মাটিতেও নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয়বারে ভর্তির সুযোগ বন্ধ করার কারণে অনেকের যোগ্যতা এবং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা আর প্রকৗশলী হতে পারছে না। কারণ, তারা প্রথমবারে চান্স পায়নি। ফলে দেশ অনেক যোগ্য প্রকৌশলীর সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে, যারা দ্বিতীয়বার সুযোগ পেলে হয়ত প্রকৌশলী হতে পারত। এ অবস্থায় দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই বুয়েট, চুুয়েট, কুয়েট এবং রুয়েট কর্তৃপক্ষকে ছাত্রছাত্রীদের দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ দেয়া উচিত। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অনেকগুলোতেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। গত বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ ছিল না। তবে এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে এবং এবার দ্বিতীয়বারে ভর্তির সুযোগ দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রছাত্রীদের দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে বলে আমরা আশা করি।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার উন্নতিতেই জাতির উন্নয়ন। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানেই উন্নয়নে পিছনে পড়া। আর শিক্ষা অর্জনের অধিকার একজন মানুষের জন্মগত, কারো দয়া নয়। তাই এমন কোন নিয়ম চালু করা ঠিক নয়, যার কারণে ছাত্রছাত্রীরা তাদের কাক্সিক্ষত শিক্ষা অর্জনে বঞ্চিত হবে। আর প্রথমবার ব্যর্থতা মানে কিন্তু চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া নয়। প্রথমবারে ব্যর্থ হওয়াদের অনেকেই দ্বিতীয় বার সফল হয়েছে, পেশাগত জীবনে সফল হয়েছে।
লেখক : প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
ফের কমলো সোনার দাম
সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক
২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ