তাবলিগ একটিই থাকবে : সাদকে নিষিদ্ধ করতে হবে
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
গত ১৮ ডিসেম্বর টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে তাবলিগের দু’পক্ষের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন তাবলিগের আলমি শূরার সাথি (জুবায়েরপন্থী) এসএম আলম হোসেন। নিহতরা জুবায়েরপন্থী বলে চিহ্নিত। এ নিয়ে জুবায়েরপন্থীরা সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সাদপন্থীরা আবারও ইজতেমা মাঠ দখলের চেষ্টা করলে সাধারণ মুসল্লীদের নিয়ে প্রতিহত করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে জুবায়েরপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবউল্লাহ রায়হান বলেছেন, তাবলিগ জামাতের একটি তৃতীয় পক্ষ এবং রাজনৈতিক শক্তির সহযোগিতায় বিভাজন সৃষ্টি করে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমরা অহিংস ও শান্তিতে পথচলায় বিশ্বাস করি। এদিকে, হতাহতের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার এবং সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। এতে শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও সমর্থন দিয়েছে।
তাবলিগ জামাত বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। এটি একটি দাওয়াতি প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমায় লাখ লাখ মুসল্লী সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে এবাদত-বন্দেগী ও দাওয়াতি কাজ করে থাকেন। এটি ঐতিহাসিক, সার্বজনীন এবং আন্তর্জাতিক সমাবেশ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের অনেক দেশ থেকে মুসলমানরা মহান আল্লাহর রাহে ছুটে আসেন। এতে অংশগ্রহণ করে এক অতুলনীয় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুঃখের বিষয়, ২০১৬ সালে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বিভক্ত করে ফেলা হয়। ভারতের নাগরিক মাওলানা মুহাম্মদ সাদের আগমণ এবং তার অনুসারীদের দিয়ে এই বিভক্তির সূচনা করা হয়। সরকার সাদপন্থী ও জুবায়ের পন্থীদের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য দুই ভাগে বিভক্ত করে দেয়। সেই থেকে এই বিভক্তি চলে আসছে, যা ছিল মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্যে ফাটল। বিশ্লেষকদের মতে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে ইসলাম প্রচারের কাজটি ব্যহত হয়। এর পেছনে ভারতের ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে বাংলাদেশে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিরাপদ করাই ছিল লক্ষ্য। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার ভারতের স্বার্থে তাবলিগের বিভক্তি সম্পন্ন করে। ভারতীয় নাগরিক মাওলানা সাদের অনুসারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকমীরা মোটাদাগে অুসরণ করছে। গণঅভ্যুত্থানে শেক হাসিনার পতন ও পলায়নের পর মোদি ও শেখ হাসিনা মিলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে হিন্দু নির্যাতনের কার্ড খেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছে। এতে ব্যর্থ হয়ে এখন তাবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দিয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তাদের মতে, মাওলানা সাদের অনুসারি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। গত বুধবার সাদপন্থীরা যেভাবে জুবায়ের পন্থীদের উপর সহিংস হামলা চালায় এর সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা থাকার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এর মাধ্যমে ভারত ও আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে বাংলাদেশে যে ‘জঙ্গী বয়ান’ প্রচার করে আসছে, তা নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগও আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাবলিগ জামাতের মতো শান্তিপূর্ণ এবং বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ইসলামি সংগঠনে কোনো বিভক্তি এবং সংঘাত-সংঘর্ষ বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানরা চায় না। তারা তাবলিগের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœ রেখে তা ধরে রাখার পক্ষে। এজন্য, তাবলিগের দুই জামাত নয়, একটি জামাতই থাকতে হবে। তাবলিগের ঐক্য ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ সাদকে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দিতে হবে। সাদের গ্রুপকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে সাদপন্থীরা মানুষ খুন করে নিষিদ্ধের যৌক্তিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে। সাধারণ মুসল্লিরাও তা বুঝতে পেরেছে, ভারত ও আওয়ামী লীগ মিলে তাবলিগ জামাতে গ-গোল পাঁকিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চাচ্ছে। তাবলিগ জামাতে সংঘাত সৃষ্টি করে তারা তথাকথিত ‘জঙ্গী উত্থান’-এর বয়ান প্রচার করতে চাচ্ছে। এ সুযোগ তাদের দেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে সরকারকে কঠোর অবস্থান এবং সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তারেক রহমান প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না - ডা.মাজহার
হাসান আরিফের প্রথম জানাজায় ড. ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা
খুনিদের বিচার ও সাদ পন্থীদের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে
গোয়ালন্দে ৫ জানুয়ারির জনসভা সফল করতে বিএনপির কর্মী সভা অনুষ্ঠিত
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল হলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কমবে: রিজভী
সাংবাদিক নির্যাতনে ডিএমসিআরসির উদ্বেগ
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের উপর হামলার প্রতিবাদে ফুলপুরে বিক্ষোভ
বেক্সিমকোসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস বন্ধে কর্মহীন হাজারো মানুষ, রেমিট্যান্স হারাচ্ছে দেশ
ভ্রমণকারীদের সচেতন হতে হবে
হাসান আরিফের মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতির শোক
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে নানা কথা
বিশ্ব ইজতেমার ভবিষ্যৎ কী?
ঈশ্বরদীতে বিএনপির কর্মীকে কুপিয়ে জখম : ৩৫ ঘরবাড়িতে আগুন
ঝিকরগাছায় অভিনব কায়দায় ৩ লাখ টাকা ছিনতাই, আটক ১
আশাশুনিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দখল
লক্ষ্মীপুরে সাজাপ্রাপ্ত বৃদ্ধ কয়েদির মৃত্যু
শীতকাল আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত
পানির-ভারসাম্যতত্ত্ব, আসলনকল নির্ধারণী যন্ত্রের আবিষ্কারক মুসলিম মনীষী
কুকুরের কামড়ে আহত ১৪
তাকওয়া : মুমিন জীবনের অনুপম বৈশিষ্ট্য