আমেরিকা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে
২৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৪ পিএম
আমেরিকা ক্রমান্বয়ে কোন ঠাসা হয়ে পড়ছে। একের পর এক মিত্ররা সরে গিয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে ঝুঁকছে, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও ব্রাজিলের কর্মকা-। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই বাকী মিত্ররাও আমেরিকার মিত্রতা ত্যাগ করতে পারে। সেটা হলে আমেরিকার পরাশক্তিত্ব শেষ হয়ে বিশ্ব বহুমেরুকেন্দ্রিক হবে, নাকি চীন-রাশিয়াকেন্দ্রিক হবে, তা বলা কঠিন। বিশ্বের এই পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছে চীন। দেশটি অত্যন্ত গোপনে ও আকস্মিক মধ্যপ্রাচ্যের দুই বড় ও প্রচ- বৈরী শক্তি-ইরান ও সউদী আরবের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের চুক্তিতে মধ্যস্থতা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যা সংঘটিত হয়েছে গত ১০ মার্চ বেইজিংয়ে। উক্ত চুক্তির পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটছে। শত্রুতা ত্যাগ করে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে দেশগুলো। ইরান ও সউদী আরব পারস্পরিক দুতাবাস খুলেছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সরাসরি ফ্লাইট চালুর চুক্তি করেছে। বাকী কর্মও করার প্রক্রিয়া চলছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট সউদী বাদশাকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইয়েমেনে দীর্ঘ দিনের যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইরান সমর্থিত হুতি ও সউদী সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। উপরন্তু দুই পক্ষের প্রায় ৯০০ বন্দি বিনিময় শুরু হয়েছে আইসিআরসি’র মাধ্যমে। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে সংঘাত শুরু হয়। ২০১৫ সালে এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সউদী নেতৃত্বাধীন ৯ দেশের সামরিক জোট। দীর্ঘ এ যুদ্ধে ইয়েমেন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, কয়েক বছরের যুদ্ধে ইয়েমেনে কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং ৩ কোটি জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কাতার ও বাহরাইনের মধ্যে তিক্ততা ভুলে সুসম্পর্ক গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। গত ১২ এপ্রিল রিয়াদে বৈঠক করেছেন বাহরাইন ও কাতারের প্রতিনিধিরা।তাতে উভয়েই সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠায় সন্মত হয়েছেন। এর আগে এ বছরের জানুয়ারিতে বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স এবং কাতারের আমির ফোনে কথা বলেছেন।মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি বৈঠক করেছেন আমিরাতের আমিরের সঙ্গে। ২০১৭ সালে সউদী আরবের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বাহরাইন, আমিরাত ও মিসর। তারা কাতারের ওপর কূটনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল ইরান-কাতার কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগে। যা অস্বীকার করেছিল কাতার। তাই ২০২১ সালে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক পুন:স্থাপন করে সউদী আরব, আমিরাত ও মিসর। তবে আমিরাত ও কাতার নিজ নিজ দূতাবাস খোলেনি। যা এখন খুলতে চলেছে। দীর্ঘ ১১ বছর পর সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সউদী আরব সফর করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন গত ১২ এপ্রিল। বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল ৯টি আরব দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন জেদ্দায়। তাতে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সউদী আরব বলেছে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সম্মত হয়েছেন আরব দেশগুলোর নেতারা। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দেশটি ধ্বংস হয়ে গেছে।উপরন্তু এ পর্যন্ত মৃত্যু প্রায় ৫ লাখ ও বাস্তুচ্যুৎ হয়েছে ১.৪ কোটি মানুষ। হামাসের শীর্ষ নেতারা সউদী আরব সফর করেছেন সম্প্রতি। তাতে দুই পক্ষই সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে আকস্মিক ব্যাপক পালাবদল ঘটছে ড্রাগন যাদুতে। আমেরিকা তা চেয়ে চেয়ে দেখছে। আর ভাবছে দীর্ঘদিন থেকে জেঁকে বসে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের রাজত্ব হাতছাড়া হয়ে চীনের দখলে যাচ্ছে।বিবিসির সাম্প্রতিক একটি খবরের শিরোনাম হচ্ছে, আমেরিকা ছেড়ে চীনের সাথে গাঁটছড়া বাঁধছে সউদী আরব। মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনে ইসরাইলও আতঙ্কিত হয়েছে।কারণ,এই পরিবর্তনে সর্বাধিক লাভবান হচ্ছে ইসরাইলের প্রধান শত্রু ইরান ও দ্বিতীয় শত্রু সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আমেরিকা ও তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্ররা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ২০১১ সাল থেকে। আর আসাদকে সহায়তা করছে রাশিয়া ও ইরান।ফলে সেখানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে। তাতে আসাদ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ফলে আরব লীগে তার পুন:প্রত্যাবর্তন ঘটতে চলেছে। সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সিরিয়া সফরে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ইসরাইলকে টিকে থাকতে হলে বিশ্ব কর্তৃক স্বীকৃত দুই রাষ্ট্র নীতি ও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পূর্বের সীমান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ১৭ এপ্রিল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের সাথে ফোনালাপে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সে সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের’ ভিত্তিতেই শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে। এই দুই রাষ্ট্র সমাধানের চুক্তি হয়েছিল আমেরিকার মধ্যস্থতায়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আমেরিকা। মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দেশগুলোর নতুন সম্পর্কোন্নয়ন এবং নতুন মেরুকরণের কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ছাড়াও সমগ্র মুসলমানের ও বিশ্বের কল্যাণ হবে। আরব লীগকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে পারলে কল্যাণ সর্বাধিক হবে।
অন্যদিকে,গত ১৩ এপ্রিল তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ও সহযোগিতা পর্যালোচনা করার জন্য সমরকন্দে চতুর্থ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও তালেবানের। অর্থাৎ মধ্য এশিয়ার প্রবেশদ্বার আফগানিস্তানে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আমেরিকা ও তার মিত্ররা পাততাড়ি গুটিয়েছে আর সেখানে ইন করেছে চীন-রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নারীর পূর্ণ মর্যাদা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে পারে।গত ১৪ এপ্রিল বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তাতে শি বলেন, টেকসই সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক নিশ্চয় আঞ্চলিক ও বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে ইতিবাচক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর লুলা বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ব্রাজিল ও চীনের অভিন্ন মতামত ও স্বার্থ রয়েছে। উভয় পক্ষই বহুপাক্ষিকতা এবং আন্তর্জাতিক সমতা ও ন্যায়বিচারকে সমর্থন করে। উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছে ইউক্রেন সংকট নিরসনে সংলাপ এবং আলোচনাই একমাত্র সম্ভাব্য উপায় এবং এর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সহায়ক সকল প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত ও সমর্থন করা উচিত। অর্থাৎ চীন ও ব্রাজিলের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। উপরন্তু লুলা পরবর্তীতে বলেন,‘যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন যুদ্ধকে উৎসাহিত করা বন্ধ করতে হবে এবং শান্তির বিষয়ে কথা বলতে হবে। ইইউকেও তাই করতে হবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ১৭ এপ্রিল ব্রাজিল সফরে গিয়ে বলেন, ইউক্রেন পরিস্থিতির উৎপত্তি কোথায় তা ভালোভাবে বুঝতে পারার জন্য আমরা আমাদের ব্রাজিলীয় বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা এর নিষ্পত্তির উপায় খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউক্রেনের সংঘাতের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ‘আগ্রহী’। এর প্রতিত্তোরে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ব্রাজিল বাস্তবতার দিকে না তাকিয়ে রুশ-চীনা প্রচারণাকেই তোতা পাখির মতো আওড়িয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে,রাশিয়া বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের অবরোধে শামিল হয়নি ব্রাজিল। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি রাশিয়া সফরকালে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও অন্য উর্দ্ধতন নেতাদের সাথে বৈঠক খরেছে।তাতে উভয়েই সামরিক সহযোগীতা বাড়াতে সন্মত হয়েছে। এদিকে, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পুতিন গত ১৭ এপ্রিল ইউক্রেনের খেরসন ও লুহানেস্কের যুদ্ধাঞ্চল পরিদর্শন করেন। ইউক্রেন বলেছে, পুতিন তার দোসরদের করা অপরাধ উপভোগ করার জন্য ইউক্রেনের অধিকৃত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ভূখ-গুলো সফর করছেন।
আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে কোণঠাসা হওয়ার পর সব চেয়ে বড় ও অবিশ্বাস্য ধাক্কা খেতে চলেছে ইউরোপে। ফ্রান্স দীর্ঘদিনের গভীর সম্পর্কের দেশ আমেরিকাকে ছেড়ে চীনের দিকে ঝুঁকেছে। চলতি মাসের শুরুতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো ও ইইউ’র প্রধান উরসুলা চীন সফর করেন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে বৈঠক করেন। বাণিজ্য ও সম্পর্ক বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই এই সফর। উভয় পক্ষই বলেছেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। এর পর ম্যাক্রো গত ১১ এপ্রিল নেদাল্যান্ডে বলেন,নিজস্ব পরিচয় বজায় রাখতে হলে ইউরোপকে বাইরের জগতের উপর নির্ভরতা কমাতেই হবে। অর্থাৎ নিজস্ব স্বার্থ অনুযায়ী, সহযোগী বাছাই এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদেরই বেছে নেবার পথে এগোতে হবে। এরপর তিনি হল্যান্ডে গিয়ে বলেন, তাইওয়ান প্রশ্নে ক্রীতদাসের মতো মার্কিন নীতি অনুসরণ করবে না ফ্রান্স। ম্যাক্রোর এসব বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক বিতর্ক চলছে।কারণ,জার্মানীর প্রাক্তন চ্যাঞ্চেলর ম্যার্কেলের অবসরের পর বর্তমানে ম্যাক্রোই হচ্ছেন ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা।ম্যাক্রো চীন সফরকালে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চীনের শান্তি প্রস্তাবের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।কারণ,এ যুদ্ধে ইউরোপও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে রাশিয়ার জ্বালানী বন্ধ হওয়ায়।তাই তারা দ্রুত যুদ্ধের অবসান চাচ্ছে। বিশ্ববাসীরও কামণা যুদ্ধ বন্ধ। তাই যুদ্ধের চেয়ে চীনের শান্তি প্রস্তাব বেশি আলোচিত হচ্ছে। রাশিয়া বলেছে,তার দখলকৃত এলাকার স্বীকৃতি পেলে চীনের শান্তি প্রস্তাব মেনে নিতে আপত্তি নেই। ন্যাটোর দ্বিতীয় শক্তিশালী দেশ তুরস্ক বলেছে,রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধে তারা নেই। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন,আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে আধা ঘন্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেত। আর সেটা রাশিয়ার অনুকূলেই যেত নি:সন্দেহে। কারণ,বিশ্বের সকলেই জানে ট্রাম্প পুতিনের খুবই ভক্ত। উপরন্তু পুতিনের সহযোগিতাতেই ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এ অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চীনের শান্তি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেটা হলে ইউক্রেনের পরাজয় হবে। সে সাথে আমেরিকা ও তার মিত্রদেরও। কারণ,তারা ইউক্রেনের পক্ষে ছায়া যুদ্ধ করছে। অন্যদিকে, ইউরোপ যদি আমেরিকার মিত্রতা ত্যাগ অথবা নির্ভরতা হ্রাস করে,তাহলে বিশ্বে আমেরিকার প্রভাব ব্যাপক হ্রাস পাবে। কারণ,আমেরিকার প্রধান বরকন্দাজ ইউরোপ। ইরান সম্প্রতি বলেছে, এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা তার অস্তিত্ব হারিয়েছে এবং নতুন একটি শক্তি জেগে উঠছে। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রভাব হারিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য,জি-৭ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত ১৮ এপ্রিল এক বিবৃতিতে ইউক্রেনে হানা দেওয়ার জন্য রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি,এক চীন নীতিতে অবিচল থাকা ও তাইওয়ান প্রণালিতে চীনের কর্মকা-ের জন্য বেইজিংয়ের নিন্দা জানিয়েছেন।
তাইওয়ান প্রণালীতে সম্প্রতি চীন ব্যাপক সামরিক মহড়া চালিয়েছে।এর পরপরই আমেরিকা ও ফিলিপাইন যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে।উপরন্তু তাইওয়ানকে ৪০০ জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া প্রক্রিয়া করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই চীনের মহড়া শেষ হলেও যুদ্ধাস্ত্র সরাবে না বলে জানিয়েছে। আমেরিকার প্রাক্তন স্পীকার পেলোসির তাইওয়ান সফর এবং সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং দেশটির স্পিকার ম্যাকার্থির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ প্রেক্ষিতে, চীন চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে। এছাড়া, চীন সব সময় বলে থাকে তাইওয়ান তার দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবুও আমেরিকা তাইওয়ান নিয়ে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে।কিন্তু ইইউ প্রধানও সম্প্রতি বলেছেন,তাইওয়ান ইস্যুতে ইইউয়ের ‘এক চীন নীতির’ পক্ষে অবস্থান দীর্ঘদিনের। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশও এক চীন নীতির পক্ষে। তাই তাইওয়ান নিয়ে আমেরিকা খুব বেশি পানি ঘোলা করতে পারবে না। বরং তাইওয়ান আচমকা ব্যাপক আক্রমণ ও দখল হতে পারে চীনের দ্বারা।
বিশ্ব বাণিজ্যের বেশিরভাগই হয় মার্কিন ডলারে। এছাড়া, বিশ্বের ব্যাংকগুলোর মোট রিজার্ভের ৭০% ডলারের দখলে। কিন্তু সম্প্রতি সেই ডলারকে বাদ দিয় নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করার প্রবণতা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে চুক্তি হয়েছে সম্প্রতি। আশিয়ান নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করার আলোচনা করছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করার জন্য ব্রিকস দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিকস জোটের মোট জিডিপি আমেরিকার চেয়ে বেশি, বিশ্ব জনসংখ্যার ৪১%, বিশ্ব জিডিপির ২৪% ও বিশ্ব বাণিজ্যের ১৬%। বাংলাদেশ-ভারত নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীনের মুদ্রা ইউয়েনে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধ করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সিঙ্গাপুরসহ ১৮টি দেশের সঙ্গে রূপিতে লেনদেনের চুক্তি করেছে ভারত। রাশিয়া ঘোষণা করেছে, তার সাথে বাণিজ্য করতে হলে রুবলে করতে হবে। এতে দেশটির বাণিজ্য কমেনি, বরং বেড়েছে। অর্থাৎ মার্কিন ডলারেরও রাজত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ