Header Ad

মাদক নির্মূলের বিকল্প নেই

Daily Inqilab মিকাইল হোসেন

২২ মে ২০২৩, ০৯:২৩ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেশে এখন প্রায় ৫ কোটি তরুণ রয়েছে। এই তরুণরাই আমাদের অহংকার। বাংলাদেশ বিশ^ মানচিত্রে যে জায়গা করে নিয়েছে, উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে তরুণদের সাহসী পদক্ষেপের কারণে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নেরও রোল মডেল হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামীতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আর স্মার্ট বাংলাদেশ মাদকমুক্ত স্মার্ট তরুণ ছাড়া সম্ভব না। মাদকাসক্ত তরুণরা কখনো স্মার্ট চিন্তা করতে পারবে না। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশ যতই উন্নত হচ্ছে ততই মাদকাসক্ত তরুণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে সংখ্যা বর্তমানে জ্যামিতিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিচ্ছে মাদকাসক্ত তরুণরা। সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ-যুব জনগোষ্ঠী ধরা হয়। আর মাদকাসক্ত ৮০% হচ্ছে তরুণ। একটি তথ্য মতে, মাদকসেবীর সংখ্যা এখন দেশে প্রায় ২ কোটি। এর মধ্যে দেড় কোটি নিয়মিত। ৫০ লাখের মতো অনিয়মিত। মাদক সেবনকারীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে। ৫ সংস্থার ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮২ মামলায় ১০ লাখ ১০ হাজার আসামী। বিগত এক যুগে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মাদক উদ্ধার হয়েছে। বছরের হিসেবে মাদকের পিছনে খরচ হয় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ ব্যবসায় জড়িত ২০০ গডফাদার ও বিক্রির নেটওয়ার্কে কাজ করে ১ লাখ ৬৫ হাজার জন। এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া ২৫ ধরনের উল্লেযোগ্য মাদকের মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে, ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, গাজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার, ইনজেকটিং ড্রাগ, এলএসডি ও আইস। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য অধ্যাপক ডা. অরুপরতন চৌধুরীর মতে, মাদক দ্রব্য উদ্ধারের চিত্র দেখলেই বিস্তারের একটা ধারণা পাওয়া যায়। যেগুলো উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো তো কেবল যা তাদের চোখে পড়ছে। সব তো আর চোখে পড়ছে না। যেটা ধরা পড়ে, সেটা খুবই সামান্য। বেশির ভাগই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে, ছাত্রদের মধ্যে মাদকের বিস্তার জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতিদিনই বাজারে চাহিদা বাড়ছে। মাদকে আসক্ত হওয়ার কারণে তরুণদের চিন্তার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তরুণরা প্রগতিশীল হতে পারছে না। তারা পরিবার ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে পড়ছে। তাদের চিন্তা, চেতনায় প্রগতিশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার ছাপ পড়ছে না। বিপুল সংখ্যক তরুণ মাদকাসক্ত হওয়ায় রাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাদকে আসক্ত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, সামাজিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, একঘেঁয়েমি, একাকিত্ব এবং পারিবারিক কাঠামো পরিবর্তনের পরিবেশে ব্যর্থতার সঙ্গে লড়াই করতে অক্ষমতা। বলা বাহুল্য, মাদকের সহজলভ্যতা মাদকাসক্তের হার বহুগুণে বৃদ্ধি করে। দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক উন্নয়ন এবং ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, সামাজিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদিও মাদকের সমস্যার জন্য দায়ী। পারিবারিক কলহ, ডিভোর্সের কারণে ভেঙে যাওয়া পরিবার, প্রেম ও চাকরিতে ব্যর্থতা থেকে হতাশার কারণেও মাদকাসক্তের হার বাড়ছে। বেশির ভাগ মাদক ব্যবহারকারী ‘পিয়ার প্রেশার’ বা বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়াকে প্রধান ‘পুল ফ্যাক্টর’ হিসেবে দোষারোপ করেছে। প্রথমবারের মতো মাদক গ্রহণের জন্য কৌতূহল অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, স্কুল- কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাদকে আসক্ত হওয়ার পিছনে পরিবারের অবহেলাকে দায়ী করা হয়। কারণ বাবা-মা অনেক সময় অতিরিক্ত আত্মবিশ^াসের কারণে সন্তানদের বিশ^াস করেন আর সন্তানেরা সেই বিশ^াসের সুযোগ নিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে যায়। অল্প অল্প করে তারা মাদকের দিকে হাত বাড়ায়। অভিভাবকদের সচেতন হতেই হবে। সন্তান কার সাথে মিশছে তা পিতা-মাতাকে খবর রাখতে হবে। কেউ কেউ একা একা মাদকাসক্ত হতে পারে না। তার আচার আচরণ খেয়াল করতে হবে। একজন মাদকাসক্ত সন্তান কখনোও স্বাভাবিক আচার-আচরণ করতে পারে না। তাদের ছোট ছোট অসঙ্গতিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাদের কোনো দাবি থাকলে তা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একবার নেশায় আসক্ত হলে তাকে আর ফেরানো সম্ভব নাও হতে পারে। কারো সন্তান মাদকাসক্ত হলে তাকে চরম মূল্য দিতে হবে। মাদকের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। সময়মত খোঁজ-খবর না রাখলে সারাজীবন সন্তানের জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে। তাই সন্তানকে সার্বক্ষণিক নজরদারীর বিকল্প নেই। এ ছাড়া সমাজে যখন নৈরাজ্য দেখা দেয় তখন মাদকাসক্তের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। মাদকের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতাও অন্যতম কারণ। মাদকাসক্তদের নিরাময়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তাই যে কোনো মূল্যে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। অন্যথায় মাদকের বিষাক্ত ছোবলে পুরো জাতি নীল হয়ে যাবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কোনো রাষ্ট্রীয় সেবা পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব না। জঙ্গীবাদের মতো মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। মাদক নির্মূলে গডফাদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। জঙ্গিবাদ দমন করতে পারলে মাদকও নির্মূল করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রকে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতেই হবে। মাদকের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। মাদকের মাধ্যমে অর্জিত অর্থসম্পদকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। মাদক কোনো একক সমস্যা নয়, তাই জনস¦ার্থে সবাইকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মাদক বন্ধ করতে হবে।

লেখক: উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার , ঢাকা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আমরা শোকাভিভূত
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল কেন জরুরি
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব
সড়ক সংস্কার চাই
সংশোধনী
আরও

আরও পড়ুন

বিদায়ী ম্যাচ গোলে রাঙালেন বেনজেমা,গোলরক্ষক বীরত্বে হার এড়াল রিয়াল

বিদায়ী ম্যাচ গোলে রাঙালেন বেনজেমা,গোলরক্ষক বীরত্বে হার এড়াল রিয়াল

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রিজিওনাল কনফারেন্স (পিএমআরসি) অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রিজিওনাল কনফারেন্স (পিএমআরসি) অনুষ্ঠিত

এডিস মশা কামড় দেয়ার সময় চিনবেনা কে মেয়র-কাউন্সিলর ইমাম-খতিব: ডিএনসিসি মেয়র

এডিস মশা কামড় দেয়ার সময় চিনবেনা কে মেয়র-কাউন্সিলর ইমাম-খতিব: ডিএনসিসি মেয়র

প্রাচীন ধর্ম সনাতকে শুধু শ্রদ্ধা নয় এ সম্পর্কে জানতে হবে, ইসকনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী

প্রাচীন ধর্ম সনাতকে শুধু শ্রদ্ধা নয় এ সম্পর্কে জানতে হবে, ইসকনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান

সাংহাই উৎসবে লড়বে যেসব ইরানি ছবি

সাংহাই উৎসবে লড়বে যেসব ইরানি ছবি

এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মেধাস্বত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : শাহরিয়ার

এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মেধাস্বত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : শাহরিয়ার

১০-১৫ দিনের মধ্যে বর্তমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চলছে : নসরুল

১০-১৫ দিনের মধ্যে বর্তমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চলছে : নসরুল

Header Ad
গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে আজমত উল্লা খান

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে আজমত উল্লা খান

আগামীকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেয়া হবে

আগামীকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেয়া হবে

বাজেট সম্পর্কে আলোচনায় ডিব্রিফিং সেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে : স্পিকার

বাজেট সম্পর্কে আলোচনায় ডিব্রিফিং সেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে : স্পিকার

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য : প্রধানমন্ত্রী

দুর্বিষহ জনজীবন

দুর্বিষহ জনজীবন

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

গত অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা : বিমান প্রতিমন্ত্রী

গত অর্থবছরে বিমান লাভ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা : বিমান প্রতিমন্ত্রী

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ইওয়ামা কিমিনোরি ও জিএম কাদেরের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ইওয়ামা কিমিনোরি ও জিএম কাদেরের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক

নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন করবেন : আইনমন্ত্রী

লোডশেডিং আরো দুই সপ্তাহ

লোডশেডিং আরো দুই সপ্তাহ

সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা ঠেকাবে

সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা ঠেকাবে