ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক নির্মূলের বিকল্প নেই

Daily Inqilab মিকাইল হোসেন

২২ মে ২০২৩, ০৯:২৩ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেশে এখন প্রায় ৫ কোটি তরুণ রয়েছে। এই তরুণরাই আমাদের অহংকার। বাংলাদেশ বিশ^ মানচিত্রে যে জায়গা করে নিয়েছে, উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে তরুণদের সাহসী পদক্ষেপের কারণে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নেরও রোল মডেল হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামীতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আর স্মার্ট বাংলাদেশ মাদকমুক্ত স্মার্ট তরুণ ছাড়া সম্ভব না। মাদকাসক্ত তরুণরা কখনো স্মার্ট চিন্তা করতে পারবে না। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশ যতই উন্নত হচ্ছে ততই মাদকাসক্ত তরুণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে সংখ্যা বর্তমানে জ্যামিতিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিচ্ছে মাদকাসক্ত তরুণরা। সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ-যুব জনগোষ্ঠী ধরা হয়। আর মাদকাসক্ত ৮০% হচ্ছে তরুণ। একটি তথ্য মতে, মাদকসেবীর সংখ্যা এখন দেশে প্রায় ২ কোটি। এর মধ্যে দেড় কোটি নিয়মিত। ৫০ লাখের মতো অনিয়মিত। মাদক সেবনকারীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে। ৫ সংস্থার ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮২ মামলায় ১০ লাখ ১০ হাজার আসামী। বিগত এক যুগে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মাদক উদ্ধার হয়েছে। বছরের হিসেবে মাদকের পিছনে খরচ হয় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ ব্যবসায় জড়িত ২০০ গডফাদার ও বিক্রির নেটওয়ার্কে কাজ করে ১ লাখ ৬৫ হাজার জন। এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া ২৫ ধরনের উল্লেযোগ্য মাদকের মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে, ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, গাজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার, ইনজেকটিং ড্রাগ, এলএসডি ও আইস। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য অধ্যাপক ডা. অরুপরতন চৌধুরীর মতে, মাদক দ্রব্য উদ্ধারের চিত্র দেখলেই বিস্তারের একটা ধারণা পাওয়া যায়। যেগুলো উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো তো কেবল যা তাদের চোখে পড়ছে। সব তো আর চোখে পড়ছে না। যেটা ধরা পড়ে, সেটা খুবই সামান্য। বেশির ভাগই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে, ছাত্রদের মধ্যে মাদকের বিস্তার জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতিদিনই বাজারে চাহিদা বাড়ছে। মাদকে আসক্ত হওয়ার কারণে তরুণদের চিন্তার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তরুণরা প্রগতিশীল হতে পারছে না। তারা পরিবার ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে পড়ছে। তাদের চিন্তা, চেতনায় প্রগতিশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার ছাপ পড়ছে না। বিপুল সংখ্যক তরুণ মাদকাসক্ত হওয়ায় রাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাদকে আসক্ত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, সামাজিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, একঘেঁয়েমি, একাকিত্ব এবং পারিবারিক কাঠামো পরিবর্তনের পরিবেশে ব্যর্থতার সঙ্গে লড়াই করতে অক্ষমতা। বলা বাহুল্য, মাদকের সহজলভ্যতা মাদকাসক্তের হার বহুগুণে বৃদ্ধি করে। দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক উন্নয়ন এবং ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, সামাজিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদিও মাদকের সমস্যার জন্য দায়ী। পারিবারিক কলহ, ডিভোর্সের কারণে ভেঙে যাওয়া পরিবার, প্রেম ও চাকরিতে ব্যর্থতা থেকে হতাশার কারণেও মাদকাসক্তের হার বাড়ছে। বেশির ভাগ মাদক ব্যবহারকারী ‘পিয়ার প্রেশার’ বা বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়াকে প্রধান ‘পুল ফ্যাক্টর’ হিসেবে দোষারোপ করেছে। প্রথমবারের মতো মাদক গ্রহণের জন্য কৌতূহল অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, স্কুল- কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাদকে আসক্ত হওয়ার পিছনে পরিবারের অবহেলাকে দায়ী করা হয়। কারণ বাবা-মা অনেক সময় অতিরিক্ত আত্মবিশ^াসের কারণে সন্তানদের বিশ^াস করেন আর সন্তানেরা সেই বিশ^াসের সুযোগ নিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে যায়। অল্প অল্প করে তারা মাদকের দিকে হাত বাড়ায়। অভিভাবকদের সচেতন হতেই হবে। সন্তান কার সাথে মিশছে তা পিতা-মাতাকে খবর রাখতে হবে। কেউ কেউ একা একা মাদকাসক্ত হতে পারে না। তার আচার আচরণ খেয়াল করতে হবে। একজন মাদকাসক্ত সন্তান কখনোও স্বাভাবিক আচার-আচরণ করতে পারে না। তাদের ছোট ছোট অসঙ্গতিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাদের কোনো দাবি থাকলে তা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একবার নেশায় আসক্ত হলে তাকে আর ফেরানো সম্ভব নাও হতে পারে। কারো সন্তান মাদকাসক্ত হলে তাকে চরম মূল্য দিতে হবে। মাদকের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। সময়মত খোঁজ-খবর না রাখলে সারাজীবন সন্তানের জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে। তাই সন্তানকে সার্বক্ষণিক নজরদারীর বিকল্প নেই। এ ছাড়া সমাজে যখন নৈরাজ্য দেখা দেয় তখন মাদকাসক্তের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। মাদকের বিচারে দীর্ঘসূত্রিতাও অন্যতম কারণ। মাদকাসক্তদের নিরাময়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তাই যে কোনো মূল্যে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। অন্যথায় মাদকের বিষাক্ত ছোবলে পুরো জাতি নীল হয়ে যাবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কোনো রাষ্ট্রীয় সেবা পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব না। জঙ্গীবাদের মতো মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। মাদক নির্মূলে গডফাদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। জঙ্গিবাদ দমন করতে পারলে মাদকও নির্মূল করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রকে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতেই হবে। মাদকের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। মাদকের মাধ্যমে অর্জিত অর্থসম্পদকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। মাদক কোনো একক সমস্যা নয়, তাই জনস¦ার্থে সবাইকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মাদক বন্ধ করতে হবে।

লেখক: উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার , ঢাকা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর  ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড

রোমাঞ্চকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড

কুয়াকাটার বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ল বিশাল আকৃতির কোরাল মাছ।

কুয়াকাটার বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ল বিশাল আকৃতির কোরাল মাছ।

বগুড়ায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট দ্ব‌ন্দ্বে হত্যাকাণ্ড, একজন আটক

বগুড়ায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট দ্ব‌ন্দ্বে হত্যাকাণ্ড, একজন আটক

ঢাবিতে অনুমতি মেলেনি সালাতুল ইসতিসকার

ঢাবিতে অনুমতি মেলেনি সালাতুল ইসতিসকার

ফের মার্কিন ও ইসরাইলি জাহাজে হামলা হুথিদের

ফের মার্কিন ও ইসরাইলি জাহাজে হামলা হুথিদের

চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার নির্দেশ গণপূর্তমন্ত্রীর

চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার নির্দেশ গণপূর্তমন্ত্রীর

দেশে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর সংখ্যা বাড়ছে

দেশে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর সংখ্যা বাড়ছে

হিটস্ট্রোকে স্কুলের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

হিটস্ট্রোকে স্কুলের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সংসদ সদস্য তমা-কে আ'লীগের বরণ-দিলেন নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি

সংসদ সদস্য তমা-কে আ'লীগের বরণ-দিলেন নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি

সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও সমানতালে উন্নয়নের গতিধারা এগিয়ে চলছে : পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী

সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও সমানতালে উন্নয়নের গতিধারা এগিয়ে চলছে : পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী

তিন দেশে আমিরের সফর থেকে কাতার কী পেতে চাইছে?

তিন দেশে আমিরের সফর থেকে কাতার কী পেতে চাইছে?

ফটো সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের অসহায়ত্বের ছবি তুলে- সিলেটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন

ফটো সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের অসহায়ত্বের ছবি তুলে- সিলেটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন

কুষ্টিয়ার খোকসায় দেওয়াল চাপাই শিশুর মৃত্যু

কুষ্টিয়ার খোকসায় দেওয়াল চাপাই শিশুর মৃত্যু

জিআই পণ্যের গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী

জিআই পণ্যের গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী

কত বছর বয়সী ছাগল সদকা করতে হয় প্রসঙ্গে।

কত বছর বয়সী ছাগল সদকা করতে হয় প্রসঙ্গে।

লালমনিরহাটে বৃষ্টি চেয়ে অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

লালমনিরহাটে বৃষ্টি চেয়ে অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

প্লাস্টিক থেকে নদীগুলোকে বাঁচানো দরকার

প্লাস্টিক থেকে নদীগুলোকে বাঁচানো দরকার

আমদানি কমিয়ে জোর দিতে হবে উৎপাদনে

আমদানি কমিয়ে জোর দিতে হবে উৎপাদনে

ভোলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি

ভোলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি

আধিপত্যবাদ রুখতে পণ্যবর্জন অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার

আধিপত্যবাদ রুখতে পণ্যবর্জন অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার