জলদস্যুদের নির্মূল করতে হবে
০৫ মে ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ পানিসীমার নিরাপত্তা দিন দিন অবনতি ঘটছে। দস্যুদের উৎপাত এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, জেলেরা নিরাপদে মৎস্য শিকার করতে পারছে না। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে দস্যুরা হামলা চালিয়ে জেলেদের মাছ ও জাল ছিনিয়ে নিচ্ছে। কখনো কখনো জেলেদের হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে দশ জেলের মৃতদেহসহ একটি ট্রলার ভেসে এসেছে। ভয়াবহ এ ঘটনার এখনও কোনো কূল-কিনারা হয়নি। তবে দস্যুরা যে এ কাজ করেছে, তা আন্দাজ করা হচ্ছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানিয়েছে, তারা সবসময় আতঙ্কে থাকে। সাগরে কে দস্যু, কে জেলে তা চিনতে না পারাসহ প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও উপকূলে সিন্ডিকেটের কারণে ভয়াবহ অনেক ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। দস্যুদের অস্ত্রের কাছে অসহায় অবস্থায় জেলেদের দিন কাটছে। তাদের তথ্য মতে, সাগরে সবচেয়ে বেশি ডাকাতি হয় বাঁশখালি, মহেশখালি, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ায়। দস্যুদের এমন উৎপাত সত্ত্বেও জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। অনেক সময় জলদস্যুরা মাঝি ও জেলেদের জিম্মি ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিষয় প্রশাসনকে জানালে, তারা খুব একটা আমলে নেয় না। ফলে নিরাপত্তাহীন পরিবেশে তাদেরকে অসহায় অবস্থার মধ্যে জীবিকা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
সাগরে দুস্যদের উৎপাত নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে চলছে। অথচ সাগরে জেলেদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কোস্টগার্ড রয়েছে। ভূ-ভাগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। তারপরও জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নির্বিঘœ করা যাচ্ছে না। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি দায়িত্ব পালন করছে? দেশের উপকূলভাগ যদি অনিরাপদ হয়ে পড়ে, তবে অর্থনীতি ও পর্যটনে তার বহুমুখী ক্ষতির প্রভাব পড়ে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাগর থেকে মাছ আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে ২৫তম। মিয়ানমার, উগান্ডা ও ইন্দোনেশিয়াও তার পিছনে। অন্যদিকে, দেশের মৎস্য সম্পদের প্রায় ১৭ ভাগ সাগর থেকে জেলেরা জোগান দেয়। অর্থনীতিতে এর ভূমিকা কম নয়। সাগরের মৎস্য আহরণ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, আরও অধিক হারে সাগর থেকে মাছ আহরণের ক্ষেত্রে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তারা যদি নিরাপদে মাছ শিকার করতে না পারে, তাহলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ওপর পড়তে বাধ্য। ইতোমধ্যে জেলেদের যে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলা হচ্ছে, তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়া শুরু হয়েছে। অনেক জেলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মাছ আহরণ করতে পারছে না, কিংবা যাচ্ছে না। এতে মাছ আহরণের পরিমান কমে যাচ্ছে। সমুদ্রে জেলেদের নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি উপকূলের ভূ-ভাগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। কক্সবাজার, টেকনাফসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোও অর্থনীতির বড় উৎস হয়ে উঠেছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পর্যটকরা যদি নিশ্চিন্তে যাতায়াত ও ভ্রমণ করতে না পারে, তবে পর্যটন খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে পর্যটকদের তরফে অভিযোগ উঠেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
সাগরে মৎস্য আহরণে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। সাগরে দস্যু ও দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে, তা মেনে নেয়া যায় না। এক্ষেত্রে কোস্টগার্ডের অধিক তৎপর হওয়া বাঞ্চনীয়। বোট মালিক সমিতিকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেলেদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে। সাগরে জেলেদের জন্য যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা নির্মূলে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জলদস্যু নির্মূলে তাদের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে বোট মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সাগরে জেলেদের নির্ভয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ভূ-ভাগে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। উপকূলীয় জনপদ ও অর্থনীতিকে নিরাপদ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জানা গেল ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের একাদশ
বাংলাদেশে ন্যায্য রুপান্তরে অর্থায়নের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
গোপালগঞ্জে কারাগারে থাকা বাবার অবশেষে জামিন মঞ্জর
ওসমানী বিমান বন্দরে বিদেশী বিমান উঠা-নামার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী- প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে সিলেটে স্মারকলিপি
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে আগুনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৬
জানুয়ারি পর্যন্ত ছিটকে গেলেন এনগিডি
দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেলের সাথে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স আজমানের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুবিধা নিশ্চিতে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি কার্ড
যে কারণে হারপিকে মেতেছে নেটিজেনরা
আ.লীগের মতো পরিবারতন্ত্র করবে না বিএনপি: তারেক রহমান
প্যারাগুয়ে ম্যাচে কেমন হবে আর্জেন্টিনার একাদশ
অর্থাভাবে ব্যক্তিগত বিমান ভাড়া দিয়েছেন শন ডিডি, বিক্রি করবেন বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রেনী কক্ষে অসুস্থ ১০ শিক্ষার্থী
ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নরসিংদীতে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
পুলিশ সংস্কার ও একটি কৌশলপত্র
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কেন উপদেষ্টা করতে হবে?
শ্যামনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি এই অবহেলা অমার্জনীয়
নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ