ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্য নিরসনের বিকল্প নেই

Daily Inqilab আফতাব চৌধুরী

২৬ মে ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

কোনো দেশের অর্থনৈতিক জীবনের সুষ্পষ্ট পরিচয় পেতে হলে এর অর্থনৈতিক কাঠামো অধ্যয়ন আবশ্যক। প্রাকৃতিক স¤পদ, জনসংখ্যা, মূলধন গঠনের হার, কৃষি ও শিল্পের অবস্থা, জাতীয় আয় ও এর বণ্টন, মাথাপিছু আয় ও জনগণের জীবনযাত্রা প্রণালী প্রভৃতি থেকেই কোনো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অনুমান করা যায়। তাছাড়া শিক্ষা, আয় ও স্বাস্থ্যসেবা এ তিনটি সূচক মোটামুটিভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে এবং সামগ্রিকভাবে এ তিনটি একসঙ্গে মানবউন্নয়ন সূচকও নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক স¤পদ ও মানবশক্তি রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে ও জীবনযাত্রার মানের বিশেষ পরিবর্তন ঘটবে, এতে সন্দেহ নেই। এ কথা অনস্বীকার্য, পরিবার, সমাজ তথা দেশের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অর্থনীতি। এ অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে চলা মানে লক্ষ্যহীনভাবে চলা।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে পৃথিবীর সব দেশকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। (ক) উন্নত (খ) উন্নয়নশীল এবং (গ) স্বল্পোন্নত। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বাস করে। স্বল্পোন্নত দেশ বলতে সে সব দেশকে বুঝায় যাদের বর্তমান মাথাপিছু আয় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অতি নগণ্য এবং দারিদ্র্য প্রকট, অথচ যাদের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় নিম্ন এবং মাঝে মধ্যে এর হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়। উদারীকরণ, বেসরকারীকরণ ও বিশ্বায়নের মোড়কে বাজার অর্থনীতির ভিত্তি উন্নয়নের মূল কথা হলো, জনপিছু সর্বোচ্চ উৎপাদন, সর্বাধিক কর্মসংস্থান নয়। এ হচ্ছে বিশ্বায়নের ফসল। আমাদের মতো গরিব দেশ ও মানুষের কাছে বিশ্বায়ন চিরদিনই অধরা হয়ে থাকবে।

সে জন্যই প্রথমে যে কাজটি সবচেয়ে জরুরি তা হলো, দারিদ্র কাকে বলে তা নিরূপণ করা। যদি সেটা সঠিকভাবে নিরূপিত না হয় তবে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নিয়ে যেমন বিতর্ক থাকবে তেমনি বিতর্ক থাকবে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীদের সংজ্ঞা নিয়েও। জাতীয় আয়ের অনুপাতে নিম্নতম আয় কাদের এবং কেন তা নিরূপিত হবে না, হতে পারে না। জাতীয় আয়ের কত শতাংশ আয়ের ভাগীদার ওই দারিদ্র্য ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীরা, তারও সঠিক কোনো তথ্য আজ পর্যন্ত তুলে ধরা হয়নি কোথাও। ন্যূনতম মজুরিকে যদি দারিদ্র্যসীমায় ধরা হয় তাহলে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা কত দাঁড়াবে এ বিষয়েও নির্দিষ্ট তথ্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এমতাবস্থায় বলিষ্ঠ অর্থনীতি আশা করা যায় না।

বাংলাদেশে দারিদ্র্য অতি প্রকট। এটি অর্থ ব্যবস্থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। চরম দারিদ্র্য প্রতিটি স্বল্পোন্নত দেশে চক্রের মতো আবর্তনশীল। এ সব দেশে লোকের আয় কম। আয় কম হলে সঞ্চয়ও কম হয়, মূলধন গঠন কম হয় এবং মূলধন গঠন কম হলে বিনিয়োগ সম্ভব হয় না। তাই আয় বৃদ্ধির সুযোগ ঘটে না। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতাই নিদারুণ দারিদ্র্যের কারণ, এ নিদারুণ দারিদ্র্য প্রতিটি স্বল্পোন্নত দেশের একটি প্রধান সমস্যা। এ প্রসঙ্গে চৎড়ভ. জবমহবৎ ঘঁৎশংবব মন্তব্য করেছেন, ‘কোনো দেশ দরিদ্র বলেই দরিদ্র হয় অর্থাৎ জনসংখ্যার বিপুল অংশ দরিদ্র বলেই কোনো দেশ দরিদ্র হয়। তাই দেশের অগণিত মানুষকে অতিশয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হয়। এখন প্রশ্ন জাগে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে দারিদ্র্যের প্রবণতা বৃদ্ধির মূল কারণ কী? বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে , স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে দারিদ্র্যের প্রবণতা বৃদ্ধির অনেক কারণের মধ্যে অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা, অধিকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ এবং দারিদ্র্য পছন্দ করা অন্যতম। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে মাটির মালিক হওয়াকে বিশেষ মর্যাদার বিষয় বলে গণ্য করা হয়। ফলে স্বল্প ও মুনাফাহীন হলেও প্রত্যেকেই নিজের নামে এক খন্ড জমি পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। এ মোহে প্রকৃতপক্ষে যার কৃষিজমির বিশেষ প্রয়োজন নেই, সে ব্যক্তিও পৈতৃক স¤পত্তির অতি ক্ষুদ্র জমিখন্ড ভাগ করে নিতে দ্বিধাবোধ করে না। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায় ৪০ শতাংশ লোক দিনে এক বেলাও আহার সংগ্রহ করতে পারে না। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, ৩০ শতাংশেরও কিছু বেশি লোক দু বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। এ কারণে দেশের উৎপাদিত খাদ্যশস্য যে সব সময়ই উদ্বৃত্ত থাকবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে বলে মনে হয় না। অভ্যন্তরীণ স্তরে এই যে অসম বণ্টন তার প্রতিকারের কোনো সদিচ্ছা যে রাষ্ট্রনেতাদের আছে, এমন কোনো আভাস লক্ষ করা যাচ্ছে না। ফলে একদিকে উৎপাদিত উদ্ধৃত্ত পণ্য গুদামে থাকবে এবং পচে নষ্ট হবে, অন্যদিকে দেশের মানুষ না খেয়ে মরবে। অল্প উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা অধিকহারে বৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণ গরিব পিতা-মাতা ধরে নেন যে, সন্তানের সংখ্যা অধিক হলে ভবিষ্যতে পরিবারের আয় বৃদ্ধি পাবে। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা অধিক সন্তানের জš§ দেয়। তাছাড়া চরম দারিদ্র্যের দরুন হতাশাগ্রস্ত মানুষ কাম-ক্ষুধা চরিতার্থ করে সাময়িকভাবে পেটের ক্ষুধা থেকে মুক্ত থাকতে চায়। অর্থনৈতিক বণ্টন ব্যবস্থার বৈষম্য সামাজিকস্তরে এক বিরাট পার্থক্যের সৃষ্টি করে। এটি খুব ধীরগতিতে কাজ করে বলে সহজে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সরকার সব দেশেই আপন আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নিলেও সেগুলো রূপায়ণের দায়িত্ব যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর ন্যস্ত থাকে তাদের নিষ্ঠা, সততা ও কর্ম প্রচেষ্টার অভাব প্রকল্পগুলো থেকে যে সুফল লাভের আশা করা হয় সেটি লাভ করা যায় না। সামাজিক শ্রেণী বিভেদ, বর্ণ ও সম্প্রদায়গত বিভেদ, কর্মে শ্রেণী বিভেদ, উচ্চ-নিচ ভেদাভেদ এবং নিরক্ষরতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি করে। আমরা দেখেছি নিরক্ষরতা, জাত-পাতের বৈষম্য, সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের দুর্নীতি, সরকার গৃহীত প্রকল্প রূপায়ণ ক্ষেত্রে পার্থক্য সৃষ্টি করে চলেছে। এর ফলে দারিদ্র্য মোচনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবে কোনো স্থির পরিবর্তন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাছাড়া এদেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের নিরক্ষরতা তাদের বঞ্চিত থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশে জনপ্রতি আয় বা জিডিপি বৃদ্ধি হলেই সে দেশে দারিদ্র্য কমে যাবে এমনটি মনে করা যুক্তিসঙ্গত নয়। ইতিপূর্বে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস উল্লেখ করেছিলেন, কোনো দেশে দুর্ভিক্ষের মূলে খাদ্যদ্রব্যের অভাব নয়, বণ্টন বৈষম্য ও সরকারের উদাসীনতাও খাদ্যদ্রব্যের প্রাচুর্যের মধ্যে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে পারে। দ্রুত উন্নয়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার ফলে আমাদের দেশের মতো স্বল্পোন্নত/ উন্নয়নশীল দেশের কৃষি উৎপাদনের পরিকাঠামোই ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে যে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ছিল সেটিও সংকুচিত হয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটিয়ে চলেছে। এ অবস্থায় অনিবার্যভাবেই চলেছে সে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, যাদের ক্রয়-ক্ষমতা বাজারদরের নিচে। ফলে পর্যাপ্ত শস্য উৎপাদন ঘটলেও সেটি লভ্য নয় বহু মানুষের কাছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা এখন হাত ধরাধরি করে গ্রাস করতে চলেছে মানবকূলকে। কোটি কোটি মানুষ এমন স্তরে রয়েছে যাদের ক্রয়-ক্ষমতা বলতে কিছুই নেই এবং তার কারণ দারিদ্রের বিস্তৃতি লাভ। বিশ্বের অর্থনৈতিক ধারা এমনভাবে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিত্তশালীকে আরও বিত্তবান হতে সাহায্য করছে কিন্তু দারিদ্র্যে নিষ্পেষিত জনগণের সে অর্থনীতি সামান্যতম সহায়তা করছে না। খাদ্য ও পণ্য সামগ্রীর মূল্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থপূরণে নিরূপিত হচ্ছে। প্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে সব নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার সিংহভাগই বিশেষ নির্দিষ্ট কারিগরি দক্ষতার দাবি করে, যা অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষিত ব্যক্তির আয়ত্বের বাইরে। বাংলাদেশে ব্যাংক জাতীয়করণ করা হয়েছিল দেশ গঠনের দায়িত্বে অর্থাৎ গরীব ও দরিদ্র লোকদের কৃষি ও ক্ষুদ্রশিল্প ক্ষেত্রে ঋণ দান করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে। কিন্তু বর্তমান ব্যাংক উদারীকরণ প্রক্রিয়ায় সামাজিক ও আর্থিকভাবে দায়িত্ব পালনে কতটুকু সক্ষম হয়েছে, সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন কারণে দারিদ্রের পরিমাণ ও গভীরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে দারিদ্র্য দূরিকরণে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আয়ের সুষম বণ্টন হতে পারে। কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে মাথাপিছু আয় হ্রাস পাবে ফলে আয়গত বৈষম্য দেখা দেবে। সে জন্য দরিদ্র জনসাধারণের জš§ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাজার অর্থনীতিতে দারিদ্র্য সীমারেখা মুছে যাবে না। তাই ভূমি সংস্কার এবং গ্রামোন্নয়নের মাধ্যমে সহনশীল উন্নয়নই হল দারিদ্র্য মোচনের চাবিকাঠি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন এবং এ অধিকাংশ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। ভূমি আইনের সংস্কার সাধন করে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে ভূমি বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে আয়ের অসমতাও দূর হবে। দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা যে সকল অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য ভোগ করে সে সকল দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ সকল দ্রব্যের সাধারণ বণ্টন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। অনুন্নত অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিদ্যুৎ, পানীয়জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পশ্চাৎপদ অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষের আয়ের বৃদ্ধি ঘটবে ও আয়গত অসমতা অনেকাংশে হ্রাস পেতে থাকবে। গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা ও শিল্প ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীভূত করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে যদি আবশ্যকীয় দ্রব্যাদি ও অন্যান্য ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে দারিদ্র্য দূরীকরণের পথে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া যাবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অধিকাংশ লোক দারিদ্র্য সীমারেখার নিচে বাস করে তাই গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন দ্রুতগামী করে দারিদ্র্য নির্মূলীকরণ সম্ভব। তাছাড়া স্ব- নিযুক্তি প্রকল্প কিংবা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বাড়াবার ব্যবস্থা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য সংকোচন সম্ভব। শহর ও গ্রামভিত্তিক নিযুক্তির জন্য সরকারেরও নীতি নিদের্শিকা তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সাবলীল করতে হবে। শিল্প-কলকারখানা ও মূলধন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক নিয়োগও বৃদ্ধি করতে হবে। ফলে আয়ের বৈষম্য অনেকটা হ্রাস পাবে। উৎপাদন ব্যবস্থায় সরকারের একটি নির্দিষ্ট নীতি থাকা প্রয়োজন। দ্রব্যসামগ্রীর উপর সরকারি কর বা রেহাই মূল্য পরিকল্পনা ও নীতির মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে যাতে দেশের অধিকাংশ মানুষ এর সুবিধা লাভ করতে পারেন। জনসাধারণের মঙ্গলার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারকে ক্ষতিও স্বীকার করতে হবে। তাই দারিদ্র্যের স্বার্থে ভর্তুকি থাকা বাঞ্ছনীয় আর তখনই আয়ের সুষম বন্টন সম্ভব হবে। আয়ের বন্টনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মজুরিনীতি থাকতে হবে। শিল্প ও কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম মজুরি-নীতি ও জাতীয় মজুরি নীতির দ্বারা ঠিক করতে হবে, এতে আয়ের সুষম বণ্টন হবে এবং আয়গত বৈষম্য অনেকটা হ্রাস পাবে। সরকারি নীতি নির্ধারণ করে একচেটিয়া ব্যবসার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সঠিক ও কঠোর করতে হবে। দেশের আয় কতিপয় মানুষের হাতে না গিয়ে বরং সব শ্রেণীর মানুষের হাতে যাতে যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে আয়গত অসমতা দূর হবে। বিগত কোনও কোন সরকারের আমলে দরিদ্রের জন্য সরকারি কর্মসূচি নিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হয়েছিল, এখনও হচ্ছে কিন্তু তখন বাজার উন্নত ছিল না, এখন বাজার অনেক উন্নত। সুতরাং এখন গরিব মানুষকে বাজারের জন্য তৈরি করে দেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি।
মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ বিরাট সংখ্যক গরিব লোকের বাসভূমি ও পৃথিবীর ১৭৪টি গরিব দেশের মধ্যে এর স্থান ১৫৮ নম্বরে। এটি খুবই বেদনাদায়ক বার্তা। কাজেই বাংলাদেশের রাষ্ট্র নেতাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হওয়া উচিত কৃষি ও কৃষিজীবী সম্বন্ধে যথাযথ পরিসংখ্যান নির্ণয়, দারিদ্র্য সীমারেখার যথাযথ সংজ্ঞা নির্ধারণ, দারিদ্র্যসীমায় বসবাসকারীর সংখ্যা কত তা নিরূপণের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি দেওয়া। যদি তা না হয় তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং জাতীয়স্তরে বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য জনপ্রতি আয় বা জিডিপির হিসাবের চেয়েও এখন প্রধান প্রয়োজন সে সব অঞ্চল ও শ্রেণীগুলোকে চিহ্নিত করা যেগুলো দারিদ্র্য কবলিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এরপর এদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না সেদিকে কঠোর নজরদারি করা যাতে প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ যথার্থ ও স¤পূর্ণরূপে হিতাধিকারীদের উন্নয়ন সুনিশ্চিতকরণে ব্যয় হয়। প্রকল্প রূপায়ণের পরবর্তী স্তরে এটির ফলাফলে সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। রয়েছে পরবর্তী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেহেন্দিগঞ্জে চোরের ছুরিকাঘাতে আহত গৃহবধূর মৃত্যু

মেহেন্দিগঞ্জে চোরের ছুরিকাঘাতে আহত গৃহবধূর মৃত্যু

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

মোদী ও রাহুলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, ইসির নোটিস

মোদী ও রাহুলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, ইসির নোটিস

জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান

জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-ফিলিপিন্সের যৌথ ঘোষণা বাস্তবতা উপেক্ষা করেছে: চীন

যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-ফিলিপিন্সের যৌথ ঘোষণা বাস্তবতা উপেক্ষা করেছে: চীন

বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের তাপপ্রবাহ ও দুর্ভোগের খবর

বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের তাপপ্রবাহ ও দুর্ভোগের খবর

থাইল্যান্ডের রাজা-রানির রাজকীয় অতিথি শেখ হাসিনা

থাইল্যান্ডের রাজা-রানির রাজকীয় অতিথি শেখ হাসিনা

স্ত্রীর পর স্বামীরও আত্মহত্যা, চিরকুটে জানালেন শেষ ইচ্ছা

স্ত্রীর পর স্বামীরও আত্মহত্যা, চিরকুটে জানালেন শেষ ইচ্ছা

ভারতের লোকসভা নির্বাচন : রাহুল, শশী, হেমা মালিনীর ভাগ্য পরীক্ষা আজ

ভারতের লোকসভা নির্বাচন : রাহুল, শশী, হেমা মালিনীর ভাগ্য পরীক্ষা আজ

ভারতে লোকসভার নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু

ভারতে লোকসভার নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু

তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫, আহত দুই শতাধিক

তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫, আহত দুই শতাধিক

বান্ধবীর বার্গার খেয়ে ফেলায় বিচারক-পুত্রকে গুলি করে হত্যা পুলিশ-পুত্রের

বান্ধবীর বার্গার খেয়ে ফেলায় বিচারক-পুত্রকে গুলি করে হত্যা পুলিশ-পুত্রের

ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জনের মৃত্যু

ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জনের মৃত্যু

চাঁদপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গ্রেপ্তার

চাঁদপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গ্রেপ্তার

রাশিয়া ও চীনের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে শঙ্কিত ইইউ

রাশিয়া ও চীনের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে শঙ্কিত ইইউ

চীনকে ওভার ক্যাপাসিটির অভিযোগ করা ঠিক না: ব্লুমবার্গ

চীনকে ওভার ক্যাপাসিটির অভিযোগ করা ঠিক না: ব্লুমবার্গ

প্রবল বন্যার সুযোগে জেল ভেঙে পালালেন শতাধিক কয়েদি

প্রবল বন্যার সুযোগে জেল ভেঙে পালালেন শতাধিক কয়েদি

জিম্বাবুয়ে সিরিজে ও ডিপিএলে খেলবেন সাকিব

জিম্বাবুয়ে সিরিজে ও ডিপিএলে খেলবেন সাকিব

এশিয়া ও প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন

এশিয়া ও প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন

শূন্য রানে ৭ উইকেটের বিশ্ব রেকর্ড

শূন্য রানে ৭ উইকেটের বিশ্ব রেকর্ড