পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে
২৭ মে ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
ট্যুরিস্ট পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১৬৭৫টি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জেলার ১০৪টি স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বাকি ১৫৭১টিতে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এসব পর্যটন স্পট অনিরাপদ থেকে যাচ্ছে। এ চিত্র পর্যটকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। দেশে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। ভ্রমণ পিয়াসীরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে। নিজেরাই এসব পর্যটন কেন্দ্র আবিষ্কার করছে। সেখানে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ধীরে ধীরে সেসব স্থান পর্যটন স্পটে পরিণত হচ্ছে। সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, তারা যেসব স্পটে যাচ্ছে, সেখানে যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। তার চেয়েও বড় কথা, নিরাপত্তার সংকট রয়েছে। গত বছরের ১৯ জুন মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ঝরনা দেখতে গিয়ে তিন তরুণ নিখোঁজ হয়। পরে ঝরনার নিচে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া পরিচিত ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও নিরাপত্তাসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। সেসব কেন্দ্রে পর্যটকরা কখনো কখনো স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্থার শিকার হয়। এমনকি মহিলা পর্যটকরা শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছে। ২০২১ সালের ১৫ আগাস্ট হবিগঞ্জের লাখাই হাওরে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের ধর্ষণের শিকার হয় স্ত্রী। একই বছরের মার্চে বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি ইকোপার্কে বেড়াতে গিয়ে এক তরুণী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে বিদেশি পর্যটকরাও হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গত ২৪ এপ্রিল রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ দেখতে গিয়ে ছিনতাইকারির কবলে পড়েন দুই জাপানি নাগরিক। পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে ধর্ষণ, শ্লীতাহানি, ছিনতাই, হয়রানি বা উত্ত্যক্ত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
বিশ্বের অনেক দেশ এখন পর্যটন অর্থনীতির ওপর জোর দিচ্ছে। খাতটি দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ পর্যটন। দেশটির জিডিপিতে ২৮ শতাংশ যোগান এবং বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৬০ ভাগ উপার্জিত হয় এ খাত থেকে। ছোট্ট দেশ ভূটান এখন বিশ্বের মধ্যে পর্যটনের ‘হটস্পটে’ পরিণত হয়েছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত এখন পর্যটন। পার্শ্ববর্তী ভারতেও পর্যটন অন্যতম অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হচ্ছে। শুধু এই উপমহাদেশের দেশগুলো নয়, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও পর্যটনকে নতুন অর্থনৈতিক খাত হিসেবে গড়ে তুলেছে। পর্যটকদের মেহমান হিসেবে গণ্য করে তাদের নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ বহুদূর পিছিয়ে রয়েছে। খাতটিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম উৎস হিসেবে খুব একটা বিবেচনা করা হচ্ছে না। পর্যটনকেন্দ্র বৃদ্ধি এবং সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকলেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না বলেই পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। বড় ধরনের ঘটনা ঘটলেই কেবল তা প্রকাশ পায়। এর বাইরে প্রায় প্রতিনিয়তই পর্যটকদের নানা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। খাতটিতে শৃঙ্খলার বড়ই অভাব রয়েছে। শুধু পর্যটনকেন্দ্রেই মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না, পরিস্থিতি এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক-মহাসড়ক, গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে শহরেও মানুষ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজই হচ্ছে, জননিরাপত্তায় সবসময় সজাগ থাকা। তারা জনগণের অর্থে নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে বাড়ি-গাড়ির মালিক হচ্ছে। তাদের দায়িত্বই হচ্ছে, সার্বক্ষণিক জনগণের সেবা দেয়া। দুঃখের বিষয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে রাজনৈতিক কাজে বেশি মনোযোগী। কিভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার, হামলা-মামলা করা যায়, এ নিয়ে বেশি ব্যস্ত। এ কাজ করতে গিয়ে জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান নিজেই স্বীকার করেছেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে জনবলের অভাব রয়েছে। এটা কেন হবে? পুলিশের কাজ তো দেশের প্রতিটি অঞ্চলে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সবার আগে এদিকেই নজর দিতে হবে। বিরোধীদলের কর্মসূচি ঠেকানো বা হামলার সময় তো পুলিশের অভাব হয় না। শত শত পুলিশ নামিয়ে দেয়া হয়। সাধারণ মানুষ যে নির্বিঘেœ ও নিশ্চিন্তে চলাফেরা ও বসবাস করবে, সেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেন জনবলের অভাব হবে?
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পর্যটনকে অর্থনৈতিক খাতে পরিণত করা এখন সময়ের দাবী। এ খাতের বিপুল সম্ভাবনা নতুন করে বলার কিছু নেই। দুঃখের বিষয়, খাতটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। দেশে দেড় হাজারের বেশি যে পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলো ঠিক মতো নার্সিং করলে, যাতায়াত, নিরাপত্তা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে ব্যাপক আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনীতিতে খাতটি আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে। বিদ্যমান পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। বেড়াতে গিয়ে পর্যটকরা হেনস্তা বা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমনকি, বিদেশিরা যদি এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তাহলে তা দেশের জন্য বদনামেরও বটে। কাজেই, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভবিষ্যতে পুতিনের সাথে সরাসরি কথা বলতে চান শলৎজ
বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর ২২০০ সহিংসতা নিয়ে ভারতের তথ্য বিভ্রান্তিকর : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন হাফেজ কামরুল
ধামরাইয়ে ২টি ড্রেজার মেশিন জব্দ
রাবিতে অপরাধে জড়িত ৬ শিক্ষার্থী স্থায়ী বহিষ্কার, শাস্তি পেল মোট ৩৩ জন
রাণীশংকৈলে ফিল্মি স্টাইলে দোকান চুরি, ১৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও চোর ধরতে ব্যর্থ পুলিশ
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন