ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলদস্যুদের নির্মূল করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ মে ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ পানিসীমার নিরাপত্তা দিন দিন অবনতি ঘটছে। দস্যুদের উৎপাত এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, জেলেরা নিরাপদে মৎস্য শিকার করতে পারছে না। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে দস্যুরা হামলা চালিয়ে জেলেদের মাছ ও জাল ছিনিয়ে নিচ্ছে। কখনো কখনো জেলেদের হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে দশ জেলের মৃতদেহসহ একটি ট্রলার ভেসে এসেছে। ভয়াবহ এ ঘটনার এখনও কোনো কূল-কিনারা হয়নি। তবে দস্যুরা যে এ কাজ করেছে, তা আন্দাজ করা হচ্ছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানিয়েছে, তারা সবসময় আতঙ্কে থাকে। সাগরে কে দস্যু, কে জেলে তা চিনতে না পারাসহ প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও উপকূলে সিন্ডিকেটের কারণে ভয়াবহ অনেক ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। দস্যুদের অস্ত্রের কাছে অসহায় অবস্থায় জেলেদের দিন কাটছে। তাদের তথ্য মতে, সাগরে সবচেয়ে বেশি ডাকাতি হয় বাঁশখালি, মহেশখালি, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ায়। দস্যুদের এমন উৎপাত সত্ত্বেও জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। অনেক সময় জলদস্যুরা মাঝি ও জেলেদের জিম্মি ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিষয় প্রশাসনকে জানালে, তারা খুব একটা আমলে নেয় না। ফলে নিরাপত্তাহীন পরিবেশে তাদেরকে অসহায় অবস্থার মধ্যে জীবিকা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

সাগরে দুস্যদের উৎপাত নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে চলছে। অথচ সাগরে জেলেদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কোস্টগার্ড রয়েছে। ভূ-ভাগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। তারপরও জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নির্বিঘœ করা যাচ্ছে না। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি দায়িত্ব পালন করছে? দেশের উপকূলভাগ যদি অনিরাপদ হয়ে পড়ে, তবে অর্থনীতি ও পর্যটনে তার বহুমুখী ক্ষতির প্রভাব পড়ে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাগর থেকে মাছ আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে ২৫তম। মিয়ানমার, উগান্ডা ও ইন্দোনেশিয়াও তার পিছনে। অন্যদিকে, দেশের মৎস্য সম্পদের প্রায় ১৭ ভাগ সাগর থেকে জেলেরা জোগান দেয়। অর্থনীতিতে এর ভূমিকা কম নয়। সাগরের মৎস্য আহরণ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, আরও অধিক হারে সাগর থেকে মাছ আহরণের ক্ষেত্রে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তারা যদি নিরাপদে মাছ শিকার করতে না পারে, তাহলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ওপর পড়তে বাধ্য। ইতোমধ্যে জেলেদের যে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলা হচ্ছে, তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়া শুরু হয়েছে। অনেক জেলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মাছ আহরণ করতে পারছে না, কিংবা যাচ্ছে না। এতে মাছ আহরণের পরিমান কমে যাচ্ছে। সমুদ্রে জেলেদের নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি উপকূলের ভূ-ভাগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। কক্সবাজার, টেকনাফসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোও অর্থনীতির বড় উৎস হয়ে উঠেছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পর্যটকরা যদি নিশ্চিন্তে যাতায়াত ও ভ্রমণ করতে না পারে, তবে পর্যটন খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে পর্যটকদের তরফে অভিযোগ উঠেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

সাগরে মৎস্য আহরণে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। সাগরে দস্যু ও দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে, তা মেনে নেয়া যায় না। এক্ষেত্রে কোস্টগার্ডের অধিক তৎপর হওয়া বাঞ্চনীয়। বোট মালিক সমিতিকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেলেদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে। সাগরে জেলেদের জন্য যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা নির্মূলে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জলদস্যু নির্মূলে তাদের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে বোট মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সাগরে জেলেদের নির্ভয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ভূ-ভাগে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। উপকূলীয় জনপদ ও অর্থনীতিকে নিরাপদ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিবাদ মেটাতে খোকন- কায়সার কামালকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক

বিবাদ মেটাতে খোকন- কায়সার কামালকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়

নাসিরনগরে ২ নেতাকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নোটিশ

নাসিরনগরে ২ নেতাকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নোটিশ

জৈনপুরী দরবার শরীফের উদ্যোগে ঈদ পুর্নমিলনী সভায় জৈনপুরী পীর সাহেব

জৈনপুরী দরবার শরীফের উদ্যোগে ঈদ পুর্নমিলনী সভায় জৈনপুরী পীর সাহেব

পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল নিউজিল্যান্ড

পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল নিউজিল্যান্ড

ফরিদপুরে দুই শহীদের বাবা মার সাথে হেফাজত নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

ফরিদপুরে দুই শহীদের বাবা মার সাথে হেফাজত নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

যুুক্তরাষ্ট্রে ‘সোনালী মোবাইল অ্যাপ’ চালু

যুুক্তরাষ্ট্রে ‘সোনালী মোবাইল অ্যাপ’ চালু

চুয়েট বন্ধ ঘোষণা : ক্ষোভে বাসে আগুন

চুয়েট বন্ধ ঘোষণা : ক্ষোভে বাসে আগুন

দেশকে পরিকল্পিতভাবে মরুকরণ করা হচ্ছে : মির্জা আব্বাস

দেশকে পরিকল্পিতভাবে মরুকরণ করা হচ্ছে : মির্জা আব্বাস

ভারতের নির্বাচন: ভোট দিলে বিনামূল্যে দেওয়া হবে মদ

ভারতের নির্বাচন: ভোট দিলে বিনামূল্যে দেওয়া হবে মদ

অতি তীব্র তাপপ্রবাহ থাকছেই, যেসব স্থানে ঝরতে পারে বৃষ্টি

অতি তীব্র তাপপ্রবাহ থাকছেই, যেসব স্থানে ঝরতে পারে বৃষ্টি

গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরায়েলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস

গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরায়েলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস

যে কোন মূল্যে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে : সিইসি

যে কোন মূল্যে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে : সিইসি

এনএসসি সচিব আমিনুল ইসলামের অপরাসণ দাবীতে মানববন্ধন

এনএসসি সচিব আমিনুল ইসলামের অপরাসণ দাবীতে মানববন্ধন

মালদ্বীপ গেল জাতীয় ক্যারম দল

মালদ্বীপ গেল জাতীয় ক্যারম দল

স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স শুরু

স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স শুরু

এশিয়া প্যাসিফিক বধির দাবা

এশিয়া প্যাসিফিক বধির দাবা

সিরাজ সভাপতি ইকবাল সেক্রেটারি নির্বাচিত

সিরাজ সভাপতি ইকবাল সেক্রেটারি নির্বাচিত

ফুলবাড়ীতে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ শেষে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করলেন মুসল্লিরা

ফুলবাড়ীতে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ শেষে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করলেন মুসল্লিরা

চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস; অসহ্য তীব্র তাপপ্রবাহে অস্থির জেলাবাসী

চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস; অসহ্য তীব্র তাপপ্রবাহে অস্থির জেলাবাসী